মণিপুরে ভয়াবহ জাতিগত সহিংসতা
গত ৩ মে ’২৩ থেকে মণিপুর রাজ্যে মেইতেই ও নাগা-কুকিদের মধ্যে জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়; এখনও চলছে। এই সহিংসতায় আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থী হয়েছেন প্রায় ৫০,০০০ মানুষ। ১৪ এপ্রিল,’২৩ মণিপুর হাইকোর্ট একটি নির্দেশনায় মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেই জাতিগোষ্ঠীকে এসটিভুক্ত (সিডিউল ট্রাইবালস বা তপসিলি উপজাতি) করা যায় কিনা সে সম্পর্কে জানাতে মণিপুরের রাজ্য সরকারকে আদেশ দেয়। এসটিভুক্ত করলে মেইতেই সম্প্রদায় নাগা-কুকি অধ্যুষিত অ লে জায়গা-জমি কিনতে পারবেন। যা বর্তমানে ভারতের সংবিধানে নিষিদ্ধ।
আদালতের এই আদেশের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ-মিছিল বের করে অল ইন্ডিয়ান ট্রাইবাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব মণিপুর নামের সংগঠন। এই মিছিলে হামলার ঘটনার পরম্পরায় পাল্টাপাল্টি হামলা, বাড়িঘরে, মন্দির- গীর্জায় এমনকি মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দেয়াসহ ব্যাপক জাতিগত সহিংসতা হচ্ছে। পুলিশ কতৃক গণধর্ষণের সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট মোদী সরকার নাগা-কুকিদের এই বিদ্রোহ দমনে কুখ্যাত অঋঝচঅ আইন (দেখামাত্র গুলির নির্দেশ) জারি করেছে। এর আগে থেকেই মাদকবিরোধী অভিযানের নামে মণিপুরের নাগা-কুকিদের উপর দমন-নির্যাতন চালিয়ে আসছিল হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট মোদী সরকার।
মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যা ২৮ লক্ষ ৫৫ হাজার। মণিপুর কখনো ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ মহারাজা বোধচন্দ্রের কাছে মণিপুরের ক্ষমতা হস্তান্তর করে। তারপরে মণিপুরের পৃথক সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বৃটিশের দালাল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারতের নতুন শাসক গোষ্ঠী ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর মণিপুরকে জোরপূর্বক ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের একটি রাজ্য করে নেয়। কিন্তু মণিপুরের জনগণ তা কখনোই মেনে নেননি।
মণিপুরে মেইতেই ও নাগা-কুকিদের এই বিরোধ নতুন নয়। কিন্তু বর্তমানের সহিংসতার নাটের গুরু হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট মোদী সরকার তথা মণিপুরের শাসক বিজেপি সরকার। এবং ভারতের কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলো। এসটিভুক্ত হলে সংখ্যাগুরু মেইতেই জাতিগোষ্ঠী সংখ্যালঘু নাগা-কুকিদের জমি কিনতে পারবে, যা এখন ভারতের সংবিধানের ৩৭১(গ) ধারা অনুসারে নিষিদ্ধ। ভারতের সংবিধানের এই আইন জানা সত্ত্বেও আদালত এমন আদেশ দিয়েছে। এই আদেশের কারণেই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের শাসকশ্রেণি তাদের এই সহিংসতা ও বিভাজনের রাজনীতি শুধু মণিপুর নয়, গুজরাট-কাশ্মীর-মিজোরাম-নাগাল্যান্ড-আসাম, সর্বশেষ হরিয়ানাতেও ছড়িয়েছে।
ফ্যাসিস্ট মোদী সরকার পরিকল্পিতভাবে এই সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছে। জাতিসমূহের কারাগার ভারতে মেইতিরাও নিপীড়িত জাতি। মণিপুরের চলমান স্বাধীনতা সংগ্রামে মেইতি, কুকি-নাগাদের সম্মিলিত সংগ্রামের ঐতিহ্য রয়েছে। তাদের মাঝে বিভক্তি ও বিভাজন সৃষ্টিই হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য। আরো লক্ষ্য হলো– সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে তাদের ভোটব্যাংক রক্ষা করা। মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেইরা হলো হিন্দু। তারা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫১%। সংখ্যালঘু নাগা-কুকিরা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের। নাগা-কুকি অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন খনিজের মজুদ পাওয়া গেছে। এগুলো কর্পোরেট কোম্পানির হাতে তুলে দিতেই নাগা-কুকিদের উপর দমন-নির্যাতন নামিয়ে এনেছে রাষ্ট্র। কারণ নাগা- কুকিরা তার বিরোধিতা করছে।
সুতরাং এই জাতিগত সংঘাত বাস্তবে মোদী সরকার সৃষ্ট। এই সংঘাতে নিপীড়িত-শোষিত শ্রমিক-কৃষক সাধারণ মেইতেই ও নাগা-কুকি জনগণের জান-মালের ক্ষতি ছাড়া কোনো স্বার্থ নেই। তারা মূলত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। উভয় নিপীড়িত জাতি-গোষ্ঠীর সাধারণ শত্রু হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের দালাল ভারতের আমলা-মুৎসুদ্দী শ্রেণি। যা বর্তমানে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট মোদী সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।
মণিপুরের নিপীড়িত বিভিন্ন জাতি ও জনগণের করণীয় হলো– এই শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক- মধ্যবিত্ত এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় বুর্জোয়াদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তোলা। ভারতীয় শাসকশ্রেণিকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে মণিপুরের রাজ্যব্যাপী গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করা। মণিপুরের জল-জমি-জঙ্গলের অধিকার কেবলমাত্র মণিপুরের জনগণের। সংবিধানের ৩৭১(গ) ধারা মতে নাগা-কুকিরা যেসব অধিকার পেয়ে আসছেন তা অব্যাহত রাখার লড়াই জারি রাখতে হবে। সকল ধরনের জাতীয়তাবাদী মোহ থেকে মণিপুরের জনগণকে মুক্ত রাখার সচেতন প্রয়াস চালাতে হবে।
মণিপুরের সংখ্যালঘু আদিবাসী নাগা-কুকিদের লড়াই মূলত ভারতের শ্রমিক-কৃষকসহ সকল নিপীড়িত জাতি ও জনগোষ্ঠীর লড়াই, যা নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের অংশ। যেজন্য ভারতের সত্যিকার কমিউনিস্টরা তথা মাওবাদীরা ৫০ বছর যাবৎ গণযুদ্ধ পরিচালনা করে আসছেন। অন্ধ্র-বিহার-ঝাড়খন্ড-দন্ডকারণ্য-পশ্চিম ঘাটসহ গড়ে তুলেছেন অনেক ঘাঁটি এলাকা। যার লক্ষ্য সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম। মণিপুরের নিপীড়িত জাতি ও জনগণকে নিজেদের মুক্তির জন্য সেখানে মাওবাদী পার্টি ও গণযুদ্ধ গড়ে তুলতে হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মণিপুরে ভয়াবহ জাতিগত সহিংসতা
গত ৩ মে ’২৩ থেকে মণিপুর রাজ্যে মেইতেই ও নাগা-কুকিদের মধ্যে জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়; এখনও চলছে। এই সহিংসতায় আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ঘরবাড়ি ছেড়ে শরণার্থী হয়েছেন প্রায় ৫০,০০০ মানুষ। ১৪ এপ্রিল,’২৩ মণিপুর হাইকোর্ট একটি নির্দেশনায় মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেই জাতিগোষ্ঠীকে এসটিভুক্ত (সিডিউল ট্রাইবালস বা তপসিলি উপজাতি) করা যায় কিনা সে সম্পর্কে জানাতে মণিপুরের রাজ্য সরকারকে আদেশ দেয়। এসটিভুক্ত করলে মেইতেই সম্প্রদায় নাগা-কুকি অধ্যুষিত অ লে জায়গা-জমি কিনতে পারবেন। যা বর্তমানে ভারতের সংবিধানে নিষিদ্ধ।
আদালতের এই আদেশের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ-মিছিল বের করে অল ইন্ডিয়ান ট্রাইবাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব মণিপুর নামের সংগঠন। এই মিছিলে হামলার ঘটনার পরম্পরায় পাল্টাপাল্টি হামলা, বাড়িঘরে, মন্দির- গীর্জায় এমনকি মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দেয়াসহ ব্যাপক জাতিগত সহিংসতা হচ্ছে। পুলিশ কতৃক গণধর্ষণের সহায়তা করার অভিযোগও রয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট মোদী সরকার নাগা-কুকিদের এই বিদ্রোহ দমনে কুখ্যাত অঋঝচঅ আইন (দেখামাত্র গুলির নির্দেশ) জারি করেছে। এর আগে থেকেই মাদকবিরোধী অভিযানের নামে মণিপুরের নাগা-কুকিদের উপর দমন-নির্যাতন চালিয়ে আসছিল হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট মোদী সরকার।
মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যা ২৮ লক্ষ ৫৫ হাজার। মণিপুর কখনো ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ মহারাজা বোধচন্দ্রের কাছে মণিপুরের ক্ষমতা হস্তান্তর করে। তারপরে মণিপুরের পৃথক সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বৃটিশের দালাল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারতের নতুন শাসক গোষ্ঠী ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর মণিপুরকে জোরপূর্বক ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের একটি রাজ্য করে নেয়। কিন্তু মণিপুরের জনগণ তা কখনোই মেনে নেননি।
মণিপুরে মেইতেই ও নাগা-কুকিদের এই বিরোধ নতুন নয়। কিন্তু বর্তমানের সহিংসতার নাটের গুরু হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট মোদী সরকার তথা মণিপুরের শাসক বিজেপি সরকার। এবং ভারতের কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলো। এসটিভুক্ত হলে সংখ্যাগুরু মেইতেই জাতিগোষ্ঠী সংখ্যালঘু নাগা-কুকিদের জমি কিনতে পারবে, যা এখন ভারতের সংবিধানের ৩৭১(গ) ধারা অনুসারে নিষিদ্ধ। ভারতের সংবিধানের এই আইন জানা সত্ত্বেও আদালত এমন আদেশ দিয়েছে। এই আদেশের কারণেই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের শাসকশ্রেণি তাদের এই সহিংসতা ও বিভাজনের রাজনীতি শুধু মণিপুর নয়, গুজরাট-কাশ্মীর-মিজোরাম-নাগাল্যান্ড-আসাম, সর্বশেষ হরিয়ানাতেও ছড়িয়েছে।
ফ্যাসিস্ট মোদী সরকার পরিকল্পিতভাবে এই সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছে। জাতিসমূহের কারাগার ভারতে মেইতিরাও নিপীড়িত জাতি। মণিপুরের চলমান স্বাধীনতা সংগ্রামে মেইতি, কুকি-নাগাদের সম্মিলিত সংগ্রামের ঐতিহ্য রয়েছে। তাদের মাঝে বিভক্তি ও বিভাজন সৃষ্টিই হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য। আরো লক্ষ্য হলো– সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে তাদের ভোটব্যাংক রক্ষা করা। মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেইরা হলো হিন্দু। তারা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫১%। সংখ্যালঘু নাগা-কুকিরা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের। নাগা-কুকি অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন খনিজের মজুদ পাওয়া গেছে। এগুলো কর্পোরেট কোম্পানির হাতে তুলে দিতেই নাগা-কুকিদের উপর দমন-নির্যাতন নামিয়ে এনেছে রাষ্ট্র। কারণ নাগা- কুকিরা তার বিরোধিতা করছে।
সুতরাং এই জাতিগত সংঘাত বাস্তবে মোদী সরকার সৃষ্ট। এই সংঘাতে নিপীড়িত-শোষিত শ্রমিক-কৃষক সাধারণ মেইতেই ও নাগা-কুকি জনগণের জান-মালের ক্ষতি ছাড়া কোনো স্বার্থ নেই। তারা মূলত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। উভয় নিপীড়িত জাতি-গোষ্ঠীর সাধারণ শত্রু হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের দালাল ভারতের আমলা-মুৎসুদ্দী শ্রেণি। যা বর্তমানে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট মোদী সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।
মণিপুরের নিপীড়িত বিভিন্ন জাতি ও জনগণের করণীয় হলো– এই শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক- মধ্যবিত্ত এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় বুর্জোয়াদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তোলা। ভারতীয় শাসকশ্রেণিকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে মণিপুরের রাজ্যব্যাপী গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করা। মণিপুরের জল-জমি-জঙ্গলের অধিকার কেবলমাত্র মণিপুরের জনগণের। সংবিধানের ৩৭১(গ) ধারা মতে নাগা-কুকিরা যেসব অধিকার পেয়ে আসছেন তা অব্যাহত রাখার লড়াই জারি রাখতে হবে। সকল ধরনের জাতীয়তাবাদী মোহ থেকে মণিপুরের জনগণকে মুক্ত রাখার সচেতন প্রয়াস চালাতে হবে।
মণিপুরের সংখ্যালঘু আদিবাসী নাগা-কুকিদের লড়াই মূলত ভারতের শ্রমিক-কৃষকসহ সকল নিপীড়িত জাতি ও জনগোষ্ঠীর লড়াই, যা নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের অংশ। যেজন্য ভারতের সত্যিকার কমিউনিস্টরা তথা মাওবাদীরা ৫০ বছর যাবৎ গণযুদ্ধ পরিচালনা করে আসছেন। অন্ধ্র-বিহার-ঝাড়খন্ড-দন্ডকারণ্য-পশ্চিম ঘাটসহ গড়ে তুলেছেন অনেক ঘাঁটি এলাকা। যার লক্ষ্য সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম। মণিপুরের নিপীড়িত জাতি ও জনগণকে নিজেদের মুক্তির জন্য সেখানে মাওবাদী পার্টি ও গণযুদ্ধ গড়ে তুলতে হবে।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র