• রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

পেরুর মাওবাদী নেতা কমরেড গণজালোর মৃত্যু 

‘নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা’র মতাবস্থান

পেরুর মাওবাদী নেতা কমরেড গণজালোর মৃত্যু 

‘নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা’র মতাবস্থান

  আন্দোলন প্রতিবেদন  

মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২১  |  অনলাইন সংস্করণ

গত ১১ সেপ্টেম্বর ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরুর মাওবাদী নেতা কমরেড গণজালো মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়ছেলি ৮৬ বছর। ১৯৯২ সালে গ্রেফতার হবার পর তিনি প্রায় ২৯ বছর ধরে পেরুর জেলখানায় বন্দি ছিলনে। ’৯২- পূর্ব বিপ্লব-সংগঠনের ‘অপরাধে’পেরুর রাষ্ট্র ও শাসকশ্রণি তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। তার জীবন ও কর্মকে দুটো প্রধান পর্বে বিভক্ত করা যায়। প্রথম পর্ব হলো ’৯২-সাল পর্যন্ত একজন মাওবাদী কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা হয়ে ওঠা এবং পেরুর মাটিতে এক মহান গণযুদ্ধের স্রষ্টার পর্ব। আর দ্বিতীয় পর্বটি হলো ’৯৩-থেকে তার রাজনৈতিক অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে তার অনুসারী ও বিশ্ব-মাওবাদী আন্দোলনে ব্যাপক বিভ্রান্তি, বিতর্ক ও বিভক্তির পর্ব।

খুব সংক্ষেপে আমরা এ বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরছি।

১। কমরেড মাও-এর মৃত্যু পর সংশোধনবাদীরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করে এবং মাওয়ের নেতৃত্বাধীন মহান সমাজতান্ত্রিক চীনকে পুঁজিবাদে অধঃপতিত করে। এই ঘটনা বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে এক গুরুতর সংকট ডেকে আনে। এমনই এক সময়ে ল্যাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি (“শাইনিং পাথ” নামের পরিচিত) ও কমরেড গণজালোর নেতৃত্বে গত শতাব্দীর ৮০-দশকে এক মহান গণযুদ্ধ গড়ে উঠেছিল যা ছিল চীন সহ বিশ্ব সংশোধনবাদীদরে মুখে এক তীব্র চপেটাঘাত। একইসাথে যা বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের সংকট কাটিয়ে নতুন অগ্রগতি ঘটানোর ক্ষেত্রে এক বিরাট অগ্রপদক্ষেপ।

কমরেড গণজালোর নেতৃত্বে প্রায় ১২ বছর ধরে পরিচালিত গণযুদ্ধ পেরুর বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলকে মুক্ত করে দেশব্যাপী ক্ষমতা দখলের পর্যায়ে প্রবেশ করছিল। গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পেরুর মাওবাদী পার্টি পেরুর শ্রমিক-কৃষক শ্রমজীবী জনগণ ও ব্যাপক নিপীড়িত নারীদের জাগরিত ও সংগঠিত করেছিল। সারা দেশব্যাপী ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রদেশে ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল এবং গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছিল। পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি সূচনা থেকেই আন্তর্জাতিক তকি মাওবাদীদের ঐক্যের সংগঠন ‘রিম’-এর সদস্য ছিল। পেরুর গণযুদ্ধ মাও-পরবর্তী বিশ্বের বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলন পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রেখেছিল। মাওবাদ, গণযুদ্ধ এবং রিম- এই তিনটি স্তম্ভ কমরেড গণজালোকে এক মহান বিপ্লবী নেতার ভূমিকায় আবির্ভূত করেছিল। রিমের মাধ্যমেই পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে গণযুদ্ধ বিশ্বব্যাপী প্রচার পেয়েছিল এবং তার পক্ষে এক বিপুল জনসমর্থন গড়ে উঠেছিল।

এই গণযুদ্ধে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পেরুর তৎকালীন ফুজিমোরি সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র ও শাসকশ্রেণি গণযুদ্ধকে ধ্বংস করার জন্য ব্যাপক দমন-নির্যাতন চালায়। যার পেছনে সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তারা অসংখ্য বিপ্লবী নেতা ও যোদ্ধাকে বন্দি ও হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা গ্রামাঞ্চলে ও শহরে ব্যাপক গণহত্যা করে। তারা এমনকি জেলখানায় বন্দি শত শত বন্দিকে হত্যা করে। বহু গ্রাম পুড়িয়ে দেয় ও বিপ্লবী ও জনগণের উপর বর্বর নির্যাতন চালায়। এ সত্ত্বেও গণযুদ্ধ ও বিপ্লবী সংগ্রাম বিজয়ের দিকে এগিয়ে চলে।

কিন্তু বিপ্লবের শত্রুদের ষড়যন্ত্র ও পাল্টা প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধও দিন দিন তীব্র হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় কমরেড গণজালো ১৯৯২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পেরুর রাজধানী লিমা থেকে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের কিছুদিন পর তৎকালীন ফুজিমোরি সরকার তাকে একটি লোহার খাঁচায় আবদ্ধ করে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে। কিন্তু কমরেড গণজালো সরকারের দালাল সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিশ্ব-গণমাধ্যম ও জনগণের সামনে তাকে অপদস্ত করার এই ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দেন। খাঁচায় বন্দি অবস্থায় তিনি এক বীরত্বর্পূণ ভাষণ দেন। এই ভাষণটি সারা বিশ্বে প্রচারতি হয়। এই ভাষণে তিনি চলমান গণযুদ্ধকে অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। এবং মাওবাদ ও রিম-কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন।

উপরোক্ত সমস্ত কিছুই ছিল গণজালো, পেরুর মাওবাদী পার্টি ও গণযুদ্ধের এক মহান ঐতিহাসিক ভূমিকা। যাকে আমরা দৃঢ়ভাবে ঊর্ধ্বে তুলে ধরি এবং তা শিক্ষা নেবার প্রয়োজন অনুভব করি। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি যে, মাওবাদ, গণযুদ্ধ ও রিম- এই তিন স্তম্ভ ব্যতীত গণজালোর বিপ্লবী অবদানকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা যায় না।

২। কিন্তু গ্রেফতারের পর পর প্রদত্ত বিখ্যাত ‘খাঁচার ভাষণ’টি দেবার প্রায় এক বছর পর থেকে গণযুদ্ধ প্রশ্নে তার রাজনতৈকি অবস্থান নিয়ে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলন, বিপ্লবকামী ও জনগণের মাঝে এক গুরুতর বিভ্রান্তি ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। যার মূল বিষয় ছিল গণযুদ্ধকে স্থগিত করে শান্তি স্থাপনের জন্য সরকাররে সাথে আলোচনার একটি প্রস্তাব। যা সমঝোতা-লাইন নামে পরচিতি হয়।

খোদ পেরু-পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়েন। তাদের একপক্ষ বলেন যে, গণজালোই শান্তি- সমঝোতা লাইনের প্রণেতা; তাই তাকেই অনুসরণ করতে হবে। অপরপক্ষ বলেন, এটা সরকারি ষড়যন্ত্র মাত্র; গণজালো এমন লাইন দিতেই পারেন না। খাঁচার ভাষণে গণযুদ্ধে লেগে থাকার আহ্বানটইি গণজালোর লাইন এবং তাকেই অনুসরণ করতে হবে। এই পরস্পরবিরোধী দুটো লাইনের প্রবক্তারাই গণজালোকে তাদের লাইনের নেতা হিসেবে দাবি করতে থাকেন, কারণ, গণজালো- তাদের উভয়ের মতানুসারইে- জেফেতুরা বা মহান নেতা, যাকে অনুসরণ করতে হবে।

* এমন এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে কমরেড গণজালোর মুখ থেকে তার বক্তব্য সরাসরি জানা এবং তার জীবন রক্ষা ও মুক্তির জন্য রিম-কমিটির নেতৃত্বে বিশ্ব-ব্যাপী এক বিরাট গণআন্দোলন গড়ে তোলা হয়। একইসাথে রিম-কমিটি এ বিষয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়, পেরু-পার্টির অভ্যন্তরস্থ এ দুই লাইনের সংগ্রামকে বোঝার প্রচেষ্টা চালায় এবং নির্ধারণ করে যে, “লাইনই নির্ধারক, তার প্রণেতা নয়”।

এই অবস্থান শিক্ষা ‘কমিটি’ সমঝোতা-লাইনের পক্ষে প্রকাশিত দলিলাদির বিশ্লেষণ সহকারে উন্মোচন করে এবং তাকে “ডান সুবিধাবাদী লাইন” হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু পেরুর পার্টির ‘গণযুদ্ধ-পন্থি’ অংশটি দুই লাইনের সংগ্রামকে আঁকড়ে না ধরে, তাতে পেরুসহ বিশ্বব্যাপী মাওবাদী ও জনগণকে পরিচালিত না করে, তাকে শত্রুর ‘ষড়যন্ত্র’ বলে একটি “ষড়যন্ত্র তত্ত্ব” সামনে আনে এবং একে ভিত্তি করে রিম-কমিটির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেয়।

কিন্তু আরো গুরুতর বিষয় হলো, ২৯ বছরের র্দীঘ বন্দিকালীন সময়ে বিভিন্ন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কমরেড গণজালোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তার মতাবস্থানকে স্পষ্ট না করা। যা কি না তার প্রাক্তন গতিশীল ও সৃজনশীল বিপ্লবী ভূমিকার সাথে (যেমন, ৯২-সালের খাঁচার ভাষণ) অসামঞ্জস্যর্পূণ। ফলে এতে শত্রু-পক্ষই ষড়যন্ত্রের ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুবিধা পায় এবং বিপ্লবীদের মাঝে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

এসবের ফলশ্রুতিতে পেরু ও বিশ্বে ব্যাপক বিপ্লবকামী জনগণ ব্যাপকভাবে বিভ্রান্ত, বিভক্ত ও হতাশ হন। যা কিনা শুধু পেরুর গণযুদ্ধ ও মাওবাদী পার্টিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তা নয়, বিশ্ব মাওবাদী আন্দোলনেও বিভক্তির সৃষ্টি করে ও গুরুতর সংকট ডেকে আনে।

আমরা মনে করি যে, ’৯২-পর্যন্ত কমরেড গণজালোর বিপ্লবী ভূমিকার সাথে ’৯৩-পরবর্তী ‘সমঝোতা-লাইনে’র প্রশ্নে ভূমিকা ও তার অবস্থানকে এক করে দেখা যায় না। তিনি তার আগের বিপ্লবী ভূমিকার ধারাবাহিকতা পরবর্তীকালে রক্ষা করতে পারেননি বলেই আমরা মনে করি। এ প্রশ্নটিতে স্পষ্ট অবস্থান ব্যতীত পেরুর গণযুদ্ধ ও বিপ্লব, তথা বিশ্ব মাওবাদী আন্দোলনের সংকটের সত্যিকার উপলব্ধি ও তার থেকে বেরিয়ে আসার পথনির্দেশ সম্ভব নয়। এবং তা না করে শুধুমাত্র গণজালোর বিপ্লবী পর্বের গুণগান গেয়েই বিভ্রান্তি, বিভক্তি ও সংকট কাটানো সম্ভব নয়। যা কিনা বিশ্বের মাওবাদীদের জরুরি কর্তব্য। একে যারা অবহেলা করবে, তারা কার্যত বিপ্লবের মূর্ত সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়ে কিছু ব্যক্তিতাবাদী গুণগানের ইতিহাস-চর্চায় নিজেদের নিয়োজিত করবে, যা বিপ্লবের পক্ষে সত্যিকার কোনো অবদান রাখতে পারবে না।

৩। আগেই বলা হয়েছে যে, পেরুর সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং তাদের প্রভু বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পেরুর গণযুদ্ধকে ধ্বংস করার প্রতিবিপ্লবী কর্মসূচি ও ষড়যন্ত্র শুরু থেকেই কার্যকর করে আসছিল। গণজালোকে গ্রেফতার ও সমঝোতা-লাইনের আবির্ভাবের পরও সেটা অব্যাহত থাকে।

কমরেড গণজালোর ’৮০-দশকের মহান বিপ্লবী ভূমিকাগুলোর জন্যই পেরুর রাষ্ট্র, শাসকশ্রেণি ও তার প্রভু বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তাকে সুর্দীঘ ২৯ বছর ধরে বন্দি করে রাখে, বিচারের নামে প্রহসন করে এবং বিভিন্ন রোগাক্রান্ত এই বয়োবৃদ্ধ নেতাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দয়ে।

এমনকি মৃত্যুর পরও তার লাশ নিয়ে পেরুর সরকার, শাসকশ্রেণি (পেছনে সাম্রাজ্যবাদ) যে ন্যক্কারজনক কাজ করছে তা তাদের ফ্যাসিস্ট চরিত্রকেই প্রকাশ করে। তারা বিশ্বজুড়ে তাদের দালাল মিডিয়ার মাধ্যমে পেরুর বিপ্লবী সংগ্রাম ও বিপ্লবীদের চরিত্র হনন করছে বিপ্লবী সংগ্রামের ইতিহাসগুলোকে বিকৃত ভাবে প্রচার করছে ,নিজেদের ফ্যাসিস্ট বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যাগুলোকে গোপন করছে।

’৯৩-পরবর্তী পর্বে গণজালোর লাইনগত ভূমিকা যা-ই হোক না কেন, তিনি আমৃত্যু বিশ্ব-বিপ্লবের শত্রুদের দ্বারা নিপীড়িত হয়েছেন। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, পেরুসহ তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রযন্ত্র ও শাসকশ্রেণি এবং তাদের প্রভু সাম্রাজ্যবাদীদের এমন ফ্যাসিস্ট চরিত্রকে উন্মোচন করা। আমরা ২৯ বছর ধরে গণজালোর সাথে অন্যায় আচরণের প্রতিক্রিয়াশীল-তৎপরতাকে তীব্র নিন্দা করি।

৪। উপরোক্তভাবে একটি বিজয়ী গণযুদ্ধের বিপর্যয় ও ধ্বংস এবং তার নেতৃত্বকারী পার্টি ও প্রধান নেতৃত্বের এভাবে পথ হারিয়ে ফেলার কারণ কী? তাকেও বিপ্লবীদেরকে বিবেচনা করতে হবে।

আমরা মনে করি যে, পেরু-পার্টি ও গণজালোর লাইন ও কার্যক্রম ’৯২-পূর্বকালে বিপ্লবী ও ইতিবাচক হলেও তাদের রাজনৈতিক-মতাদর্শগত লাইনে বিবিধ সমস্যাও ছিল, যা নিয়ে তৎকালীন রিম এবং বিশ্ব-মাওবাদী আন্দোলনে বিতর্ক চলছিল। জেফেতুরা, গণজালো থট, প্রধানত মাওবাদ, কমিউনিজম পর্যন্ত গণযুদ্ধ, বিশ্ব-বিপ্লবের রণনৈতিক আক্রমণের সূচনা- প্রভৃতি প্রশ্নে মাওবাদী আন্দোলনে মতপার্তক্য ছিল। বিশেষত জেফেতুরা (মহান নেতৃত্ব তত্ত্ব) ও গণজালো থট (প্রত্যকে দেশে নিজস্ব “চিন্তাধারা” থাকতে হবে, এবং পেরুতে মতবাদ হলো, “প্রধানত গণজালো থট”)সহ- কতকগুলো ভুল, ব্যক্তিতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী বিচ্যুতির ভিত্তি সৃষ্টি করেছিল, যা কিনা ভিন্ন পরিস্থিতিতে (গণজালোর গ্রেফতার ও পেরু-বিপ্লবের সংকটকালে) বড় ধরনের সমস্যা আকারে আবির্ভূত হয়।

আমরা মনে করি যে, বিশ্ব মাওবাদীদেরকে এসব প্রশ্নেও মিমাংসা ও ঐক্য ব্যতীত পেরুর গণযুদ্ধ থেকে শিক্ষা সুনির্দিষ্ট হবে না এবং সেটা বিবিধ ভ্রান্ত পথে বিপ্লবী আন্দোলনকে পরিচালিত করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের মাওবাদীদের দায়িত্ব হচ্ছে পেরুর পার্টির ’৮০-দশকের গণযুদ্ধ ও সে সময়ে কমরেড গণজালোর মহান ভূমিকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার পাশাপাশি পেরুর বিপ্লব বিপর্যস্ত হওয়ার কারণসমূহ অনুসন্ধান এবং সঠিক করণীয় নির্ধারণ করা। তা না হলে পেরুর বিপ্লবতো বটেই, বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলনকে ও বিপ্লবী সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়া যাবে না।

আমরা, নয়াগণতান্ত্রিক গণর্মোচা, মাওবাদ ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে উপরোক্ত অবস্থানগুলোকে তুলে ধরা প্রয়োজনীয় মনে করি।

পেরুর মাওবাদী নেতা কমরেড গণজালোর মৃত্যু 

‘নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা’র মতাবস্থান

 আন্দোলন প্রতিবেদন 
মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২১  |  অনলাইন সংস্করণ

গত ১১ সেপ্টেম্বর ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরুর মাওবাদী নেতা কমরেড গণজালো মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়ছেলি ৮৬ বছর। ১৯৯২ সালে গ্রেফতার হবার পর তিনি প্রায় ২৯ বছর ধরে পেরুর জেলখানায় বন্দি ছিলনে। ’৯২- পূর্ব বিপ্লব-সংগঠনের ‘অপরাধে’পেরুর রাষ্ট্র ও শাসকশ্রণি তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। তার জীবন ও কর্মকে দুটো প্রধান পর্বে বিভক্ত করা যায়। প্রথম পর্ব হলো ’৯২-সাল পর্যন্ত একজন মাওবাদী কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা হয়ে ওঠা এবং পেরুর মাটিতে এক মহান গণযুদ্ধের স্রষ্টার পর্ব। আর দ্বিতীয় পর্বটি হলো ’৯৩-থেকে তার রাজনৈতিক অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে তার অনুসারী ও বিশ্ব-মাওবাদী আন্দোলনে ব্যাপক বিভ্রান্তি, বিতর্ক ও বিভক্তির পর্ব।

খুব সংক্ষেপে আমরা এ বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরছি।

১। কমরেড মাও-এর মৃত্যু পর সংশোধনবাদীরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করে এবং মাওয়ের নেতৃত্বাধীন মহান সমাজতান্ত্রিক চীনকে পুঁজিবাদে অধঃপতিত করে। এই ঘটনা বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে এক গুরুতর সংকট ডেকে আনে। এমনই এক সময়ে ল্যাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি (“শাইনিং পাথ” নামের পরিচিত) ও কমরেড গণজালোর নেতৃত্বে গত শতাব্দীর ৮০-দশকে এক মহান গণযুদ্ধ গড়ে উঠেছিল যা ছিল চীন সহ বিশ্ব সংশোধনবাদীদরে মুখে এক তীব্র চপেটাঘাত। একইসাথে যা বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের সংকট কাটিয়ে নতুন অগ্রগতি ঘটানোর ক্ষেত্রে এক বিরাট অগ্রপদক্ষেপ।

কমরেড গণজালোর নেতৃত্বে প্রায় ১২ বছর ধরে পরিচালিত গণযুদ্ধ পেরুর বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলকে মুক্ত করে দেশব্যাপী ক্ষমতা দখলের পর্যায়ে প্রবেশ করছিল। গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পেরুর মাওবাদী পার্টি পেরুর শ্রমিক-কৃষক শ্রমজীবী জনগণ ও ব্যাপক নিপীড়িত নারীদের জাগরিত ও সংগঠিত করেছিল। সারা দেশব্যাপী ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রদেশে ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল এবং গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছিল। পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি সূচনা থেকেই আন্তর্জাতিক তকি মাওবাদীদের ঐক্যের সংগঠন ‘রিম’-এর সদস্য ছিল। পেরুর গণযুদ্ধ মাও-পরবর্তী বিশ্বের বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলন পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রেখেছিল। মাওবাদ, গণযুদ্ধ এবং রিম- এই তিনটি স্তম্ভ কমরেড গণজালোকে এক মহান বিপ্লবী নেতার ভূমিকায় আবির্ভূত করেছিল। রিমের মাধ্যমেই পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে গণযুদ্ধ বিশ্বব্যাপী প্রচার পেয়েছিল এবং তার পক্ষে এক বিপুল জনসমর্থন গড়ে উঠেছিল।

এই গণযুদ্ধে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পেরুর তৎকালীন ফুজিমোরি সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র ও শাসকশ্রেণি গণযুদ্ধকে ধ্বংস করার জন্য ব্যাপক দমন-নির্যাতন চালায়। যার পেছনে সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তারা অসংখ্য বিপ্লবী নেতা ও যোদ্ধাকে বন্দি ও হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা গ্রামাঞ্চলে ও শহরে ব্যাপক গণহত্যা করে। তারা এমনকি জেলখানায় বন্দি শত শত বন্দিকে হত্যা করে। বহু গ্রাম পুড়িয়ে দেয় ও বিপ্লবী ও জনগণের উপর বর্বর নির্যাতন চালায়। এ সত্ত্বেও গণযুদ্ধ ও বিপ্লবী সংগ্রাম বিজয়ের দিকে এগিয়ে চলে।

কিন্তু বিপ্লবের শত্রুদের ষড়যন্ত্র ও পাল্টা প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধও দিন দিন তীব্র হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় কমরেড গণজালো ১৯৯২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পেরুর রাজধানী লিমা থেকে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের কিছুদিন পর তৎকালীন ফুজিমোরি সরকার তাকে একটি লোহার খাঁচায় আবদ্ধ করে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে। কিন্তু কমরেড গণজালো সরকারের দালাল সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিশ্ব-গণমাধ্যম ও জনগণের সামনে তাকে অপদস্ত করার এই ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দেন। খাঁচায় বন্দি অবস্থায় তিনি এক বীরত্বর্পূণ ভাষণ দেন। এই ভাষণটি সারা বিশ্বে প্রচারতি হয়। এই ভাষণে তিনি চলমান গণযুদ্ধকে অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। এবং মাওবাদ ও রিম-কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন।

উপরোক্ত সমস্ত কিছুই ছিল গণজালো, পেরুর মাওবাদী পার্টি ও গণযুদ্ধের এক মহান ঐতিহাসিক ভূমিকা। যাকে আমরা দৃঢ়ভাবে ঊর্ধ্বে তুলে ধরি এবং তা শিক্ষা নেবার প্রয়োজন অনুভব করি। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি যে, মাওবাদ, গণযুদ্ধ ও রিম- এই তিন স্তম্ভ ব্যতীত গণজালোর বিপ্লবী অবদানকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা যায় না।

২। কিন্তু গ্রেফতারের পর পর প্রদত্ত বিখ্যাত ‘খাঁচার ভাষণ’টি দেবার প্রায় এক বছর পর থেকে গণযুদ্ধ প্রশ্নে তার রাজনতৈকি অবস্থান নিয়ে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলন, বিপ্লবকামী ও জনগণের মাঝে এক গুরুতর বিভ্রান্তি ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। যার মূল বিষয় ছিল গণযুদ্ধকে স্থগিত করে শান্তি স্থাপনের জন্য সরকাররে সাথে আলোচনার একটি প্রস্তাব। যা সমঝোতা-লাইন নামে পরচিতি হয়।

খোদ পেরু-পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়েন। তাদের একপক্ষ বলেন যে, গণজালোই শান্তি- সমঝোতা লাইনের প্রণেতা; তাই তাকেই অনুসরণ করতে হবে। অপরপক্ষ বলেন, এটা সরকারি ষড়যন্ত্র মাত্র; গণজালো এমন লাইন দিতেই পারেন না। খাঁচার ভাষণে গণযুদ্ধে লেগে থাকার আহ্বানটইি গণজালোর লাইন এবং তাকেই অনুসরণ করতে হবে। এই পরস্পরবিরোধী দুটো লাইনের প্রবক্তারাই গণজালোকে তাদের লাইনের নেতা হিসেবে দাবি করতে থাকেন, কারণ, গণজালো- তাদের উভয়ের মতানুসারইে- জেফেতুরা বা মহান নেতা, যাকে অনুসরণ করতে হবে।

* এমন এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে কমরেড গণজালোর মুখ থেকে তার বক্তব্য সরাসরি জানা এবং তার জীবন রক্ষা ও মুক্তির জন্য রিম-কমিটির নেতৃত্বে বিশ্ব-ব্যাপী এক বিরাট গণআন্দোলন গড়ে তোলা হয়। একইসাথে রিম-কমিটি এ বিষয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়, পেরু-পার্টির অভ্যন্তরস্থ এ দুই লাইনের সংগ্রামকে বোঝার প্রচেষ্টা চালায় এবং নির্ধারণ করে যে, “লাইনই নির্ধারক, তার প্রণেতা নয়”।

এই অবস্থান শিক্ষা ‘কমিটি’ সমঝোতা-লাইনের পক্ষে প্রকাশিত দলিলাদির বিশ্লেষণ সহকারে উন্মোচন করে এবং তাকে “ডান সুবিধাবাদী লাইন” হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু পেরুর পার্টির ‘গণযুদ্ধ-পন্থি’ অংশটি দুই লাইনের সংগ্রামকে আঁকড়ে না ধরে, তাতে পেরুসহ বিশ্বব্যাপী মাওবাদী ও জনগণকে পরিচালিত না করে, তাকে শত্রুর ‘ষড়যন্ত্র’ বলে একটি “ষড়যন্ত্র তত্ত্ব” সামনে আনে এবং একে ভিত্তি করে রিম-কমিটির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেয়।

কিন্তু আরো গুরুতর বিষয় হলো, ২৯ বছরের র্দীঘ বন্দিকালীন সময়ে বিভিন্ন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কমরেড গণজালোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তার মতাবস্থানকে স্পষ্ট না করা। যা কি না তার প্রাক্তন গতিশীল ও সৃজনশীল বিপ্লবী ভূমিকার সাথে (যেমন, ৯২-সালের খাঁচার ভাষণ) অসামঞ্জস্যর্পূণ। ফলে এতে শত্রু-পক্ষই ষড়যন্ত্রের ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুবিধা পায় এবং বিপ্লবীদের মাঝে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

এসবের ফলশ্রুতিতে পেরু ও বিশ্বে ব্যাপক বিপ্লবকামী জনগণ ব্যাপকভাবে বিভ্রান্ত, বিভক্ত ও হতাশ হন। যা কিনা শুধু পেরুর গণযুদ্ধ ও মাওবাদী পার্টিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তা নয়, বিশ্ব মাওবাদী আন্দোলনেও বিভক্তির সৃষ্টি করে ও গুরুতর সংকট ডেকে আনে।

আমরা মনে করি যে, ’৯২-পর্যন্ত কমরেড গণজালোর বিপ্লবী ভূমিকার সাথে ’৯৩-পরবর্তী ‘সমঝোতা-লাইনে’র প্রশ্নে ভূমিকা ও তার অবস্থানকে এক করে দেখা যায় না। তিনি তার আগের বিপ্লবী ভূমিকার ধারাবাহিকতা পরবর্তীকালে রক্ষা করতে পারেননি বলেই আমরা মনে করি। এ প্রশ্নটিতে স্পষ্ট অবস্থান ব্যতীত পেরুর গণযুদ্ধ ও বিপ্লব, তথা বিশ্ব মাওবাদী আন্দোলনের সংকটের সত্যিকার উপলব্ধি ও তার থেকে বেরিয়ে আসার পথনির্দেশ সম্ভব নয়। এবং তা না করে শুধুমাত্র গণজালোর বিপ্লবী পর্বের গুণগান গেয়েই বিভ্রান্তি, বিভক্তি ও সংকট কাটানো সম্ভব নয়। যা কিনা বিশ্বের মাওবাদীদের জরুরি কর্তব্য। একে যারা অবহেলা করবে, তারা কার্যত বিপ্লবের মূর্ত সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়ে কিছু ব্যক্তিতাবাদী গুণগানের ইতিহাস-চর্চায় নিজেদের নিয়োজিত করবে, যা বিপ্লবের পক্ষে সত্যিকার কোনো অবদান রাখতে পারবে না।

৩। আগেই বলা হয়েছে যে, পেরুর সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং তাদের প্রভু বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ পেরুর গণযুদ্ধকে ধ্বংস করার প্রতিবিপ্লবী কর্মসূচি ও ষড়যন্ত্র শুরু থেকেই কার্যকর করে আসছিল। গণজালোকে গ্রেফতার ও সমঝোতা-লাইনের আবির্ভাবের পরও সেটা অব্যাহত থাকে।

কমরেড গণজালোর ’৮০-দশকের মহান বিপ্লবী ভূমিকাগুলোর জন্যই পেরুর রাষ্ট্র, শাসকশ্রেণি ও তার প্রভু বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তাকে সুর্দীঘ ২৯ বছর ধরে বন্দি করে রাখে, বিচারের নামে প্রহসন করে এবং বিভিন্ন রোগাক্রান্ত এই বয়োবৃদ্ধ নেতাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দয়ে।

এমনকি মৃত্যুর পরও তার লাশ নিয়ে পেরুর সরকার, শাসকশ্রেণি (পেছনে সাম্রাজ্যবাদ) যে ন্যক্কারজনক কাজ করছে তা তাদের ফ্যাসিস্ট চরিত্রকেই প্রকাশ করে। তারা বিশ্বজুড়ে তাদের দালাল মিডিয়ার মাধ্যমে পেরুর বিপ্লবী সংগ্রাম ও বিপ্লবীদের চরিত্র হনন করছে বিপ্লবী সংগ্রামের ইতিহাসগুলোকে বিকৃত ভাবে প্রচার করছে ,নিজেদের ফ্যাসিস্ট বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যাগুলোকে গোপন করছে।

’৯৩-পরবর্তী পর্বে গণজালোর লাইনগত ভূমিকা যা-ই হোক না কেন, তিনি আমৃত্যু বিশ্ব-বিপ্লবের শত্রুদের দ্বারা নিপীড়িত হয়েছেন। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, পেরুসহ তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রযন্ত্র ও শাসকশ্রেণি এবং তাদের প্রভু সাম্রাজ্যবাদীদের এমন ফ্যাসিস্ট চরিত্রকে উন্মোচন করা। আমরা ২৯ বছর ধরে গণজালোর সাথে অন্যায় আচরণের প্রতিক্রিয়াশীল-তৎপরতাকে তীব্র নিন্দা করি।

৪। উপরোক্তভাবে একটি বিজয়ী গণযুদ্ধের বিপর্যয় ও ধ্বংস এবং তার নেতৃত্বকারী পার্টি ও প্রধান নেতৃত্বের এভাবে পথ হারিয়ে ফেলার কারণ কী? তাকেও বিপ্লবীদেরকে বিবেচনা করতে হবে।

আমরা মনে করি যে, পেরু-পার্টি ও গণজালোর লাইন ও কার্যক্রম ’৯২-পূর্বকালে বিপ্লবী ও ইতিবাচক হলেও তাদের রাজনৈতিক-মতাদর্শগত লাইনে বিবিধ সমস্যাও ছিল, যা নিয়ে তৎকালীন রিম এবং বিশ্ব-মাওবাদী আন্দোলনে বিতর্ক চলছিল। জেফেতুরা, গণজালো থট, প্রধানত মাওবাদ, কমিউনিজম পর্যন্ত গণযুদ্ধ, বিশ্ব-বিপ্লবের রণনৈতিক আক্রমণের সূচনা- প্রভৃতি প্রশ্নে মাওবাদী আন্দোলনে মতপার্তক্য ছিল। বিশেষত জেফেতুরা (মহান নেতৃত্ব তত্ত্ব) ও গণজালো থট (প্রত্যকে দেশে নিজস্ব “চিন্তাধারা” থাকতে হবে, এবং পেরুতে মতবাদ হলো, “প্রধানত গণজালো থট”)সহ- কতকগুলো ভুল, ব্যক্তিতাবাদী ও জাতীয়তাবাদী বিচ্যুতির ভিত্তি সৃষ্টি করেছিল, যা কিনা ভিন্ন পরিস্থিতিতে (গণজালোর গ্রেফতার ও পেরু-বিপ্লবের সংকটকালে) বড় ধরনের সমস্যা আকারে আবির্ভূত হয়।

আমরা মনে করি যে, বিশ্ব মাওবাদীদেরকে এসব প্রশ্নেও মিমাংসা ও ঐক্য ব্যতীত পেরুর গণযুদ্ধ থেকে শিক্ষা সুনির্দিষ্ট হবে না এবং সেটা বিবিধ ভ্রান্ত পথে বিপ্লবী আন্দোলনকে পরিচালিত করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের মাওবাদীদের দায়িত্ব হচ্ছে পেরুর পার্টির ’৮০-দশকের গণযুদ্ধ ও সে সময়ে কমরেড গণজালোর মহান ভূমিকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার পাশাপাশি পেরুর বিপ্লব বিপর্যস্ত হওয়ার কারণসমূহ অনুসন্ধান এবং সঠিক করণীয় নির্ধারণ করা। তা না হলে পেরুর বিপ্লবতো বটেই, বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলনকে ও বিপ্লবী সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়া যাবে না।

আমরা, নয়াগণতান্ত্রিক গণর্মোচা, মাওবাদ ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে উপরোক্ত অবস্থানগুলোকে তুলে ধরা প্রয়োজনীয় মনে করি।

আরও খবর
 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র