• মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২
  • ঢাকা, বাংলাদেশ
তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতে ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র মুসলিম বিদ্বেষ
তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতে ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র মুসলিম বিদ্বেষ

  আন্দোলন প্রতিবেদন  

শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২  |  অনলাইন সংস্করণ

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার নামে ভারতে ক্ষমতাসীন হয় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দালাল ভারতীয় সামন্ত ও মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণির দল কংগ্রেস। ফলে শ্রমিক-কৃষক, জাতিগত-ভাষাগত-ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণসহ কোনো নিপীড়িত জনগণেরই মুক্তি হয়নি। বরং বড় ধনী শ্রেণির দল কংগ্রেস প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল ক্ষমতায় থেকে প্রগতিশীলতার বুলি আউড়িয়ে এমন একটা জমি তৈরি করেছে যেখানে আরএসএস-বিজেপির ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি চাষ করা সহজ হয়েছে।  ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট দল আরএসএস ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর জন্য ভারত-বিভক্তির সময় থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের মুসলিম বিদ্বেষী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এজন্য বহুবার মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে। বিগত সাত দশকে যেসব মুসলিম হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - ১৯৬৯ সালে আহমেদাবাদ, ১৯৭০ সালে মহারাষ্ট্রের বিভানডি, ১৯৭১ সালে কেরালায় এবং ঝাড়খন্ডের জমসেদপুরে, ১৯৮০ সালে বিহারের ভাগলপুর এবং উত্তর প্রদেশের মিরাট, ১৯৮২ সালে তামিলনাড়–, ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ধ্বংস, ২০০২ সালে গুজরাটে, ২০০৮ সালে উড়িশ্যার কান্ডামালে এবং ২০১৩ সালে উত্তর প্রদেশের মুজাফফারপুরের হত্যাযজ্ঞ। এসব হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদার কংগ্রেসকে পরাজিত করে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি প্রথমে ক্ষমতায় আসে ২০০০ সালে। দ্বিতীয়বার ২০১৪ এবং তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসে ২০১৯-এ। ২০০২ সালে গুজরাটে যখন মুসলিম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল মোদি তখন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী ছিল। তৃতীয়বারে বিজেপি ক্ষমতায় বসেই সুপ্রিম কোর্টকে ব্যবহার করে বাবরী মসজিদের পাশে রাম মন্দির নির্মাণ করেছে। এই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট ভারতকেই পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদীরা একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলতে পছন্দ করে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, জনগণের বিরাট একাংশ কেন এই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের সমর্থন করেন? কারণ, ১৯৪৭ সালে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিতাড়িত হলেও শাসন ক্ষমতায় আসে তাদেরই দালাল সামন্ত এবং বড় ধনী শ্রেণি। তারা তাদের শোষণ-নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য যতটুকু চুনকাম করা দরকার তাছাড়া এই ৭৫ বছরেও আধা-সামন্ততান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন করে নি। ফলে আমজনতা রয়ে গেছেন অবৈজ্ঞানিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রাচীন ধর্মীয় ভাবধারায়। এই শাসকেরা গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, প্রগতিশীলতা বা কখনো কখনো ভুয়া সমাজতন্ত্রের মুলা ঝুলিয়ে শ্রমিক-কৃষক-মুসলিম ধর্মীয় সংখ্যলঘু-দলিত-আদিবাসী-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়-নারীসহ সকল নিপীড়িত জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। সেই বিক্ষুব্ধ প্রতারিত জনগণকে শাসক শ্রেণির নতুন প্রতিনিধি বিজেপি এখন ‘এক ভারত’, ‘শ্রেষ্ঠ ভারত’, ‘অখণ্ড ভারত’ প্রভৃতি ফাঁকা রাজনৈতিক স্লোগানের সাথে আধা-সামন্ততান্ত্রিক সম্পর্কে জড়িত ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শের আফিম মিশিয়ে নির্মম শোষণ-নির্যাতনে  আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে। মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরি জনগণকে নিক্ষেপ করেছে যুদ্ধের ময়দানে। এই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠ্যসূচিতে ব্রহ্মণ্যবাদী কর্মসূচি আনছে। বাস্তবে আজকে ভারতে ভোটের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া বুর্জোয়া গণতন্ত্রের কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। সেই ভোটের রাজনীতিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষকে উসকে দেয়ার জন্য কখনো গরুর মাংস নিষিদ্ধ, কখনো জয় শ্রীরাম স্লোগান, কখনো হিজাব বিতর্ক সামনে আনছে। শুধু তাই নয়, জনগণকে পশ্চাদপদ কুসংস্কারাচ্ছন্ন কথিত হিন্দু আচার-ব্যবহার চালুর কথা বলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গো-মূত্র পানের মাধ্যমে অতিমারি করোনা মুক্ত হওয়ার বিধান। এভাবে বিজেপি জনগণের মৌলিক সমস্যা শ্রেণি সংগ্রামকে আড়াল করে দিল্লীর মসনদ দখলে সক্ষম হয়েছে। আম্বানী-বিড়লা-টাটাসহ সকল পুঁজিবাদী এবং তাদের পাচাটা বুদ্ধিজীবীরা তাদের বানিজ্যিক স্বার্থে এক সময়ে কংগ্রেসকে সমর্থন করতো, এখন তারাই বিজেপিকে সমর্থন করছে। একচেটিয়া ব্যবসা-বানিজ্য-লুটপাট চালাতে পারলে এরা গণতন্ত্র-সামন্ততন্ত্র-পুঁজিতন্ত্র-ধর্মতন্ত্র সবই সমর্থন করে। সম্প্রতি কর্ণাটক রাজ্যে মুসলিম নারীদের হিজাব পরাকে কেন্দ্র করে যে মুসলিম বিরোধী হিংসা উস্কে দেয়া হয়েছে বিজেপি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের মদদে তা অনেকেই জানেন। মুসলিম জনগণ যখন আদালতের শরণাপন্ন হন, তখন আদালত রায় দেয় যে, হিজাব পরা যাবে না, এবং হিজাব ইসলাম ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়। এভাবে ভারতীয় রাষ্ট্র ও আইন-আদালত ধর্মীয় আচার পালনের উপর আক্রমণকে ন্যায্য করছে। এভাবে সমগ্র ভারত জুড়েই মুসলিম জনগণের উপর হিন্দুত্ববাদী আক্রমণ তীব্র হয়ে উঠেছে। কাশ্মীর সমস্যা একটি পুরোনো ও বিস্তারিত ইস্যু। যা কম/বেশি সকলেই জানেন।

এ অবস্থায়, আধা-উপনিবেশিক আধা-সামন্তীয় হিন্দুত্ববাদী সমাজ ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সমাজতন্ত্রের লক্ষে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার জন্য কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা ভারত-বিভক্তির পর, বিশেষত: নকশালবাড়ী উত্থান থেকে মাওবাদীরা  ৫০ বছর যাবত কঠোর শ্রেণি সংগ্রাম পরিচালনা করে যচ্ছেন। অন্ধ্র-বিহার-ঝাড়খন্ড-দন্ডকারণ্য-ছত্তিশগড় -পশ্চিম ঘাটসহ গড়ে তুলেছেন অনেক ঘাঁটি এলাকা। যেখানে চলমান শোষণমূলক সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য বিপ্লবী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় কুসংস্কারের সাথে আধা-সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা কিভাবে গাটছড়া বাঁধা, শাসক বিজেপি কিভাবে তাকে রক্ষা করে চলেছে এবং  মাওবাদীরা তার বিরুদ্ধে সুনির্দ্দিষ্ট বিপ্লবী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে তার একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। সকলেই জানেন হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসীদের ধর্মীয় আবেগকে উসকানোর জন্য বিজেপির একটা কর্মসূচি হচ্ছে গো-রক্ষা আন্দোলন। বিহারের অওরঙ্গাবাদ জেলার ধিবরা থানার বারা গ্রামে বিজেপির নেতৃত্বে এনজিও-দের পরিচালনায় ‘গোরু-জ্ঞান ফাউন্ডেশন’ নামে একটি বিরাট গোশালা গড়ে তোলা হয়। এর ঘোষিত লক্ষ গোরু চুরি বন্ধ করা এবং কসাইদের থেকে গোরুকে রক্ষা করা। এই ফাউন্ডেশন শত শত গোরু সংগ্রহ করে গোশালায় রাখে। কিন্তু পর্যাপ্ত খাদ্য এবং সুচিকিৎসার অভাবে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি করে গরু মারা যায়। তারা মরা গরুগুলিকে পুড়িয়ে ফেলে। জনগণ এতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন।  বিক্ষুদ্ধ হওয়ার আরো কারণ হলো - জনগণ বুঝতে পেরেছিলেন ষড়যন্ত্রমুলকভাবে গো-রক্ষার নামে গঠিত  গোশালাটি নির্মাণ করা হয়েছিল এক ভূস্বামী থেকে জনগণের বাজেয়াপ্ত করা জমি দখল করার জন্য। জনগণ আরো বুঝতে পারেন, এর পিছনে রয়েছে শাসক বিজেপি’র প্রশাসন। এ অবস্থায় জনগণ মাওবাদী পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত ‘গণমুক্তি গেরিলা বাহিনী’(পিএলজিএ)-এর শরণাপন্ন হন। ১৫ আগষ্ট/২১ মাওবাদী গেরিলারা গোশালাটি দখলে নিয়ে সকল গোরুকে মুক্ত করে জনগণের মধ্যে বণ্টন করে দেন এবং বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে গোশালাটি ধ্বংস করে দেন। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে জনগণ উল্লসিত হয়ে বলতে থাকেন, গোরুর প্রকৃত রক্ষক হচ্ছে মাওবাদীরা, আর ফাউন্ডেশেন এবং বিজেপি শাসিত পুলিশ-প্রশাসন হচ্ছে গো-রক্ষার নামে ভূস্বামীদের রক্ষক। জনগণ এমন অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী যেখানে গো-রক্ষার নামে মুসলিম এবং দলিতদের  নির্যাতন করে থাকে। এমনি জটিল পদ্ধতিতে ধর্মকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু মুসলিম-খ্রিষ্টান-দলিত-আদবাসীসহ সকল নিপীড়িত জনগণের উপর ফ্যাসিবাদী নির্যাতন চালিয়ে ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্র টিকিয়ে রেখে মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া ব্যবস্থা পরিচালনা করছে। একমাত্র মাওবাদীদের নেতৃত্বে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদকে ধ্বংস করতে পারে।

তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতে ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র মুসলিম বিদ্বেষ

 আন্দোলন প্রতিবেদন 
শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২  |  অনলাইন সংস্করণ

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার নামে ভারতে ক্ষমতাসীন হয় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দালাল ভারতীয় সামন্ত ও মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণির দল কংগ্রেস। ফলে শ্রমিক-কৃষক, জাতিগত-ভাষাগত-ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণসহ কোনো নিপীড়িত জনগণেরই মুক্তি হয়নি। বরং বড় ধনী শ্রেণির দল কংগ্রেস প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল ক্ষমতায় থেকে প্রগতিশীলতার বুলি আউড়িয়ে এমন একটা জমি তৈরি করেছে যেখানে আরএসএস-বিজেপির ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি চাষ করা সহজ হয়েছে।  ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট দল আরএসএস ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর জন্য ভারত-বিভক্তির সময় থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের মুসলিম বিদ্বেষী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এজন্য বহুবার মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে। বিগত সাত দশকে যেসব মুসলিম হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - ১৯৬৯ সালে আহমেদাবাদ, ১৯৭০ সালে মহারাষ্ট্রের বিভানডি, ১৯৭১ সালে কেরালায় এবং ঝাড়খন্ডের জমসেদপুরে, ১৯৮০ সালে বিহারের ভাগলপুর এবং উত্তর প্রদেশের মিরাট, ১৯৮২ সালে তামিলনাড়–, ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ধ্বংস, ২০০২ সালে গুজরাটে, ২০০৮ সালে উড়িশ্যার কান্ডামালে এবং ২০১৩ সালে উত্তর প্রদেশের মুজাফফারপুরের হত্যাযজ্ঞ। এসব হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদার কংগ্রেসকে পরাজিত করে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি প্রথমে ক্ষমতায় আসে ২০০০ সালে। দ্বিতীয়বার ২০১৪ এবং তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসে ২০১৯-এ। ২০০২ সালে গুজরাটে যখন মুসলিম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল মোদি তখন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী ছিল। তৃতীয়বারে বিজেপি ক্ষমতায় বসেই সুপ্রিম কোর্টকে ব্যবহার করে বাবরী মসজিদের পাশে রাম মন্দির নির্মাণ করেছে। এই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট ভারতকেই পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদীরা একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলতে পছন্দ করে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, জনগণের বিরাট একাংশ কেন এই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের সমর্থন করেন? কারণ, ১৯৪৭ সালে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিতাড়িত হলেও শাসন ক্ষমতায় আসে তাদেরই দালাল সামন্ত এবং বড় ধনী শ্রেণি। তারা তাদের শোষণ-নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য যতটুকু চুনকাম করা দরকার তাছাড়া এই ৭৫ বছরেও আধা-সামন্ততান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন করে নি। ফলে আমজনতা রয়ে গেছেন অবৈজ্ঞানিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রাচীন ধর্মীয় ভাবধারায়। এই শাসকেরা গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, প্রগতিশীলতা বা কখনো কখনো ভুয়া সমাজতন্ত্রের মুলা ঝুলিয়ে শ্রমিক-কৃষক-মুসলিম ধর্মীয় সংখ্যলঘু-দলিত-আদিবাসী-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়-নারীসহ সকল নিপীড়িত জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। সেই বিক্ষুব্ধ প্রতারিত জনগণকে শাসক শ্রেণির নতুন প্রতিনিধি বিজেপি এখন ‘এক ভারত’, ‘শ্রেষ্ঠ ভারত’, ‘অখণ্ড ভারত’ প্রভৃতি ফাঁকা রাজনৈতিক স্লোগানের সাথে আধা-সামন্ততান্ত্রিক সম্পর্কে জড়িত ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শের আফিম মিশিয়ে নির্মম শোষণ-নির্যাতনে  আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে। মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরি জনগণকে নিক্ষেপ করেছে যুদ্ধের ময়দানে। এই সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠ্যসূচিতে ব্রহ্মণ্যবাদী কর্মসূচি আনছে। বাস্তবে আজকে ভারতে ভোটের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া বুর্জোয়া গণতন্ত্রের কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। সেই ভোটের রাজনীতিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষকে উসকে দেয়ার জন্য কখনো গরুর মাংস নিষিদ্ধ, কখনো জয় শ্রীরাম স্লোগান, কখনো হিজাব বিতর্ক সামনে আনছে। শুধু তাই নয়, জনগণকে পশ্চাদপদ কুসংস্কারাচ্ছন্ন কথিত হিন্দু আচার-ব্যবহার চালুর কথা বলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গো-মূত্র পানের মাধ্যমে অতিমারি করোনা মুক্ত হওয়ার বিধান। এভাবে বিজেপি জনগণের মৌলিক সমস্যা শ্রেণি সংগ্রামকে আড়াল করে দিল্লীর মসনদ দখলে সক্ষম হয়েছে। আম্বানী-বিড়লা-টাটাসহ সকল পুঁজিবাদী এবং তাদের পাচাটা বুদ্ধিজীবীরা তাদের বানিজ্যিক স্বার্থে এক সময়ে কংগ্রেসকে সমর্থন করতো, এখন তারাই বিজেপিকে সমর্থন করছে। একচেটিয়া ব্যবসা-বানিজ্য-লুটপাট চালাতে পারলে এরা গণতন্ত্র-সামন্ততন্ত্র-পুঁজিতন্ত্র-ধর্মতন্ত্র সবই সমর্থন করে। সম্প্রতি কর্ণাটক রাজ্যে মুসলিম নারীদের হিজাব পরাকে কেন্দ্র করে যে মুসলিম বিরোধী হিংসা উস্কে দেয়া হয়েছে বিজেপি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের মদদে তা অনেকেই জানেন। মুসলিম জনগণ যখন আদালতের শরণাপন্ন হন, তখন আদালত রায় দেয় যে, হিজাব পরা যাবে না, এবং হিজাব ইসলাম ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়। এভাবে ভারতীয় রাষ্ট্র ও আইন-আদালত ধর্মীয় আচার পালনের উপর আক্রমণকে ন্যায্য করছে। এভাবে সমগ্র ভারত জুড়েই মুসলিম জনগণের উপর হিন্দুত্ববাদী আক্রমণ তীব্র হয়ে উঠেছে। কাশ্মীর সমস্যা একটি পুরোনো ও বিস্তারিত ইস্যু। যা কম/বেশি সকলেই জানেন।

এ অবস্থায়, আধা-উপনিবেশিক আধা-সামন্তীয় হিন্দুত্ববাদী সমাজ ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সমাজতন্ত্রের লক্ষে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার জন্য কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা ভারত-বিভক্তির পর, বিশেষত: নকশালবাড়ী উত্থান থেকে মাওবাদীরা  ৫০ বছর যাবত কঠোর শ্রেণি সংগ্রাম পরিচালনা করে যচ্ছেন। অন্ধ্র-বিহার-ঝাড়খন্ড-দন্ডকারণ্য-ছত্তিশগড় -পশ্চিম ঘাটসহ গড়ে তুলেছেন অনেক ঘাঁটি এলাকা। যেখানে চলমান শোষণমূলক সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য বিপ্লবী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় কুসংস্কারের সাথে আধা-সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা কিভাবে গাটছড়া বাঁধা, শাসক বিজেপি কিভাবে তাকে রক্ষা করে চলেছে এবং  মাওবাদীরা তার বিরুদ্ধে সুনির্দ্দিষ্ট বিপ্লবী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে তার একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। সকলেই জানেন হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসীদের ধর্মীয় আবেগকে উসকানোর জন্য বিজেপির একটা কর্মসূচি হচ্ছে গো-রক্ষা আন্দোলন। বিহারের অওরঙ্গাবাদ জেলার ধিবরা থানার বারা গ্রামে বিজেপির নেতৃত্বে এনজিও-দের পরিচালনায় ‘গোরু-জ্ঞান ফাউন্ডেশন’ নামে একটি বিরাট গোশালা গড়ে তোলা হয়। এর ঘোষিত লক্ষ গোরু চুরি বন্ধ করা এবং কসাইদের থেকে গোরুকে রক্ষা করা। এই ফাউন্ডেশন শত শত গোরু সংগ্রহ করে গোশালায় রাখে। কিন্তু পর্যাপ্ত খাদ্য এবং সুচিকিৎসার অভাবে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি করে গরু মারা যায়। তারা মরা গরুগুলিকে পুড়িয়ে ফেলে। জনগণ এতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন।  বিক্ষুদ্ধ হওয়ার আরো কারণ হলো - জনগণ বুঝতে পেরেছিলেন ষড়যন্ত্রমুলকভাবে গো-রক্ষার নামে গঠিত  গোশালাটি নির্মাণ করা হয়েছিল এক ভূস্বামী থেকে জনগণের বাজেয়াপ্ত করা জমি দখল করার জন্য। জনগণ আরো বুঝতে পারেন, এর পিছনে রয়েছে শাসক বিজেপি’র প্রশাসন। এ অবস্থায় জনগণ মাওবাদী পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত ‘গণমুক্তি গেরিলা বাহিনী’(পিএলজিএ)-এর শরণাপন্ন হন। ১৫ আগষ্ট/২১ মাওবাদী গেরিলারা গোশালাটি দখলে নিয়ে সকল গোরুকে মুক্ত করে জনগণের মধ্যে বণ্টন করে দেন এবং বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে গোশালাটি ধ্বংস করে দেন। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে জনগণ উল্লসিত হয়ে বলতে থাকেন, গোরুর প্রকৃত রক্ষক হচ্ছে মাওবাদীরা, আর ফাউন্ডেশেন এবং বিজেপি শাসিত পুলিশ-প্রশাসন হচ্ছে গো-রক্ষার নামে ভূস্বামীদের রক্ষক। জনগণ এমন অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী যেখানে গো-রক্ষার নামে মুসলিম এবং দলিতদের  নির্যাতন করে থাকে। এমনি জটিল পদ্ধতিতে ধর্মকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু মুসলিম-খ্রিষ্টান-দলিত-আদবাসীসহ সকল নিপীড়িত জনগণের উপর ফ্যাসিবাদী নির্যাতন চালিয়ে ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্র টিকিয়ে রেখে মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া ব্যবস্থা পরিচালনা করছে। একমাত্র মাওবাদীদের নেতৃত্বে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদকে ধ্বংস করতে পারে।

আরও খবর
 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র