ইউক্রেন : কোনো সাম্রাজ্যবাদের পক্ষ নয় - প্রয়োজন ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গণযুদ্ধ
আন্দোলন প্রতিবেদন
শনিবার, ৬ আগস্ট ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
সাম্প্রতিক রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, পাশ্চাত্য সভ্যতার তথাকথিত মানবিকতার আড়ালে সাম্রাজ্যবাদী বর্বরতার মুখোশকে নগ্নভাবে উন্মোচন করে দিয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি,’২২ শুরু হওয়া এ যুদ্ধ মূলত ছিল মার্কিনের নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী ন্যাটো জোটের বিরুদ্ধে রাশিয়াসহ অপরাপর সাম্রাজ্যবাদীদের এক ধরনের সরাসরি চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়াকে ঘেরাও করতেই রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বা প্রতিবেশী দেশগুলোকে ন্যাটোতে অন্তর্ভূক্ত করতে চায়। যুদ্ধের এ রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদের থাকে নানাবিধ অর্থনৈতিক স্বার্থ। এবং পরাজিত রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করে দিয়ে নিজ প্রভাব-বলয় শক্তিশালী করা। জেলোনস্কির ন্যাটোতে যোগদানের পিছনে ছিল মার্কিন নীতি গ্রহণ, এবং সরাসরি রাশিয়ার সাথে বৈরিতায় যাওয়া। ফলে আজকের এ যুদ্ধ মার্কিন-রুশ আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা ইউক্রেনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রক্সি ওয়ারের মাধ্যমে ফায়দা হাসিল করছে। প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া একে প্রতিরোধ করার জন্য আগে-ভাগেই ইউক্রেন আক্রমণ করেছে তার হাতছাড়া হওয়া প্রভাবকে পুনরুদ্ধারের জন্য।
দূর্ভিক্ষের শঙ্কা :
ইউক্রেনকে বলা হয় ইউরোপের শস্য ভান্ডার। ইউক্রেন শুধু ইউরোপেরই নয় সারা পৃথিবীর খাদ্যের যোগান দাতা। যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনের বহুসংখ্যক সমুদ্র বন্দর অবরুদ্ধ করে রাখায় ইউক্রেন থেকে বিভিন্ন দেশে খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্য রপ্তানি এক প্রকার বন্ধ। রাশিয়ার উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সার রপ্তানি বন্ধ। যা বিশ্বে ফসল উৎপাদনকে ব্যাহত করছে। খাদ্যাভাব ও ফসল উৎপাদনের এ অনিশ্চয়তা পৃথিবীকে দূর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে পৃথিবীব্যাপী বিদ্যুত, সার, গ্যাস ও পরিবহণ সংকট হচ্ছে। বৈশ্বিক এ সংকট মোকাবেলায় তুরস্ক-জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেন-জাতিসংঘ ও তুরস্ক ২২ জুলাই ইউক্রেন থেকে খাদ্য সরবরাহে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির সফলতা-বিফলতা বৈশ্বিক রাজনীতির অনেক মারপ্যাচের উপর নির্ভর করবে।
জেরবার বিশ্ব অর্থনীতি :
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার উপর নানাবিধ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ অবস্থায় দুর্বল দেশগুলোর পক্ষে রাশিয়ার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক অবরোধের অংশ হিসেবে রাশিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি আমদানি দ্রুতই ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার ব্যাপারে ই.ইউ ভুক্ত রাষ্ট্রগুলো একমত হয়। রাশিয়া বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী দেশ এবং রপ্তানির দিক থেকেও ৩য়। বিশেষত ইউরোপের (জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি প্রভৃতি) বেশিরভাগ দেশ রাশিয়ার তেল-গ্যাসের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। ফলে রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমানোর কথা বললেও যুদ্ধের গতি-প্রকৃতির কারণে এদের অনেকেরই সে অঙ্গিকার খাতা কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। দেশগুলো আশু সংকট মোকাবেলায় অনেকটা নাকে খত দিয়ে হলেও রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস আমদানি অব্যাহত রাখছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম চড়া থাকায় যুদ্ধের ১০০ দিনে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আয়ের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার। যার ৬১ শতাংশই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। তাছাড়া রাশিয়া যে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পাইপলাইন গ্যাস বিক্রি করেছে তারও ৮৫ শতাংশই গেছে ইউরোপে।
জনগণ বিক্ষুব্ধ :
প্রলম্বিত এ যুদ্ধের ফলে ইউরোপজুড়ে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। আমেরিকার হয়ে ইউরোপের এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ও তার কারণে নিজেদের ভোগান্তির ফলে স্ব-স্ব দেশের সরকারের প্রতি জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। দিনকে দিন ইউরোপের জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে আখেরে এ যুদ্ধে আদৌ যদি কেউ লাভবান হয় তা সে আমেরিকান, নয় রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদীরা। আর বলির পাঁঠা হচ্ছেন মূলত ইউক্রেন-ইউরোপ ও সারা বিশ্বের জনগণ। দুর্বল-অনুন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক (খাদ্য পণ্য ও জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি) সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। সেসব দেশেও জন-বিক্ষোভ বাড়ছে। ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কায় জনগণের গণঅভ্যুত্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এ ধরনের দেশগুলোতে জনগণের বিবিধ ধরনের আন্দোলন ও সংগ্রাম নতুন মাত্রায় বিকশিত হওয়ার এক পরিস্থিতি সারা বিশ্বেই তৈরি হচ্ছে। সুতরাং সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব-ব্যবস্থার এই সংকট জনগণের জীবনে সংকট ছাড়াও নবজাগরণ ও বিদ্রোহ গড়ে ওঠার এক সুযোগও সামনে আনছে।
আগ্রাসী আক্রমণ করে যুদ্ধ শুরু করেছে রাশিয়া
পশ্চিমা বিশ্বও যুদ্ধ বন্ধ করতে চায় না
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ বন্ধের জোর দাবি উঠছে। সেখানে “আমেরিকা ও ন্যাটো জোট আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য ইউক্রেনীয় অবস্থানকে শক্তিশালী হওয়ার নসিহত করছে।” প্রকারান্তরে যা কিনা জেলোনস্কিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ারই ইন্ধন।
পশ্চিমা বিশ্ব সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও এ যুদ্ধ কার্যত হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন ও রুশ ব্লকের লড়াই। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে মার্কিনের সামরিক সাহায্যের পরিমাণ ৮.২ বিলিয়ন ডলার (২৪ জুলাই’২২)। এছাড়া ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, স্পেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ¯স্লোভাকিয়াসহ অনেক দেশ কোটি কোটি ডলার সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে ইউক্রেনে। যার অধিকাংশ ব্যয় হচ্ছে ভারী সমরাস্ত্র, যুদ্ধযান ও প্রশিক্ষণ বাবদ। জেলোনস্কিও অব্যহতভাবে সমরাস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে পশ্চিমাদের আহ্বান জানাচ্ছে। মার্কিন সিনেট রাশিয়াকে টার্গেট করে আরও ৪,০০০ কোটি ডলার অনুমোদন দিয়েছে, যার ১,৫০০ কোটি ডলার পাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। বাদ বাকী অর্থ ব্যবহার হবে রাশিয়ার সাথে মার্কিনের সংঘাত সংশ্লিষ্ট ফ্রন্টে। তাছাড়া ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালিসহ ইউরোপের বড় বড় রাষ্ট্রনায়ক ছাড়াও মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ কর্তা-ব্যক্তিরা ইউক্রেন সফর করেছে এবং যুদ্ধে ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
মার্কিনসহ পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক সংকট :
যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী করা এবং অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার উপর নানাবিধ বিধিনিষেধ- এটাই ছিল এ যুদ্ধে মার্কিনী কৌশল। রাশিয়াকে দীর্ঘদিন যুদ্ধে আটকে রাখলে একদিকে রাশান সৈন্যদের প্রাণহানি এবং যুদ্ধের খরচ মেটাতে পুতিন জনগণের সুযোগ-সুবিধা কাটছাট করতে বাধ্য হবে। ফলে দেশের ভেতরকার জনগণের মাঝে যুদ্ধ বিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হয়ে উঠবে। কিন্তু যুদ্ধ ফ্রন্টে রাশিয়ার অগ্রগতি, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সেই অর্থে রাশিয়াকে কাবু করতে না পারা, পুতিনকে যেমন উল্লসিত করেছে; বিপরীতে ন্যাটো জোটকে করে তুলেছে উদ্বিগ্ন। যুদ্ধ যতই এগোচ্ছে জেলোনস্কি সরকার রাষ্ট্রের অনেক কর্তা-ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাশিয়াকে সহযোগিতা ও মদদ দেয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে তাদেরকে বরখাস্ত করছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল ও নিরাপত্তা প্রধানকে একই অপরাধে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সাড়ে ৬০০ এর বেশি ঘটনা নিয়ে ইউক্রেনে এখন তদন্ত চলছে। এ ধরনের ঘটনা জেলোনস্কি সরকারের দুর্বল হয়ে পড়ারই প্রকাশ।
এটা সত্য যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মার্কিনের অস্ত্র ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠলেও মার্কিনের জোটসঙ্গী ন্যাটোভুক্ত বেশিরভাগ সদস্যরা বহুবিধ সমস্যায় আটকে পড়েছে। রাশিয়া সেটাকে কাজে লাগাতে চাইবে। রাশিয়া সেইসব দেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের মধ্য দিয়ে মার্কিন বøকের মধ্যে ভাঙন ঘটাতে চাইবে। রাশিয়ার কৌশল হলো ইউরোপ মার্কিনের প্রভাবমুক্ত থাক।
সামরিক ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ সংকটে :
সামরিক দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শ্রেষ্ঠত্বের জায়গায় থাকলেও ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক নানা কারণে এবং মার্কিন ও ন্যাটো সরাসরি যুদ্ধে না নামার কারণে এ যুদ্ধে রাশিয়া বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। ইউক্রেনের এক রিপোর্ট থেকে বলা হচ্ছে, ‘যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের প্রায় ৮০ শতাংশ সামনের সারির যোদ্ধা নিহত, আহত বা যুদ্ধ থেকে ছিটকে পড়েছে।’রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে এ যুদ্ধে ৬৪ টি দেশের প্রায় ৭ হাজার (৭০০০) ভাড়াটিয়া সৈন্য ও সামরিক বিশেষজ্ঞ ইউক্রেনের পক্ষ হয়ে লড়ছে। যাদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার সৈন্যের মৃত্যু ঘটেছে এবং প্রায় সমপরিমাণ যোদ্ধা যুদ্ধ থেকে ছিটকে গেছেন। যুদ্ধের প্রথম দিকে রাশিয়া কিয়েভ অভিমুখী যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে তারা রুশ জাতিসত্তা অধ্যুষিত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দনবাস (লুহানস্ক, দোনেস্ক) অঞ্চল দখলে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। ইতিমধ্যেই লুহানস্ক ও দনেস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে রাশিয়া ছাড়াও স্বীকৃতি দিয়েছে সিরিয়া ও উত্তর কোরিয়া। আজভ সাগর ও কৃষ্ণ সাগর বরাবর দক্ষিণাঞ্চলের বড় অংশ রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলেরও অনেক শহর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এখন তাদের লক্ষ্য ওডেসার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলে নেওয়া। সুতরাং মার্কিনসহ পশ্চিমা মিডিয়া যুদ্ধ বিজয়ের বড় বড় কথা বললেও সামরিক ক্ষেত্রে তারা সংকটগ্রস্থ হয়ে পড়েছে, কারণ, তারা বিজয়ী হতে পারছে না।
আপাতভাবে এ মুহূর্তে মার্কিনের তুলনায় রাশিয়া যুদ্ধে এগিয়ে থাকলেও সে-ও এক গভীর সংকটে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর সময়ে রাশিয়া যেভাবে দ্রুত বিজয়ের আকাক্সক্ষা দ্বারা চালিত হয়ে রাজধানী কিয়েভ দখলের লক্ষ্যে চালিত হয়েছিল বলে মনে হচ্ছিল, পরে সে সেখান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। রাশানপন্থি অনেক বিশ্লেষকই সেসময় রাশিয়ার ইউক্রেন দখলকে শুধুমাত্র সময়ের (এক সপ্তাহ) ব্যাপার বলেছিল। কিন্তু যুদ্ধ আজ ছয় মাসে পড়েছে। পশ্চিমাদের প্রচার হলো, রাশিয়ান সৈনিকদের প্রাণহানি ৩০ বা ১৫ হাজার। তাদের সেনাসক্ষমতার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়েছে। প্রচুর ট্যাংক ও যুদ্ধ-উপকরণ ধ্বংস হয়েছে। পশ্চিমা প্রচারকে সত্য ধরলে রাশিয়ার বর্তমান বিজয়াভিযানের ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। তাসত্তে¡ও এটা পরিষ্কার যে, ইতিমধ্যে এ যুদ্ধে রাশিয়ার ক্ষতিও কম হয় নি। প্রায় দুই মাস আগেই রাশিয়া নিজেদের প্রায় দুই হাজার সেনার নিহত হবার কথা স্বীকার করেছিল, যা এতোদিনে আরো অনেক বেড়েছে নিশ্চয়ই। অনেক জেনারেলের মৃত্যু সংবাদও শোনা যাচ্ছে। জ্বালানি ও ইউক্রেনের খাদ্য শস্যকে পুঁজি করে পশ্চিমাদের বেশ পরিমাণে ঘায়েল করলেও প্রলম্বিত এ যুদ্ধ ব্যয়, রাশিয়াকে গুণতে হচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। যুদ্ধ রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। খোদ রাশিয়ার জনগণকেও সে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সর্বোপরি রাশিয়া দ্রুতই এ যুদ্ধ থেকে উঠে যেতে পারবে না। একটি অন্যায় পররাজ্যগ্রাসী যুদ্ধে আজকের বিশ্বে শেষ পর্যন্ত উপকৃত হওয়ার ঘটনা প্রায় বিরল। তদুপরি এ যুদ্ধ বিকশিত হয়ে সীমিত পারমাণবিক যুদ্ধেও গড়াতে পারে, এমন কি সর্বাত্মক এক বিশ্বযুদ্ধে পর্যন্ত।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের উভয় পক্ষই এ যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন সংকটে জড়িয়ে পড়েছে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব-ব্যবস্থাই নতুন এক সংকটে ঢুকেছে, যার পরিণতি কী হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না
যুদ্ধ ও পরিস্থিতির গতি-প্রকৃতি :
ইউক্রেন যুদ্ধ আসলে দুই বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর মধ্যকার দ্বন্দ্বের ও শক্তি-পরীক্ষার মহড়া। তাই, এটা সহজে মীমাংসা যোগ্য নয়।
হতে পারে যে, রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলকে স্বাধীন করে যুদ্ধ-বিরতি দিল। কিন্তু পশ্চিম ইউক্রেন যদি পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায় তবে তারা এ দখলদারী মানবে না, এবং কোনো না কোনো রূপে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। অন্তত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সেটাই চাইবে, যাতে রাশিয়াকে যুদ্ধে আটকে রেখে দুর্বল করা যায়। অন্যদিকে রাশিয়া চাইবে পশ্চিম ইউক্রেনে তার অনুগত একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে। সেটা ইউক্রেনের শাসকদের মধ্যে ভাঙনকে কাজে লাগিয়ে হোক বা যুদ্ধ-জয়ের মাধ্যমে হোক। যুদ্ধের এমন প্রক্রিয়া আজকের বিশ্ব-পরিস্থিতিতে থেমে থাকার নয়। প্রভাব-নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে তোলার জন্য যখন যুদ্ধকে ডেকে আনা হয় তখন সেটা চলতেই থাকবে।
এখন দেখার বিষয় যে, সেটা দুই বøকের মধ্যে সীমিত হলেও পারমাণবিক যুদ্ধে বিকশিত হয় কিনা। অথবা এমন কি সার্বিক পারমাণবিক যুদ্ধে। এসবকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
অন্যদিকে এই উত্তেজনা শুধু ইউক্রেনে আটকে থাকবে সেটাও বলা যাবে না। ইতিমধ্যেই তাইওয়ানকে নিয়ে চীন-মার্কিন গরমা-গরমি আরো বেড়ে গেছে। চীন আমেরিকাকে আগুন নিয়ে না খেলতে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে।
সুতরাং, বিশ্ব-জনগণ যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তির জন্য যতই হা-পিত্যেশ করুন না কেন, সেটা আজকের বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদীরা করতে দেবে না। বিশ্ব দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনা, যুদ্ধ, সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যসংকট, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট, মৃত্যু, ধ্বংসযজ্ঞ, অনাহার, শরণার্থী সমস্যা ইত্যাদির বিভীষিকা থেকে মুক্তি সহসাই পাবে না।
কিন্তু জনগণ নিশ্চয়ই বসে থাকবেন না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনগণ কোনো না কোনো রূপে এ ব্যবস্থার থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলন করবেন। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্ব›দ্ব ও তাদের মধ্যে অন্যায় যুদ্ধ তাদেরকে দুর্বল করে দিয়ে জনগণের মুক্তি-আন্দোলনের পথ সহজ করবে। এটা একদিকে জনগণের মুক্তির নতুন দিগন্ত খুলবে, অন্যদিকে তাকে দমনের জন্য শাসকদের পক্ষে বিভিন্ন রূপের ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব ঘটবে। যার আলামত আজ দেখা যাচ্ছে ভারতে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ, বাংলাদেশে উগ্রবাঙালি জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদÑ ইত্যাদির মাধ্যমে।
সাম্রাজ্যবাদের নতুন মেরুকরণ :
যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি বা জয়-পরাজয় বৈশ্বিক রাজনীতিতে আগামী দিনে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসে অন্যতম নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে বাধ্য। যুদ্ধ যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী মেরুকরণ ততই জোরালো/শাণিত হচ্ছে। খোদ মার্কিন বøকের ভিতর বন্ধন আলগা হচ্ছে। খুব কাছাকাছি সময়ে মার্কিন ঘনিষ্ঠ, কট্টরভাবে রাশিয়া ও পুতিন বিরোধী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগির পতন ঘটেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপকে ব্যবহার করে মার্কিনের যে নিষেধাজ্ঞা তার ফলে সৃষ্ট সংকট ইউরোপকে আঘাত করায় এগুলো ঘটছে। গ্রিসও রাশিয়ার বিরুদ্ধে শিপিং নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিরোধিতা করছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আজ ইউরোপের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠেছে। মার্কিনের নেতৃত্বে যে মেরুকরণ ছিল, তা বহুধা ধারায় বিভক্তির সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
অন্যদিকে মার্কিন বিরোধী দেশগুলো ক্রমেই কাছে আসছে। মার্কিন প্রতিপক্ষ চীন সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও খোলামেলাভাবে রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে। মার্কিন-মিত্র সৌদি আরবের তেলের উপর নির্ভরশীল চীন এখন রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ঝুঁকে পড়ছে, কারণ রাশিয়া সস্তা দামে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে। রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে চীন নজিরবিহীন-অনুচিত বলেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিপক্ষে জাতিসংঘে আনা প্রস্তাবের বিপক্ষে সে ভোট দিয়েছে। প্রথমবারের মতো চীন ও রাশিয়াকে যুক্ত করতে সড়ক সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। চীন-রাশিয়া ছাড়াও এ বলয়ে আছে ইরান, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, নিকারাগুয়াসহ অনেক দেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নির্বাচনের পর ব্রাজিল এর সাথে যুক্ত হলে মার্কিন-বøকের সংকট আরো বৃদ্ধি পাবে। এসবই আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বকে আরো প্রকট করে তুলবে।
শেষকথা :
ইউক্রেনের ভূখণ্ড পূর্বাবস্থায় ফেরা প্রায় অসম্ভব। বিভক্ত ইউক্রেনের কোনো অংশে হয়তো-বা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে, তো অপরাংশে মার্কিনের। সাম্রাজ্যবাদের এই নগ্ন থাবা থেকে ইউক্রেনের জনগণের মুক্তির জন্য দরকার সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদের বিপ্লবী রাজনীতি। সমগ্র ইউক্রেনের উপর চাপিয়ে দেয়া সাম্রাজ্যবাদের অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা দরকার জনগণের ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ, তথা গণযুদ্ধ। সমাজতন্ত্রের কর্মসূচির ভিত্তিতে পরিচালিত সত্যিকার কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত সেই যুদ্ধই পারে সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দেশীয় অনুচর পুঁজিপতি শাসকশ্রেণির কবর রচনা করতে। দূরহ হলেও ইউক্রেনের জনগণকে সে পথেই হাঁটতে হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ইউক্রেন : কোনো সাম্রাজ্যবাদের পক্ষ নয় - প্রয়োজন ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গণযুদ্ধ
সাম্প্রতিক রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, পাশ্চাত্য সভ্যতার তথাকথিত মানবিকতার আড়ালে সাম্রাজ্যবাদী বর্বরতার মুখোশকে নগ্নভাবে উন্মোচন করে দিয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি,’২২ শুরু হওয়া এ যুদ্ধ মূলত ছিল মার্কিনের নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী ন্যাটো জোটের বিরুদ্ধে রাশিয়াসহ অপরাপর সাম্রাজ্যবাদীদের এক ধরনের সরাসরি চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়াকে ঘেরাও করতেই রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বা প্রতিবেশী দেশগুলোকে ন্যাটোতে অন্তর্ভূক্ত করতে চায়। যুদ্ধের এ রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদের থাকে নানাবিধ অর্থনৈতিক স্বার্থ। এবং পরাজিত রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করে দিয়ে নিজ প্রভাব-বলয় শক্তিশালী করা। জেলোনস্কির ন্যাটোতে যোগদানের পিছনে ছিল মার্কিন নীতি গ্রহণ, এবং সরাসরি রাশিয়ার সাথে বৈরিতায় যাওয়া। ফলে আজকের এ যুদ্ধ মার্কিন-রুশ আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা ইউক্রেনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রক্সি ওয়ারের মাধ্যমে ফায়দা হাসিল করছে। প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া একে প্রতিরোধ করার জন্য আগে-ভাগেই ইউক্রেন আক্রমণ করেছে তার হাতছাড়া হওয়া প্রভাবকে পুনরুদ্ধারের জন্য।
দূর্ভিক্ষের শঙ্কা :
ইউক্রেনকে বলা হয় ইউরোপের শস্য ভান্ডার। ইউক্রেন শুধু ইউরোপেরই নয় সারা পৃথিবীর খাদ্যের যোগান দাতা। যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেনের বহুসংখ্যক সমুদ্র বন্দর অবরুদ্ধ করে রাখায় ইউক্রেন থেকে বিভিন্ন দেশে খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্য রপ্তানি এক প্রকার বন্ধ। রাশিয়ার উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সার রপ্তানি বন্ধ। যা বিশ্বে ফসল উৎপাদনকে ব্যাহত করছে। খাদ্যাভাব ও ফসল উৎপাদনের এ অনিশ্চয়তা পৃথিবীকে দূর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে পৃথিবীব্যাপী বিদ্যুত, সার, গ্যাস ও পরিবহণ সংকট হচ্ছে। বৈশ্বিক এ সংকট মোকাবেলায় তুরস্ক-জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেন-জাতিসংঘ ও তুরস্ক ২২ জুলাই ইউক্রেন থেকে খাদ্য সরবরাহে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির সফলতা-বিফলতা বৈশ্বিক রাজনীতির অনেক মারপ্যাচের উপর নির্ভর করবে।
জেরবার বিশ্ব অর্থনীতি :
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার উপর নানাবিধ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ অবস্থায় দুর্বল দেশগুলোর পক্ষে রাশিয়ার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক অবরোধের অংশ হিসেবে রাশিয়া থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি আমদানি দ্রুতই ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার ব্যাপারে ই.ইউ ভুক্ত রাষ্ট্রগুলো একমত হয়। রাশিয়া বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী দেশ এবং রপ্তানির দিক থেকেও ৩য়। বিশেষত ইউরোপের (জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি প্রভৃতি) বেশিরভাগ দেশ রাশিয়ার তেল-গ্যাসের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। ফলে রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমানোর কথা বললেও যুদ্ধের গতি-প্রকৃতির কারণে এদের অনেকেরই সে অঙ্গিকার খাতা কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। দেশগুলো আশু সংকট মোকাবেলায় অনেকটা নাকে খত দিয়ে হলেও রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস আমদানি অব্যাহত রাখছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম চড়া থাকায় যুদ্ধের ১০০ দিনে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আয়ের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার। যার ৬১ শতাংশই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। তাছাড়া রাশিয়া যে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পাইপলাইন গ্যাস বিক্রি করেছে তারও ৮৫ শতাংশই গেছে ইউরোপে।
জনগণ বিক্ষুব্ধ :
প্রলম্বিত এ যুদ্ধের ফলে ইউরোপজুড়ে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। আমেরিকার হয়ে ইউরোপের এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ও তার কারণে নিজেদের ভোগান্তির ফলে স্ব-স্ব দেশের সরকারের প্রতি জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। দিনকে দিন ইউরোপের জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে আখেরে এ যুদ্ধে আদৌ যদি কেউ লাভবান হয় তা সে আমেরিকান, নয় রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদীরা। আর বলির পাঁঠা হচ্ছেন মূলত ইউক্রেন-ইউরোপ ও সারা বিশ্বের জনগণ। দুর্বল-অনুন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক (খাদ্য পণ্য ও জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি) সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। সেসব দেশেও জন-বিক্ষোভ বাড়ছে। ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কায় জনগণের গণঅভ্যুত্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এ ধরনের দেশগুলোতে জনগণের বিবিধ ধরনের আন্দোলন ও সংগ্রাম নতুন মাত্রায় বিকশিত হওয়ার এক পরিস্থিতি সারা বিশ্বেই তৈরি হচ্ছে। সুতরাং সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব-ব্যবস্থার এই সংকট জনগণের জীবনে সংকট ছাড়াও নবজাগরণ ও বিদ্রোহ গড়ে ওঠার এক সুযোগও সামনে আনছে।
আগ্রাসী আক্রমণ করে যুদ্ধ শুরু করেছে রাশিয়া
পশ্চিমা বিশ্বও যুদ্ধ বন্ধ করতে চায় না
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ বন্ধের জোর দাবি উঠছে। সেখানে “আমেরিকা ও ন্যাটো জোট আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য ইউক্রেনীয় অবস্থানকে শক্তিশালী হওয়ার নসিহত করছে।” প্রকারান্তরে যা কিনা জেলোনস্কিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ারই ইন্ধন।
পশ্চিমা বিশ্ব সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও এ যুদ্ধ কার্যত হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন ও রুশ ব্লকের লড়াই। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে মার্কিনের সামরিক সাহায্যের পরিমাণ ৮.২ বিলিয়ন ডলার (২৪ জুলাই’২২)। এছাড়া ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, স্পেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ¯স্লোভাকিয়াসহ অনেক দেশ কোটি কোটি ডলার সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে ইউক্রেনে। যার অধিকাংশ ব্যয় হচ্ছে ভারী সমরাস্ত্র, যুদ্ধযান ও প্রশিক্ষণ বাবদ। জেলোনস্কিও অব্যহতভাবে সমরাস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে পশ্চিমাদের আহ্বান জানাচ্ছে। মার্কিন সিনেট রাশিয়াকে টার্গেট করে আরও ৪,০০০ কোটি ডলার অনুমোদন দিয়েছে, যার ১,৫০০ কোটি ডলার পাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। বাদ বাকী অর্থ ব্যবহার হবে রাশিয়ার সাথে মার্কিনের সংঘাত সংশ্লিষ্ট ফ্রন্টে। তাছাড়া ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালিসহ ইউরোপের বড় বড় রাষ্ট্রনায়ক ছাড়াও মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ কর্তা-ব্যক্তিরা ইউক্রেন সফর করেছে এবং যুদ্ধে ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
মার্কিনসহ পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক সংকট :
যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী করা এবং অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার উপর নানাবিধ বিধিনিষেধ- এটাই ছিল এ যুদ্ধে মার্কিনী কৌশল। রাশিয়াকে দীর্ঘদিন যুদ্ধে আটকে রাখলে একদিকে রাশান সৈন্যদের প্রাণহানি এবং যুদ্ধের খরচ মেটাতে পুতিন জনগণের সুযোগ-সুবিধা কাটছাট করতে বাধ্য হবে। ফলে দেশের ভেতরকার জনগণের মাঝে যুদ্ধ বিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হয়ে উঠবে। কিন্তু যুদ্ধ ফ্রন্টে রাশিয়ার অগ্রগতি, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সেই অর্থে রাশিয়াকে কাবু করতে না পারা, পুতিনকে যেমন উল্লসিত করেছে; বিপরীতে ন্যাটো জোটকে করে তুলেছে উদ্বিগ্ন। যুদ্ধ যতই এগোচ্ছে জেলোনস্কি সরকার রাষ্ট্রের অনেক কর্তা-ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাশিয়াকে সহযোগিতা ও মদদ দেয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে তাদেরকে বরখাস্ত করছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল ও নিরাপত্তা প্রধানকে একই অপরাধে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সাড়ে ৬০০ এর বেশি ঘটনা নিয়ে ইউক্রেনে এখন তদন্ত চলছে। এ ধরনের ঘটনা জেলোনস্কি সরকারের দুর্বল হয়ে পড়ারই প্রকাশ।
এটা সত্য যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মার্কিনের অস্ত্র ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠলেও মার্কিনের জোটসঙ্গী ন্যাটোভুক্ত বেশিরভাগ সদস্যরা বহুবিধ সমস্যায় আটকে পড়েছে। রাশিয়া সেটাকে কাজে লাগাতে চাইবে। রাশিয়া সেইসব দেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের মধ্য দিয়ে মার্কিন বøকের মধ্যে ভাঙন ঘটাতে চাইবে। রাশিয়ার কৌশল হলো ইউরোপ মার্কিনের প্রভাবমুক্ত থাক।
সামরিক ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ সংকটে :
সামরিক দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শ্রেষ্ঠত্বের জায়গায় থাকলেও ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক নানা কারণে এবং মার্কিন ও ন্যাটো সরাসরি যুদ্ধে না নামার কারণে এ যুদ্ধে রাশিয়া বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। ইউক্রেনের এক রিপোর্ট থেকে বলা হচ্ছে, ‘যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের প্রায় ৮০ শতাংশ সামনের সারির যোদ্ধা নিহত, আহত বা যুদ্ধ থেকে ছিটকে পড়েছে।’রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে এ যুদ্ধে ৬৪ টি দেশের প্রায় ৭ হাজার (৭০০০) ভাড়াটিয়া সৈন্য ও সামরিক বিশেষজ্ঞ ইউক্রেনের পক্ষ হয়ে লড়ছে। যাদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার সৈন্যের মৃত্যু ঘটেছে এবং প্রায় সমপরিমাণ যোদ্ধা যুদ্ধ থেকে ছিটকে গেছেন। যুদ্ধের প্রথম দিকে রাশিয়া কিয়েভ অভিমুখী যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে তারা রুশ জাতিসত্তা অধ্যুষিত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দনবাস (লুহানস্ক, দোনেস্ক) অঞ্চল দখলে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। ইতিমধ্যেই লুহানস্ক ও দনেস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে রাশিয়া ছাড়াও স্বীকৃতি দিয়েছে সিরিয়া ও উত্তর কোরিয়া। আজভ সাগর ও কৃষ্ণ সাগর বরাবর দক্ষিণাঞ্চলের বড় অংশ রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলেরও অনেক শহর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এখন তাদের লক্ষ্য ওডেসার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলে নেওয়া। সুতরাং মার্কিনসহ পশ্চিমা মিডিয়া যুদ্ধ বিজয়ের বড় বড় কথা বললেও সামরিক ক্ষেত্রে তারা সংকটগ্রস্থ হয়ে পড়েছে, কারণ, তারা বিজয়ী হতে পারছে না।
আপাতভাবে এ মুহূর্তে মার্কিনের তুলনায় রাশিয়া যুদ্ধে এগিয়ে থাকলেও সে-ও এক গভীর সংকটে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর সময়ে রাশিয়া যেভাবে দ্রুত বিজয়ের আকাক্সক্ষা দ্বারা চালিত হয়ে রাজধানী কিয়েভ দখলের লক্ষ্যে চালিত হয়েছিল বলে মনে হচ্ছিল, পরে সে সেখান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। রাশানপন্থি অনেক বিশ্লেষকই সেসময় রাশিয়ার ইউক্রেন দখলকে শুধুমাত্র সময়ের (এক সপ্তাহ) ব্যাপার বলেছিল। কিন্তু যুদ্ধ আজ ছয় মাসে পড়েছে। পশ্চিমাদের প্রচার হলো, রাশিয়ান সৈনিকদের প্রাণহানি ৩০ বা ১৫ হাজার। তাদের সেনাসক্ষমতার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়েছে। প্রচুর ট্যাংক ও যুদ্ধ-উপকরণ ধ্বংস হয়েছে। পশ্চিমা প্রচারকে সত্য ধরলে রাশিয়ার বর্তমান বিজয়াভিযানের ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। তাসত্তে¡ও এটা পরিষ্কার যে, ইতিমধ্যে এ যুদ্ধে রাশিয়ার ক্ষতিও কম হয় নি। প্রায় দুই মাস আগেই রাশিয়া নিজেদের প্রায় দুই হাজার সেনার নিহত হবার কথা স্বীকার করেছিল, যা এতোদিনে আরো অনেক বেড়েছে নিশ্চয়ই। অনেক জেনারেলের মৃত্যু সংবাদও শোনা যাচ্ছে। জ্বালানি ও ইউক্রেনের খাদ্য শস্যকে পুঁজি করে পশ্চিমাদের বেশ পরিমাণে ঘায়েল করলেও প্রলম্বিত এ যুদ্ধ ব্যয়, রাশিয়াকে গুণতে হচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। যুদ্ধ রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। খোদ রাশিয়ার জনগণকেও সে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সর্বোপরি রাশিয়া দ্রুতই এ যুদ্ধ থেকে উঠে যেতে পারবে না। একটি অন্যায় পররাজ্যগ্রাসী যুদ্ধে আজকের বিশ্বে শেষ পর্যন্ত উপকৃত হওয়ার ঘটনা প্রায় বিরল। তদুপরি এ যুদ্ধ বিকশিত হয়ে সীমিত পারমাণবিক যুদ্ধেও গড়াতে পারে, এমন কি সর্বাত্মক এক বিশ্বযুদ্ধে পর্যন্ত।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের উভয় পক্ষই এ যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন সংকটে জড়িয়ে পড়েছে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব-ব্যবস্থাই নতুন এক সংকটে ঢুকেছে, যার পরিণতি কী হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না
যুদ্ধ ও পরিস্থিতির গতি-প্রকৃতি :
ইউক্রেন যুদ্ধ আসলে দুই বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর মধ্যকার দ্বন্দ্বের ও শক্তি-পরীক্ষার মহড়া। তাই, এটা সহজে মীমাংসা যোগ্য নয়।
হতে পারে যে, রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলকে স্বাধীন করে যুদ্ধ-বিরতি দিল। কিন্তু পশ্চিম ইউক্রেন যদি পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায় তবে তারা এ দখলদারী মানবে না, এবং কোনো না কোনো রূপে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। অন্তত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সেটাই চাইবে, যাতে রাশিয়াকে যুদ্ধে আটকে রেখে দুর্বল করা যায়। অন্যদিকে রাশিয়া চাইবে পশ্চিম ইউক্রেনে তার অনুগত একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে। সেটা ইউক্রেনের শাসকদের মধ্যে ভাঙনকে কাজে লাগিয়ে হোক বা যুদ্ধ-জয়ের মাধ্যমে হোক। যুদ্ধের এমন প্রক্রিয়া আজকের বিশ্ব-পরিস্থিতিতে থেমে থাকার নয়। প্রভাব-নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে তোলার জন্য যখন যুদ্ধকে ডেকে আনা হয় তখন সেটা চলতেই থাকবে।
এখন দেখার বিষয় যে, সেটা দুই বøকের মধ্যে সীমিত হলেও পারমাণবিক যুদ্ধে বিকশিত হয় কিনা। অথবা এমন কি সার্বিক পারমাণবিক যুদ্ধে। এসবকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
অন্যদিকে এই উত্তেজনা শুধু ইউক্রেনে আটকে থাকবে সেটাও বলা যাবে না। ইতিমধ্যেই তাইওয়ানকে নিয়ে চীন-মার্কিন গরমা-গরমি আরো বেড়ে গেছে। চীন আমেরিকাকে আগুন নিয়ে না খেলতে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে।
সুতরাং, বিশ্ব-জনগণ যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তির জন্য যতই হা-পিত্যেশ করুন না কেন, সেটা আজকের বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদীরা করতে দেবে না। বিশ্ব দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনা, যুদ্ধ, সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যসংকট, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট, মৃত্যু, ধ্বংসযজ্ঞ, অনাহার, শরণার্থী সমস্যা ইত্যাদির বিভীষিকা থেকে মুক্তি সহসাই পাবে না।
কিন্তু জনগণ নিশ্চয়ই বসে থাকবেন না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনগণ কোনো না কোনো রূপে এ ব্যবস্থার থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলন করবেন। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্ব›দ্ব ও তাদের মধ্যে অন্যায় যুদ্ধ তাদেরকে দুর্বল করে দিয়ে জনগণের মুক্তি-আন্দোলনের পথ সহজ করবে। এটা একদিকে জনগণের মুক্তির নতুন দিগন্ত খুলবে, অন্যদিকে তাকে দমনের জন্য শাসকদের পক্ষে বিভিন্ন রূপের ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব ঘটবে। যার আলামত আজ দেখা যাচ্ছে ভারতে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ, বাংলাদেশে উগ্রবাঙালি জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদÑ ইত্যাদির মাধ্যমে।
সাম্রাজ্যবাদের নতুন মেরুকরণ :
যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি বা জয়-পরাজয় বৈশ্বিক রাজনীতিতে আগামী দিনে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসে অন্যতম নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে বাধ্য। যুদ্ধ যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী মেরুকরণ ততই জোরালো/শাণিত হচ্ছে। খোদ মার্কিন বøকের ভিতর বন্ধন আলগা হচ্ছে। খুব কাছাকাছি সময়ে মার্কিন ঘনিষ্ঠ, কট্টরভাবে রাশিয়া ও পুতিন বিরোধী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগির পতন ঘটেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপকে ব্যবহার করে মার্কিনের যে নিষেধাজ্ঞা তার ফলে সৃষ্ট সংকট ইউরোপকে আঘাত করায় এগুলো ঘটছে। গ্রিসও রাশিয়ার বিরুদ্ধে শিপিং নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিরোধিতা করছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আজ ইউরোপের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠেছে। মার্কিনের নেতৃত্বে যে মেরুকরণ ছিল, তা বহুধা ধারায় বিভক্তির সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
অন্যদিকে মার্কিন বিরোধী দেশগুলো ক্রমেই কাছে আসছে। মার্কিন প্রতিপক্ষ চীন সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও খোলামেলাভাবে রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে। মার্কিন-মিত্র সৌদি আরবের তেলের উপর নির্ভরশীল চীন এখন রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ঝুঁকে পড়ছে, কারণ রাশিয়া সস্তা দামে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করছে। রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে চীন নজিরবিহীন-অনুচিত বলেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিপক্ষে জাতিসংঘে আনা প্রস্তাবের বিপক্ষে সে ভোট দিয়েছে। প্রথমবারের মতো চীন ও রাশিয়াকে যুক্ত করতে সড়ক সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। চীন-রাশিয়া ছাড়াও এ বলয়ে আছে ইরান, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, নিকারাগুয়াসহ অনেক দেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নির্বাচনের পর ব্রাজিল এর সাথে যুক্ত হলে মার্কিন-বøকের সংকট আরো বৃদ্ধি পাবে। এসবই আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বকে আরো প্রকট করে তুলবে।
শেষকথা :
ইউক্রেনের ভূখণ্ড পূর্বাবস্থায় ফেরা প্রায় অসম্ভব। বিভক্ত ইউক্রেনের কোনো অংশে হয়তো-বা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে, তো অপরাংশে মার্কিনের। সাম্রাজ্যবাদের এই নগ্ন থাবা থেকে ইউক্রেনের জনগণের মুক্তির জন্য দরকার সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদের বিপ্লবী রাজনীতি। সমগ্র ইউক্রেনের উপর চাপিয়ে দেয়া সাম্রাজ্যবাদের অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা দরকার জনগণের ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ, তথা গণযুদ্ধ। সমাজতন্ত্রের কর্মসূচির ভিত্তিতে পরিচালিত সত্যিকার কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত সেই যুদ্ধই পারে সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দেশীয় অনুচর পুঁজিপতি শাসকশ্রেণির কবর রচনা করতে। দূরহ হলেও ইউক্রেনের জনগণকে সে পথেই হাঁটতে হবে।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র