বুয়েটের ছাত্র আন্দোলন
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের কর্মীরা রাতভর বর্বর নির্যাতন করে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখন সরকারি ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ হয়ে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি তোলেন। তখন বুয়েট কর্তৃপক্ষ বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দেয়। ফলে বিগত ৪ বছর প্রকাশ্যে তা বন্ধ ছিল। কিন্তু ২৮ মার্চ ২০২৪ রাত ১টার পর ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বদের সমাগম এবং বুয়েটের কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে শোডাউন ও প্রোগ্রাম করে বুয়েটের ছাত্রদের আবারও ভীত-সন্ত্রস্ত করে। ফলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা-ক্লাস বর্জন করে পুনরায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলেন। এই আন্দোলন গোটা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী রাজনীতির বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়।
কিন্তু বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলে বুয়েট শিক্ষার্থীরা রাজনীতির ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বাতিল করে দিচ্ছেন। এবং বর্তমানেও তার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা থেকে সরে যাচ্ছেন। এটা হয়েছে তাদের রাজনীতি-অসচেতনতার কারণে। একটি সঠিক প্রয়োজন থেকে শুরু হলেও এটা আসলে শাসকশ্রেণির বিরাজনীতিকরণের প্রতিক্রিয়াশীল কর্মসূচির পক্ষে চলে গেছে। এবং শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগের রাজনীতিকে পুনরায় পথ করে দিয়েছে। প্রয়োজন ছিল ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা। কিন্তু সেটা তারা না করে মাথা ব্যথার জন্য মাথাটাকেই কেটে ফেলার পথ নিয়েছেন।
ছাত্র রাজনীতি সমস্যা নয়। যেমনটি সমস্যা নয় শ্রমিক রাজনীতি বা সাধারণভাবে রাজনীতি। সমস্যা হচ্ছে শাসকশ্রেণি ও হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনীতি। রাজনীতি ভালো বা মন্দ হতে পারে। রাজনীতি বিভিন্ন শ্রেণি বা গোষ্ঠীকে সেবা করে। ছাত্ররা কোন পক্ষে থাকবেন তার উপর সে ছাত্র রাজনীতি ভালো না মন্দ।
বিগত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রযন্ত্রের ফ্যাসিকরণ, ভোগ-সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব, দলীয়করণ, নারী-নিপীড়ন, লুটপাটের রাজনীতি করে চলেছে আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ। আবরার ফাহাদ, হাফিজ মোল্লা, ফুলপরী খাতুনের, ইডেন কলেজের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাসমূহ সহ এরকম হাজারও ঘটনা রয়েছে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের সোনার ছেলেদের। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের জন্য তারা তৈরি করে রেখেছে টর্চার সেল, গণরুম-গেস্ট রুম ইত্যাদি। হলগুলোতেও রয়েছে ছাত্রলীগের একাধিপত্য। এসবের বিরোধিতা করলে সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ আরও বিভিন্ন কালা-কানুনে জনগণের বাকরুদ্ধ করতে দমন-নির্যাতন চালায়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের দৌরাত্ম্য এত বেড়েছে তার কারণ তারা হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনের মত ন্যাক্কারজনক কাজ করেও ফ্যাসিবাদী সরকারের বদৌলতে পার পেয়ে যাচ্ছে। কারণ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতি একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
তাই ছাত্রলীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বন্ধের দাবি না তুলে, সকল ছাত্র রাজনীতি বাতিলের দাবি তোলা কোনো সুবিবেচিত সিদ্ধান্ত নয়। আসল সমস্যা সমাধানে সংগ্রাম না করে ভুল জায়গায় সংগ্রাম করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিরাজনীতিকরণের বিষবাষ্প যারা ছড়াচ্ছে তাদের পথই সুগম করে দেয়া হবে। এ কারণেই আওয়ামী মন্ত্রীরা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের শিবির-জঙ্গি তকমা দিয়ে এই আন্দোলনের মোড় ভিন্ন দিকে ঘুরানোর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করেছে। সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি তথা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির চর্চার জন্য সকল অসুস্থ ধারার রাজনীতি এবং বর্তমানে ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ হচ্ছে বাধা।
তাই শিক্ষার্থীদের কর্তব্য হচ্ছে– শিক্ষাঙ্গনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী, উগ্র জাতীয়তাবাদী, ধর্মবাদীসহ সকল প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি তথা অসুস্থ ধারার রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলা। এবং একই সাথে বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার অবসান এবং শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত সহ ব্যাপক জনগণের অস্থায়ী গণ সরকার প্রতিষ্ঠা হলেই শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগসহ অসুস্থ ধারার রাজনীতি বন্ধ হবে। শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলনে সংগঠিত হয়ে ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের অসমাপ্ত কাজটিকে সমাপ্ত করতে হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বুয়েটের ছাত্র আন্দোলন
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের কর্মীরা রাতভর বর্বর নির্যাতন করে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখন সরকারি ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ হয়ে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি তোলেন। তখন বুয়েট কর্তৃপক্ষ বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দেয়। ফলে বিগত ৪ বছর প্রকাশ্যে তা বন্ধ ছিল। কিন্তু ২৮ মার্চ ২০২৪ রাত ১টার পর ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বদের সমাগম এবং বুয়েটের কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে শোডাউন ও প্রোগ্রাম করে বুয়েটের ছাত্রদের আবারও ভীত-সন্ত্রস্ত করে। ফলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা-ক্লাস বর্জন করে পুনরায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলেন। এই আন্দোলন গোটা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী রাজনীতির বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়।
কিন্তু বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলে বুয়েট শিক্ষার্থীরা রাজনীতির ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বাতিল করে দিচ্ছেন। এবং বর্তমানেও তার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা থেকে সরে যাচ্ছেন। এটা হয়েছে তাদের রাজনীতি-অসচেতনতার কারণে। একটি সঠিক প্রয়োজন থেকে শুরু হলেও এটা আসলে শাসকশ্রেণির বিরাজনীতিকরণের প্রতিক্রিয়াশীল কর্মসূচির পক্ষে চলে গেছে। এবং শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগের রাজনীতিকে পুনরায় পথ করে দিয়েছে। প্রয়োজন ছিল ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা। কিন্তু সেটা তারা না করে মাথা ব্যথার জন্য মাথাটাকেই কেটে ফেলার পথ নিয়েছেন।
ছাত্র রাজনীতি সমস্যা নয়। যেমনটি সমস্যা নয় শ্রমিক রাজনীতি বা সাধারণভাবে রাজনীতি। সমস্যা হচ্ছে শাসকশ্রেণি ও হাসিনা-আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাজনীতি। রাজনীতি ভালো বা মন্দ হতে পারে। রাজনীতি বিভিন্ন শ্রেণি বা গোষ্ঠীকে সেবা করে। ছাত্ররা কোন পক্ষে থাকবেন তার উপর সে ছাত্র রাজনীতি ভালো না মন্দ।
বিগত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রযন্ত্রের ফ্যাসিকরণ, ভোগ-সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব, দলীয়করণ, নারী-নিপীড়ন, লুটপাটের রাজনীতি করে চলেছে আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ। আবরার ফাহাদ, হাফিজ মোল্লা, ফুলপরী খাতুনের, ইডেন কলেজের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাসমূহ সহ এরকম হাজারও ঘটনা রয়েছে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের সোনার ছেলেদের। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের জন্য তারা তৈরি করে রেখেছে টর্চার সেল, গণরুম-গেস্ট রুম ইত্যাদি। হলগুলোতেও রয়েছে ছাত্রলীগের একাধিপত্য। এসবের বিরোধিতা করলে সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ আরও বিভিন্ন কালা-কানুনে জনগণের বাকরুদ্ধ করতে দমন-নির্যাতন চালায়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের দৌরাত্ম্য এত বেড়েছে তার কারণ তারা হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনের মত ন্যাক্কারজনক কাজ করেও ফ্যাসিবাদী সরকারের বদৌলতে পার পেয়ে যাচ্ছে। কারণ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতি একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
তাই ছাত্রলীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বন্ধের দাবি না তুলে, সকল ছাত্র রাজনীতি বাতিলের দাবি তোলা কোনো সুবিবেচিত সিদ্ধান্ত নয়। আসল সমস্যা সমাধানে সংগ্রাম না করে ভুল জায়গায় সংগ্রাম করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিরাজনীতিকরণের বিষবাষ্প যারা ছড়াচ্ছে তাদের পথই সুগম করে দেয়া হবে। এ কারণেই আওয়ামী মন্ত্রীরা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের শিবির-জঙ্গি তকমা দিয়ে এই আন্দোলনের মোড় ভিন্ন দিকে ঘুরানোর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করেছে। সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি তথা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির চর্চার জন্য সকল অসুস্থ ধারার রাজনীতি এবং বর্তমানে ফ্যাসিবাদী ছাত্রলীগ হচ্ছে বাধা।
তাই শিক্ষার্থীদের কর্তব্য হচ্ছে– শিক্ষাঙ্গনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী, উগ্র জাতীয়তাবাদী, ধর্মবাদীসহ সকল প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি তথা অসুস্থ ধারার রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলা। এবং একই সাথে বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার অবসান এবং শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত সহ ব্যাপক জনগণের অস্থায়ী গণ সরকার প্রতিষ্ঠা হলেই শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগসহ অসুস্থ ধারার রাজনীতি বন্ধ হবে। শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলনে সংগঠিত হয়ে ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের অসমাপ্ত কাজটিকে সমাপ্ত করতে হবে।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র