• বৃহঃস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
  • ঢাকা, বাংলাদেশ
নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম- নতুন বোতলে পুরানো মদ
নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম- নতুন বোতলে পুরানো মদ

  আন্দোলন প্রতিবেদন  

মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২১  |  অনলাইন সংস্করণ

জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ চূড়ান্ত করে পাস করেছে সরকারের মন্ত্রী পরিষদ। এই শিক্ষাক্রম প্রাক-প্রাথমিক থেকে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমাতে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্যই নতুন করে এই শিক্ষাক্রম হাজির করা হয়েছে। তা আসলে কতটা সত্য সে বিষয়েই কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

আওয়ামী-হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ২০১০ সালে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল। যা অনেক ফাঁকা বুলিতে ভরা ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই শিক্ষানীতি সাধারণ জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো পরিবর্তন আনেনি। বরং বড় বড় কর্পোরেট হাউজ এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রেসক্রিপশনে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ-এর চূড়ান্ত মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই শিক্ষানীতি ঠিক রেখেই নতুন এই শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আগে সৃজনশীল পদ্ধতির নামে ছাত্র-শিক্ষকদের উপর এক ধরেনর মানসিক নিপীড়ন চালু করেছিলো সরকার, যা বাস্তবে অকার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে ।

গত দেড় বছর করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে, শিক্ষার্থীদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই পুরো সময়ে ফ্যাসিবাদী সরকার কোনো ইতিবাচক পরিকল্পনা হাজির করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন আজ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা ব্যাপকভাবে অসন্তুষ্ট। ঠিক এসময়েই এই নতুন শিক্ষাক্রম হাজির করা হলো। ক্ষোভকে প্রশমিত করবার একটা মোক্ষম চাল বটে!

কী আছে এই শিক্ষাক্রমে? জাতীয় শিক্ষাক্রমে বলা হয়েছে শিক্ষাকে আরো যুগোপযোগী করবার লক্ষ্যে এবং শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমানোর জন্য প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না; এছাড়া প্রাথমিক স্তরে ক্লাস ফাইভে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না অর্থাৎ পিইসি পরীক্ষা নেয়া হবে না। এ ছাড়াও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে জেএসসি পরীক্ষাও উঠে যাবে। এসএসসি পরীক্ষা হবে শুধুমাত্র দশম শ্রেণির সিলেবাসে। মাধ্যমিক স্তরে অর্থাৎ নবম দশম শ্রেণিতে কোনো বিভাগ থাকবে না। এখানে সবাইকেই একই বিভাগে থাকতে হবে। যদিও বলা হয়েছে, একজন চাইলে অর্থনীতির সাথে বিজ্ঞান পড়তে পারবে বা বিজ্ঞানের সাথে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিতে পারবে। মোট দশটি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বেশ কিছু সিলেবাস এবং বই পরিবর্তন করা হবে। সাথে কিছু কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথাও বলেছে।

যে সব কথা বলা হয়েছে তাতে শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন নেই। কিছু সংস্কারমূলক কথা-বার্তায় ঠাসা মাত্র। বিগত সৃজনশীল পদ্ধতি ছিল এমনই একটি সংস্কার। আমরা দেখেছি, শিক্ষকদের কোনো রকম প্রশিক্ষণ না দিয়ে এবং পর্যাপ্ত আয়োজন না করেই ছাত্রদের গিনিপিগ বানিয়ে গাইড এবং প্রাইভেট টিউশনের উপর নির্ভরশীল করা হয়েছে। বর্তমান শিক্ষা-ব্যবস্থায় বহুমুখী, বৈষম্যমূলক, উৎপাদনবিমূখ, ইংরেজি মাধ্যম ও ধর্মভিত্তিক মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা অব্যাহতই রয়েছে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ অব্যাহতই থাকবে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক শিক্ষা-ব্যবস্থা নয়।

ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যাপক এবং যুগোপযোগী করার কথা বলা হয়েছে। যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধর্মকে রাষ্ট্র এবং রাজনীতি থেকে পৃথক করা অত্যাবশ্যক, সেখানে তাকেই ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সজ্জিত এবং শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সুযোগ্য, দক্ষ জনবল গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে মিথ্যায় ভরপুর ভারত-দালালীর চেতনা। এর সাথে দেশ ও জনগণের স্বার্থের কোনো সম্পর্ক নেই।

এই শিক্ষাক্রম শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবী জনগণের সন্তানদের বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মুক্ত করবে না। বরং সাম্রাজ্যবাদের শ্রম বাজার এবং তাদের জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ান, শিক্ষিত ডিগ্রিধারী শ্রমিক যোগান দেবে। একধারার, উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার আলোচনা এখানে অনুপস্থিত। শাসকশ্রেণি তা করতেও সক্ষম নয়। করোনাকালীন সরকারের ব্যর্থতাকে ঢাকতেই তারা এই নতুন শিক্ষাক্রমে মধ্যবিত্ত জনগণকে ধন্দে ফেলেছে। এই শিক্ষাক্রম হচ্ছে নতুন বোতলে পুরানো মদ। এই শিক্ষাক্রম দুর্নীতিকে আরো বর্ধিত করবে। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার নয়, চাই আমূল পরিবর্তন- এই স্লোগানের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম- নতুন বোতলে পুরানো মদ

 আন্দোলন প্রতিবেদন 
মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২১  |  অনলাইন সংস্করণ

জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ চূড়ান্ত করে পাস করেছে সরকারের মন্ত্রী পরিষদ। এই শিক্ষাক্রম প্রাক-প্রাথমিক থেকে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমাতে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্যই নতুন করে এই শিক্ষাক্রম হাজির করা হয়েছে। তা আসলে কতটা সত্য সে বিষয়েই কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

আওয়ামী-হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ২০১০ সালে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল। যা অনেক ফাঁকা বুলিতে ভরা ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই শিক্ষানীতি সাধারণ জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো পরিবর্তন আনেনি। বরং বড় বড় কর্পোরেট হাউজ এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রেসক্রিপশনে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ-এর চূড়ান্ত মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই শিক্ষানীতি ঠিক রেখেই নতুন এই শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আগে সৃজনশীল পদ্ধতির নামে ছাত্র-শিক্ষকদের উপর এক ধরেনর মানসিক নিপীড়ন চালু করেছিলো সরকার, যা বাস্তবে অকার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে ।

গত দেড় বছর করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে, শিক্ষার্থীদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই পুরো সময়ে ফ্যাসিবাদী সরকার কোনো ইতিবাচক পরিকল্পনা হাজির করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন আজ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা ব্যাপকভাবে অসন্তুষ্ট। ঠিক এসময়েই এই নতুন শিক্ষাক্রম হাজির করা হলো। ক্ষোভকে প্রশমিত করবার একটা মোক্ষম চাল বটে!

কী আছে এই শিক্ষাক্রমে? জাতীয় শিক্ষাক্রমে বলা হয়েছে শিক্ষাকে আরো যুগোপযোগী করবার লক্ষ্যে এবং শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমানোর জন্য প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না; এছাড়া প্রাথমিক স্তরে ক্লাস ফাইভে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না অর্থাৎ পিইসি পরীক্ষা নেয়া হবে না। এ ছাড়াও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে জেএসসি পরীক্ষাও উঠে যাবে। এসএসসি পরীক্ষা হবে শুধুমাত্র দশম শ্রেণির সিলেবাসে। মাধ্যমিক স্তরে অর্থাৎ নবম দশম শ্রেণিতে কোনো বিভাগ থাকবে না। এখানে সবাইকেই একই বিভাগে থাকতে হবে। যদিও বলা হয়েছে, একজন চাইলে অর্থনীতির সাথে বিজ্ঞান পড়তে পারবে বা বিজ্ঞানের সাথে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিতে পারবে। মোট দশটি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বেশ কিছু সিলেবাস এবং বই পরিবর্তন করা হবে। সাথে কিছু কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথাও বলেছে।

যে সব কথা বলা হয়েছে তাতে শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন নেই। কিছু সংস্কারমূলক কথা-বার্তায় ঠাসা মাত্র। বিগত সৃজনশীল পদ্ধতি ছিল এমনই একটি সংস্কার। আমরা দেখেছি, শিক্ষকদের কোনো রকম প্রশিক্ষণ না দিয়ে এবং পর্যাপ্ত আয়োজন না করেই ছাত্রদের গিনিপিগ বানিয়ে গাইড এবং প্রাইভেট টিউশনের উপর নির্ভরশীল করা হয়েছে। বর্তমান শিক্ষা-ব্যবস্থায় বহুমুখী, বৈষম্যমূলক, উৎপাদনবিমূখ, ইংরেজি মাধ্যম ও ধর্মভিত্তিক মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা অব্যাহতই রয়েছে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ অব্যাহতই থাকবে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক শিক্ষা-ব্যবস্থা নয়।

ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যাপক এবং যুগোপযোগী করার কথা বলা হয়েছে। যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধর্মকে রাষ্ট্র এবং রাজনীতি থেকে পৃথক করা অত্যাবশ্যক, সেখানে তাকেই ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সজ্জিত এবং শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সুযোগ্য, দক্ষ জনবল গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে মিথ্যায় ভরপুর ভারত-দালালীর চেতনা। এর সাথে দেশ ও জনগণের স্বার্থের কোনো সম্পর্ক নেই।

এই শিক্ষাক্রম শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবী জনগণের সন্তানদের বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মুক্ত করবে না। বরং সাম্রাজ্যবাদের শ্রম বাজার এবং তাদের জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ান, শিক্ষিত ডিগ্রিধারী শ্রমিক যোগান দেবে। একধারার, উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার আলোচনা এখানে অনুপস্থিত। শাসকশ্রেণি তা করতেও সক্ষম নয়। করোনাকালীন সরকারের ব্যর্থতাকে ঢাকতেই তারা এই নতুন শিক্ষাক্রমে মধ্যবিত্ত জনগণকে ধন্দে ফেলেছে। এই শিক্ষাক্রম হচ্ছে নতুন বোতলে পুরানো মদ। এই শিক্ষাক্রম দুর্নীতিকে আরো বর্ধিত করবে। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার নয়, চাই আমূল পরিবর্তন- এই স্লোগানের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আরও খবর
 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র