নয়া শিক্ষাক্রম : শ্রেণি বৈষম্য বৃদ্ধি, বিজ্ঞান-বিরোধী ও ইতিহাস বিকৃতির নয়া হাতিয়ার

আন্দোলন প্রতিবেদন
শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
হাসিনা-আওয়ামী সরকার সাম্রাজ্যবাদী প্রেসক্রিপশনে নয়া শিক্ষাক্রম চালু করেছে। তাতে শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি, সম্ভবও নয়। বর্তমানের সংশোধিত শিক্ষানীতি নতুন বোতলে পুরোনো মদেরই সামিল। সরকারের ভাষ্যমতে নতুন প্রণীত শিক্ষাক্রম প্রগতিশীল এবং একমুখী। কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বানুসারে মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস খুবই দুর্বলভাবে তুলে ধরা সত্ত্বেও ধর্মবাদীদের এক ধমকে সরকার সেসব বই প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এভাবে আওয়ামী সরকার ধর্মবাদীদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং তাদের কাছে নির্লজ্জ নতি স্বীকার করেছে। বরং তারা আরো এগিয়ে ধর্মশিক্ষাকে দশমশ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করেছে। এভাবে পাকিস্তান আমলে যা করতে তারা সাহস পায়নি, সেটা আজ তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী সরকার করে চলেছে।
ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞান পরিচয়ের ক্ষেত্রে এই বইগুলিতে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী ভাবধারায় সজ্জিত বিকৃত/খন্ডিত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, ভারতবর্ষের ইতিহাস বর্ণনায় সুদীর্ঘ প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসনকালের বিবরণকে প্রায় গায়েব করা হয়েছে। অন্যদিকে বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় সুলতানি ও মুঘল তথা মুসলিম শাসকদের শাসন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছে যে, সে আমলে অমুসলিমরা মুসলিম শাসকদের হাতে জিম্মি ছিল, যা ইতিহাস বিকৃতি ছাড়া আর কিছু নয়। তৎকালীন সামন্ত যুগকে ব্যাখ্যা না করে তারা মুসলিম শাসকদেরকে আক্রমণ করেছে এবং এভাবে হিন্দুত্ববাদী ও সাম্প্রদায়িক ইতিহাস-চর্চা করেছে। হাসিনা সরকার ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস-চর্চাকেই এদেশের নতুন প্রজন্মের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।
এছাড়াও পাঠ্যপুস্তকগুলো প্রণয়নে আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের দায়দায়িত্বহীনতা চরমভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের বিভিন্ন বিষয়বস্তু সরাসরি ইন্টারনেট থেকে কপি করা হয়েছে যার লেখা এবং সম্পাদনার প্রধান দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষক জাফর ইকবাল। তিনি ও তার সহকারীগণ কিছুই করেন নি। গণিত বইয়ে খেলার ছলে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে গিয়ে বইটিকে নিম্নমানের বানিয়ে ফেলেছে। কাগজ ভাজ করে বর্গ বানানো, বিভিন্ন আকৃতি দেখিয়ে জ্যামিতি শেখানো, দড়িতে গিট দিয়ে গণনা, দাগ কেটে গণনা, ঘড়িতে সময় দেখা ইত্যাদি যা প্রাইমারির শিক্ষার্থীদের পড়া, তা রয়েছে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির গণিত বইয়ে। বই পুস্তকগুলোতে পড়ার তুলনায় বেশিমাত্রায় রয়েছে গল্পকাহিনী যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
নতুন শিক্ষাক্রমের বড় অংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন ধারাবাহিকতায়। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হস্ত শিল্প জাতীয় কাজ। নতুন কারিকুলামে শিক্ষকেরাই ঠিকমত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা দ্বারস্থ হচ্ছে কোচিং-প্রাইভেট টিউশনের। টিউশন বাণিজ্য বন্ধ করার নামে এর পথ আরও সুগম করে দিয়েছে এই শিক্ষাক্রম। সরকারি স্কুলের ভর্তির সকল কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় শ্রমিক-কৃষক পরিবারের সন্তানদের ভেগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে ৯ম-১০ম শ্রেণিতে আগের মত বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসা শিক্ষা তিনটি ভাগে বিভাগ বিভাজন থাকবে না। অর্থাৎ ভবিষ্যতে যে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সে ৯ম-১০ম শ্রেণিতে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান মিলিয়ে ১০০ নম্বরের জন্য ১টি বই পড়বে। কিন্তু পরের বছরেই উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে তিন বিষয়ে ৬০০ নম্বরের বিশাল সিলেবাস পড়তে হবে। অনুরূপভাবে মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্যও। এত বড় সিলেবাসের চাপ সামলাতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে ঝরে পড়বে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চ শিক্ষার কথা চিন্তা করাটাও দুরূহ ব্যাপার।
অপরদিকে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে বাধ্যতামূলকভাবে শিশুদের উপর চাপানো হচ্ছে। শিখনের পদ্ধতি হিসেবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে হবে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার, যা শ্রমিক-কৃষকের সন্তানেরা চিন্তা করতে পারে না। কম্পিউটার শেখার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। কিন্তু শিশু বয়স থেকেই তা বাধ্যতামূলক করে চিন্তার জগৎসহ শরীর ও মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কৃত্রিম জগতে নিজেকে হারিয়ে মেধা এবং মনন শক্তি হারিয়ে ফেলবে। অপরদিকে নিম্নবিত্ত শ্রেণির সাধ্যের বাইরে কম্পিউটার। উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানেরা লাভবান হলেও নিম্নবিত্ত শ্রেণির সন্তানেরা কখনও উচ্চ শিক্ষার কথা চিন্তাও করতে পারবে না। উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের নীতিই কেবল হাসিনার নয়া শিক্ষাক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হলেও কৃষি শিক্ষার উপর কোনো গুরুত্বারোপ করা হয়নি এই শিক্ষাক্রমে। ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক কৃষি শিক্ষা শিশুদের শেখানো প্রয়োজন হওয়া সত্ত্বেও তা করানো হয় না। উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানদের কাছে কৃষিশিক্ষা হচ্ছে গ্রামীণ কৃষক এবং তাদের সন্তানদের জন্যই। যা সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর অর্থনীতির পথকেই সুগম করবে।
সর্বোপরি, এই শিক্ষানীতিতে সর্বস্তরের শিক্ষার মাধ্যমকে বাংলা করা হয় নি। অর্থাৎ ব্রিটিশ কারিকুলামে ইংরেজি মাধ্যমগুলো চলবে এবং মাদ্রাসাও চলবে। সরকারের দালাল আমলা-মন্ত্রীর সন্তানেরা ছাড়া ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সাধ্য সাধারণ মধ্যবিত্তের সন্তানদেরও নেই। আর দরিদ্র শ্রেণির অর্থ সংকট এবং সাধারণ জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির সুযোগ নিয়েই তাদের সন্তানদের জন্য খোলা রাখা হয়েছে মাদ্রাসা। নয়া শিক্ষাক্রমের ব্যয়বহুল খরচ বহন করার সাধ্য যাদের নেই। যার ফলে এই নয়া শিক্ষাক্রমে সাধারণ জনগণের সন্তানদের ধর্মান্ধ শিক্ষার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে।
নয়া শিক্ষাক্রমে সংস্কারের কিছু বিমূর্ত কথাবার্তা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কিছু কিছু কার্যকর হলেও তা শিক্ষাব্যবস্থায় মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনবে না। কিন্তু এই শিক্ষানীতি সমাজে শ্রেণি বৈষম্য, শোষণ, অজ্ঞতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, বিজ্ঞান-বিরোধিতা, সাম্রাজ্যবাদীদের দালালী ও তাদের মুনাফা তৈরির কারিগর সৃষ্টিতে ব্যাঘাত করবে না।
তাই সর্বস্তরের শিক্ষার্থী ও জনগণকে বিজ্ঞান ভিত্তিক, একধারার, ধর্মবিযুক্ত, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, সমাজতন্ত্রমুখীন শিক্ষানীতির জন্য সংগ্রামকে অব্যাহত রাখতে হবে এবং জোরালো করতে হবে ।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
নয়া শিক্ষাক্রম : শ্রেণি বৈষম্য বৃদ্ধি, বিজ্ঞান-বিরোধী ও ইতিহাস বিকৃতির নয়া হাতিয়ার
হাসিনা-আওয়ামী সরকার সাম্রাজ্যবাদী প্রেসক্রিপশনে নয়া শিক্ষাক্রম চালু করেছে। তাতে শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি, সম্ভবও নয়। বর্তমানের সংশোধিত শিক্ষানীতি নতুন বোতলে পুরোনো মদেরই সামিল। সরকারের ভাষ্যমতে নতুন প্রণীত শিক্ষাক্রম প্রগতিশীল এবং একমুখী। কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
৬ষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বানুসারে মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস খুবই দুর্বলভাবে তুলে ধরা সত্ত্বেও ধর্মবাদীদের এক ধমকে সরকার সেসব বই প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এভাবে আওয়ামী সরকার ধর্মবাদীদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং তাদের কাছে নির্লজ্জ নতি স্বীকার করেছে। বরং তারা আরো এগিয়ে ধর্মশিক্ষাকে দশমশ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করেছে। এভাবে পাকিস্তান আমলে যা করতে তারা সাহস পায়নি, সেটা আজ তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী সরকার করে চলেছে।
ইতিহাস ও নৃবিজ্ঞান পরিচয়ের ক্ষেত্রে এই বইগুলিতে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী ভাবধারায় সজ্জিত বিকৃত/খন্ডিত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, ভারতবর্ষের ইতিহাস বর্ণনায় সুদীর্ঘ প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসনকালের বিবরণকে প্রায় গায়েব করা হয়েছে। অন্যদিকে বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় সুলতানি ও মুঘল তথা মুসলিম শাসকদের শাসন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছে যে, সে আমলে অমুসলিমরা মুসলিম শাসকদের হাতে জিম্মি ছিল, যা ইতিহাস বিকৃতি ছাড়া আর কিছু নয়। তৎকালীন সামন্ত যুগকে ব্যাখ্যা না করে তারা মুসলিম শাসকদেরকে আক্রমণ করেছে এবং এভাবে হিন্দুত্ববাদী ও সাম্প্রদায়িক ইতিহাস-চর্চা করেছে। হাসিনা সরকার ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস-চর্চাকেই এদেশের নতুন প্রজন্মের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।
এছাড়াও পাঠ্যপুস্তকগুলো প্রণয়নে আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের দায়দায়িত্বহীনতা চরমভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ৭ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের বিভিন্ন বিষয়বস্তু সরাসরি ইন্টারনেট থেকে কপি করা হয়েছে যার লেখা এবং সম্পাদনার প্রধান দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষক জাফর ইকবাল। তিনি ও তার সহকারীগণ কিছুই করেন নি। গণিত বইয়ে খেলার ছলে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে গিয়ে বইটিকে নিম্নমানের বানিয়ে ফেলেছে। কাগজ ভাজ করে বর্গ বানানো, বিভিন্ন আকৃতি দেখিয়ে জ্যামিতি শেখানো, দড়িতে গিট দিয়ে গণনা, দাগ কেটে গণনা, ঘড়িতে সময় দেখা ইত্যাদি যা প্রাইমারির শিক্ষার্থীদের পড়া, তা রয়েছে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির গণিত বইয়ে। বই পুস্তকগুলোতে পড়ার তুলনায় বেশিমাত্রায় রয়েছে গল্পকাহিনী যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
নতুন শিক্ষাক্রমের বড় অংশ মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন ধারাবাহিকতায়। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হস্ত শিল্প জাতীয় কাজ। নতুন কারিকুলামে শিক্ষকেরাই ঠিকমত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা দ্বারস্থ হচ্ছে কোচিং-প্রাইভেট টিউশনের। টিউশন বাণিজ্য বন্ধ করার নামে এর পথ আরও সুগম করে দিয়েছে এই শিক্ষাক্রম। সরকারি স্কুলের ভর্তির সকল কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় শ্রমিক-কৃষক পরিবারের সন্তানদের ভেগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে ৯ম-১০ম শ্রেণিতে আগের মত বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসা শিক্ষা তিনটি ভাগে বিভাগ বিভাজন থাকবে না। অর্থাৎ ভবিষ্যতে যে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সে ৯ম-১০ম শ্রেণিতে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান মিলিয়ে ১০০ নম্বরের জন্য ১টি বই পড়বে। কিন্তু পরের বছরেই উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে তিন বিষয়ে ৬০০ নম্বরের বিশাল সিলেবাস পড়তে হবে। অনুরূপভাবে মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্যও। এত বড় সিলেবাসের চাপ সামলাতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে ঝরে পড়বে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চ শিক্ষার কথা চিন্তা করাটাও দুরূহ ব্যাপার।
অপরদিকে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে বাধ্যতামূলকভাবে শিশুদের উপর চাপানো হচ্ছে। শিখনের পদ্ধতি হিসেবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে হবে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার, যা শ্রমিক-কৃষকের সন্তানেরা চিন্তা করতে পারে না। কম্পিউটার শেখার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। কিন্তু শিশু বয়স থেকেই তা বাধ্যতামূলক করে চিন্তার জগৎসহ শরীর ও মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কৃত্রিম জগতে নিজেকে হারিয়ে মেধা এবং মনন শক্তি হারিয়ে ফেলবে। অপরদিকে নিম্নবিত্ত শ্রেণির সাধ্যের বাইরে কম্পিউটার। উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানেরা লাভবান হলেও নিম্নবিত্ত শ্রেণির সন্তানেরা কখনও উচ্চ শিক্ষার কথা চিন্তাও করতে পারবে না। উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের নীতিই কেবল হাসিনার নয়া শিক্ষাক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হলেও কৃষি শিক্ষার উপর কোনো গুরুত্বারোপ করা হয়নি এই শিক্ষাক্রমে। ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক কৃষি শিক্ষা শিশুদের শেখানো প্রয়োজন হওয়া সত্ত্বেও তা করানো হয় না। উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানদের কাছে কৃষিশিক্ষা হচ্ছে গ্রামীণ কৃষক এবং তাদের সন্তানদের জন্যই। যা সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর অর্থনীতির পথকেই সুগম করবে।
সর্বোপরি, এই শিক্ষানীতিতে সর্বস্তরের শিক্ষার মাধ্যমকে বাংলা করা হয় নি। অর্থাৎ ব্রিটিশ কারিকুলামে ইংরেজি মাধ্যমগুলো চলবে এবং মাদ্রাসাও চলবে। সরকারের দালাল আমলা-মন্ত্রীর সন্তানেরা ছাড়া ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সাধ্য সাধারণ মধ্যবিত্তের সন্তানদেরও নেই। আর দরিদ্র শ্রেণির অর্থ সংকট এবং সাধারণ জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির সুযোগ নিয়েই তাদের সন্তানদের জন্য খোলা রাখা হয়েছে মাদ্রাসা। নয়া শিক্ষাক্রমের ব্যয়বহুল খরচ বহন করার সাধ্য যাদের নেই। যার ফলে এই নয়া শিক্ষাক্রমে সাধারণ জনগণের সন্তানদের ধর্মান্ধ শিক্ষার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে।
নয়া শিক্ষাক্রমে সংস্কারের কিছু বিমূর্ত কথাবার্তা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কিছু কিছু কার্যকর হলেও তা শিক্ষাব্যবস্থায় মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনবে না। কিন্তু এই শিক্ষানীতি সমাজে শ্রেণি বৈষম্য, শোষণ, অজ্ঞতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, বিজ্ঞান-বিরোধিতা, সাম্রাজ্যবাদীদের দালালী ও তাদের মুনাফা তৈরির কারিগর সৃষ্টিতে ব্যাঘাত করবে না।
তাই সর্বস্তরের শিক্ষার্থী ও জনগণকে বিজ্ঞান ভিত্তিক, একধারার, ধর্মবিযুক্ত, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, সমাজতন্ত্রমুখীন শিক্ষানীতির জন্য সংগ্রামকে অব্যাহত রাখতে হবে এবং জোরালো করতে হবে ।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র