ডেঙ্গু ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘জাতীয় দুর্যোগে’ রূপ নিয়েছে। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, দেশের ৬৪টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। গত ৫ বছরে ডেঙ্গু প্রকোপ ৫ গুণ বেড়েছে। এ বছরের প্রথমদিকেই কীটতত্ত্ববিদেরা পূর্বাভাসে বলেছিলেন এ বছর ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। এটা জানার পরও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না, ডাক্তার-নার্সের সংকট। তারা পরীক্ষা-চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দঁাড়িয়ে রোগীরা পরীক্ষা করাতে পারলেও রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। হাসপাতালে স্যালাইন সংকট তীব্র। স্যালাইনের দাম হু হু করে বাড়ছে। সরবরাহের তেমন ব্যবস্থা নেই। ফলে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না। বেসরকারি হাসপাতালে বেশি টাকা খরচ করে টেষ্ট ও চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। সরকারি হিসেব মতে মৃতের সংখ্যা চলতি মাস সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০৬ জন, আক্রান্ত লক্ষাধিক। বাস্তবে সংখ্যা আরো বেশি।
হাসিনা সরকার ডেঙ্গু প্রকোপের এই ভয়াবহতা নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা ‘উন্নয়ন’ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২৩ জুলাই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পর্যালোচনা কমিটি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যারা মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় পদেক্ষপ নিবে। কিন্তু এই কমিটি তাদের কাজ করছে দায়-দায়িত্বহীন ভাবে। ডেঙ্গু জ্বরের চার ধরণ থাকা সত্ত্বেও তারা পাইকারি ভাবে ডেঙ্গু জ্বর লিখে দিচ্ছে তথ্যভাণ্ডারে। ফলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকৃত কারণ নির্ধারণ হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞগণ বলছেন। এই জনদুর্ভোগের দায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী চাপাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের উপর। আর সিটি কর্পোরেশন দায় চাপাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উপর। খোদ প্রধানমন্ত্রী দায়-দায়িত্বহীন ভাবে বলেছেন– ‘জ্বর হলেও নাকি সরকারের দোষ’। কীট তত্ত্ববিদগণ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন– “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের নামে দেশে তামাশা চলছে”।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের নামে সরকার লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করছে যা কোনো কাজেই আসছে না। কিছু কীটনাশক স্প্রে করা, মিডিয়ায় কিছু প্রচার চালানো ও বাড়ি মালিকদের কিছু জরিমানা করে দায় সারছে। কিন্তু গবেষক/কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শে এডিস মশা/লার্ভা নির্মূলের কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাসা-বাড়ি ছাড়াও বিবিধ জায়গায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার খবর মিডিয়ায় এসেছে। সিটি কর্পোরেশনের উদাসীনতার কথা প্রতি ওয়ার্ডের জনগণই বলছেন, যা মিডিয়ায় উঠে আসছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোটি কোটি টাকা বাজেট হয় ঠিকই, কিন্তু তা দুর্নীতিতে লোপাট হয়ে যায়। কীট তত্ত্ববিদদের পরামর্শে স্প্রে ঔষধ কেনা হয় না। সব ওয়ার্ডের জন্য একই কীটনাশক কার্যকর নয়, সেটাও মানা হয় না। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটিতে মশার লার্ভা নিধনের ব্যাকটেরিয়া বিটিআই আমদানিতে জালিয়াতি ঘটেছে। সিঙ্গাপুরের কথা বলে, তার মোড়কে ব্যাকটেরিয়াটি আমদানি করা হয়েছে চীন থেকে। শেখ হাসিনা সরকারের স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা এবং জনগণের চিকিৎসার প্রতি দায়িত্বহীনতা করোনা মহামারীতেও প্রকট আকারে প্রকাশ পেয়েছিল। ডেঙ্গু মহামারিতেও তা নগ্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
একেই তো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা। তার উপর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে জনজীবনে নেমে এসেছে মরার উপর খঁাড়ার ঘা। জনগণের এহেন দুর্দশায় সরকার নির্বিকার থেকে তথাকথিত উন্নয়নের ফানুস উড়িয়ে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচনী জোয়ার আনায় গলদঘর্ম হচ্ছে। আর বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে দমন-নির্যাতনের ষ্টিমরোলার চালাতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালাতে শ্রম-মেধা ব্যয় করছে। জনগণকে মরণদশায় রেখে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার যে উন্নয়ন উন্নয়ন বলে গলাবাজি করছে, সেই উন্নয়ন গণবিরোধী, দেশীয় দালাল বুর্জোয়াদের এবং সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের স্বার্থের উন্নয়ন।
তাই, হাসিনা সরকারের ডেঙ্গু প্রতিরোধে উদাসীনতা, চিকিৎসায় দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ করতে হবে। এব পাশাপাশি সর্বস্তরে ডেঙ্গু সচেতনতা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে।
দাবি তুলতে হবে—
–অবিলম্বে এডিস মশা নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে!
–ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করে এর জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে!
–শ্রমিক-কৃষক ও সাধারণ জনগণের বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে!
–ডেঙ্গু মোকাবেলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতাল, পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্স ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে!
–কীটতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করে এডিস মশা/লার্ভা নির্মূলের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে!
-৮ সেপ্টেম্বর’২৩
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ডেঙ্গু ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘জাতীয় দুর্যোগে’ রূপ নিয়েছে। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, দেশের ৬৪টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। গত ৫ বছরে ডেঙ্গু প্রকোপ ৫ গুণ বেড়েছে। এ বছরের প্রথমদিকেই কীটতত্ত্ববিদেরা পূর্বাভাসে বলেছিলেন এ বছর ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। এটা জানার পরও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না, ডাক্তার-নার্সের সংকট। তারা পরীক্ষা-চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দঁাড়িয়ে রোগীরা পরীক্ষা করাতে পারলেও রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। হাসপাতালে স্যালাইন সংকট তীব্র। স্যালাইনের দাম হু হু করে বাড়ছে। সরবরাহের তেমন ব্যবস্থা নেই। ফলে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না। বেসরকারি হাসপাতালে বেশি টাকা খরচ করে টেষ্ট ও চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। সরকারি হিসেব মতে মৃতের সংখ্যা চলতি মাস সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০৬ জন, আক্রান্ত লক্ষাধিক। বাস্তবে সংখ্যা আরো বেশি।
হাসিনা সরকার ডেঙ্গু প্রকোপের এই ভয়াবহতা নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা ‘উন্নয়ন’ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২৩ জুলাই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পর্যালোচনা কমিটি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যারা মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় পদেক্ষপ নিবে। কিন্তু এই কমিটি তাদের কাজ করছে দায়-দায়িত্বহীন ভাবে। ডেঙ্গু জ্বরের চার ধরণ থাকা সত্ত্বেও তারা পাইকারি ভাবে ডেঙ্গু জ্বর লিখে দিচ্ছে তথ্যভাণ্ডারে। ফলে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকৃত কারণ নির্ধারণ হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞগণ বলছেন। এই জনদুর্ভোগের দায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী চাপাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের উপর। আর সিটি কর্পোরেশন দায় চাপাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উপর। খোদ প্রধানমন্ত্রী দায়-দায়িত্বহীন ভাবে বলেছেন– ‘জ্বর হলেও নাকি সরকারের দোষ’। কীট তত্ত্ববিদগণ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন– “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের নামে দেশে তামাশা চলছে”।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের নামে সরকার লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করছে যা কোনো কাজেই আসছে না। কিছু কীটনাশক স্প্রে করা, মিডিয়ায় কিছু প্রচার চালানো ও বাড়ি মালিকদের কিছু জরিমানা করে দায় সারছে। কিন্তু গবেষক/কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শে এডিস মশা/লার্ভা নির্মূলের কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাসা-বাড়ি ছাড়াও বিবিধ জায়গায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার খবর মিডিয়ায় এসেছে। সিটি কর্পোরেশনের উদাসীনতার কথা প্রতি ওয়ার্ডের জনগণই বলছেন, যা মিডিয়ায় উঠে আসছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোটি কোটি টাকা বাজেট হয় ঠিকই, কিন্তু তা দুর্নীতিতে লোপাট হয়ে যায়। কীট তত্ত্ববিদদের পরামর্শে স্প্রে ঔষধ কেনা হয় না। সব ওয়ার্ডের জন্য একই কীটনাশক কার্যকর নয়, সেটাও মানা হয় না। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটিতে মশার লার্ভা নিধনের ব্যাকটেরিয়া বিটিআই আমদানিতে জালিয়াতি ঘটেছে। সিঙ্গাপুরের কথা বলে, তার মোড়কে ব্যাকটেরিয়াটি আমদানি করা হয়েছে চীন থেকে। শেখ হাসিনা সরকারের স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা এবং জনগণের চিকিৎসার প্রতি দায়িত্বহীনতা করোনা মহামারীতেও প্রকট আকারে প্রকাশ পেয়েছিল। ডেঙ্গু মহামারিতেও তা নগ্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
একেই তো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা। তার উপর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে জনজীবনে নেমে এসেছে মরার উপর খঁাড়ার ঘা। জনগণের এহেন দুর্দশায় সরকার নির্বিকার থেকে তথাকথিত উন্নয়নের ফানুস উড়িয়ে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচনী জোয়ার আনায় গলদঘর্ম হচ্ছে। আর বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে দমন-নির্যাতনের ষ্টিমরোলার চালাতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালাতে শ্রম-মেধা ব্যয় করছে। জনগণকে মরণদশায় রেখে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার যে উন্নয়ন উন্নয়ন বলে গলাবাজি করছে, সেই উন্নয়ন গণবিরোধী, দেশীয় দালাল বুর্জোয়াদের এবং সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের স্বার্থের উন্নয়ন।
তাই, হাসিনা সরকারের ডেঙ্গু প্রতিরোধে উদাসীনতা, চিকিৎসায় দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ করতে হবে। এব পাশাপাশি সর্বস্তরে ডেঙ্গু সচেতনতা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে।
দাবি তুলতে হবে—
–অবিলম্বে এডিস মশা নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে!
–ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করে এর জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে!
–শ্রমিক-কৃষক ও সাধারণ জনগণের বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে!
–ডেঙ্গু মোকাবেলায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতাল, পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্স ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে!
–কীটতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করে এডিস মশা/লার্ভা নির্মূলের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে!
-৮ সেপ্টেম্বর’২৩
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র