ভেঙে পড়া শিক্ষাব্যবস্থা এবং আওয়ামী সমাধান

আন্দোলন প্রতিবেদন
রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২০ | অনলাইন সংস্করণ
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে ধ্বস নেমেছে, একই রকম ধ্বস নেমেছে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও। কোভিডের এক আঘাতেই সব গুড়িয়ে গেছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা প্রথমদিকে হয়ত সম্ভব ছিলনা। কিন্তু কিছুদিন পরই জীবনজীবিকার ফর্মূলায় আওয়ামী সরকার শ্রমিক, শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত জনগণকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে উৎপাদনে যুক্ত করেছে। তাতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না এবং নেই।
এ অবস্থায় তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষাকার্যক্রম চালু করতে পারতো। কিন্তু তা না করে তারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। সরকার সেটি শুরু করলে উচচ্চবিত্তদের সন্তানদের জন্য কিছু কার্যকরী হলেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক-কৃষক, নিম্ন-মধ্যবিত্তদের লক্ষ লক্ষ সন্তান রয়ে গেছে ডিজিটাল শিক্ষার বাইরে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধাও নেই। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষক বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ রিক্সা-ভ্যান চালিয়ে, কেউ কাঁচামালের ব্যবসা করে বিভিন্নভাবে রুজি-রোজগার করে দিনযাপন করছেন।
৭ অক্টোবর’২০ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি সহ সমমানের সকল পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এর আগে জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা বাতিল করে অটোপাশের ঘোষণা দিয়েছে। এইচ এসসিতেও অটোপাশ কিন্তু হাইকোর্টে আপিল করেও স্থগিত করা যায়নি ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে অনুষ্ঠিত উচ্চবিত্তের 'এ লেভেল', 'ও লেভেল' পরীক্ষা।
কওমি সংশ্লিষ্টদের দাবি মত সারা দেশে মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার এবং ২২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। দেশে করোনা ভাইরাস মহামারির শুরু থেকেই ওয়াজ মাহফিল, জুমার বয়ানসহ নানা জায়গায় বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে গেছেন কওমিপন্থী আলেমরা। ‘মুসলমানরা করোনা আক্রান্ত হবেন না’, ‘ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই, মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই’- ইত্যাদি। বেশিরভাগ কওমিপন্থী আলেমরা সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মানেন না, ব্যবহার করেন না মাস্ক। দেশের সব হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও হিফজখানা ১২ জুলাই থেকে চালুর অনুমতি দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২৪ আগস্ট মাদ্র্রাসার কিতাব বিভাগ খোলার অনুমতি দেয়। (১৬ অক্টোবর, বাংলা ট্রিবিউন )
প্রশ্ন এসে গেছে, দেশের কওমি শিক্ষাব্যবস্থা এবং কার্যক্রম নানা ভাবে চালু করার অনুমোদন দিয়েছে সরকার, তা হলে সরকারি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলা এবং পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না কেন? সারা দেশের শ্রমিক ও মধ্যবিত্তদের উৎপাদনের কাজে, ব্যবসা-বাণিজ্যে লাগানো হয়েছে; অফিস-আদালত, কল-কারখানা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সব ধরনের গণপরিবহন, সিনেমা হল পর্যটন কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তাহলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কী সমস্যা?
অটো পাশের যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং খারাপ ফলাফল হবে তা নিয়ে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞগণ এবং স্বয়ং ছাত্র-ছাত্রীরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মতামত/প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলেছেন। সরকার তা মানছে না।
করোনাকালে প্রায় বছরখানেক ধরে ঘরবন্দী থাকা তরুণ-কিশোর, শিশুদের মেধা, মনন, সামগ্রিক বিকাশে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে ও হচ্ছে। দরিদ্র শ্রেণির ছাত্ররা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে। অভাবের তাড়নায় তারা শ্রমিকের কাজ করছে। মেয়ে শিশুরা বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। ফলে তারা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে ব্যাপকভাবেই। তাছাড়া তরুণ-যুবকরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে, তাদের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেছে। করোনাকালে তরুণদের অদম্য শক্তি সাহসকে মতাদর্শিকভাবে উদ্বুদ্ধ করে গঠনমূলক কাজে ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যবস্থা এই সংকটের সমাধান দিতে সক্ষম নয়। প্রয়োজন এই ব্যবস্থারই রূপান্তর।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ভেঙে পড়া শিক্ষাব্যবস্থা এবং আওয়ামী সমাধান
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে ধ্বস নেমেছে, একই রকম ধ্বস নেমেছে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও। কোভিডের এক আঘাতেই সব গুড়িয়ে গেছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা প্রথমদিকে হয়ত সম্ভব ছিলনা। কিন্তু কিছুদিন পরই জীবনজীবিকার ফর্মূলায় আওয়ামী সরকার শ্রমিক, শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত জনগণকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে উৎপাদনে যুক্ত করেছে। তাতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না এবং নেই।
এ অবস্থায় তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষাকার্যক্রম চালু করতে পারতো। কিন্তু তা না করে তারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। সরকার সেটি শুরু করলে উচচ্চবিত্তদের সন্তানদের জন্য কিছু কার্যকরী হলেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক-কৃষক, নিম্ন-মধ্যবিত্তদের লক্ষ লক্ষ সন্তান রয়ে গেছে ডিজিটাল শিক্ষার বাইরে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধাও নেই। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষক বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ রিক্সা-ভ্যান চালিয়ে, কেউ কাঁচামালের ব্যবসা করে বিভিন্নভাবে রুজি-রোজগার করে দিনযাপন করছেন।
৭ অক্টোবর’২০ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি সহ সমমানের সকল পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এর আগে জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা বাতিল করে অটোপাশের ঘোষণা দিয়েছে। এইচ এসসিতেও অটোপাশ কিন্তু হাইকোর্টে আপিল করেও স্থগিত করা যায়নি ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে অনুষ্ঠিত উচ্চবিত্তের 'এ লেভেল', 'ও লেভেল' পরীক্ষা।
কওমি সংশ্লিষ্টদের দাবি মত সারা দেশে মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার এবং ২২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। দেশে করোনা ভাইরাস মহামারির শুরু থেকেই ওয়াজ মাহফিল, জুমার বয়ানসহ নানা জায়গায় বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে গেছেন কওমিপন্থী আলেমরা। ‘মুসলমানরা করোনা আক্রান্ত হবেন না’, ‘ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই, মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই’- ইত্যাদি। বেশিরভাগ কওমিপন্থী আলেমরা সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মানেন না, ব্যবহার করেন না মাস্ক। দেশের সব হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও হিফজখানা ১২ জুলাই থেকে চালুর অনুমতি দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২৪ আগস্ট মাদ্র্রাসার কিতাব বিভাগ খোলার অনুমতি দেয়। (১৬ অক্টোবর, বাংলা ট্রিবিউন )
প্রশ্ন এসে গেছে, দেশের কওমি শিক্ষাব্যবস্থা এবং কার্যক্রম নানা ভাবে চালু করার অনুমোদন দিয়েছে সরকার, তা হলে সরকারি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলা এবং পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না কেন? সারা দেশের শ্রমিক ও মধ্যবিত্তদের উৎপাদনের কাজে, ব্যবসা-বাণিজ্যে লাগানো হয়েছে; অফিস-আদালত, কল-কারখানা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সব ধরনের গণপরিবহন, সিনেমা হল পর্যটন কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তাহলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কী সমস্যা?
অটো পাশের যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং খারাপ ফলাফল হবে তা নিয়ে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞগণ এবং স্বয়ং ছাত্র-ছাত্রীরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মতামত/প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চলেছেন। সরকার তা মানছে না।
করোনাকালে প্রায় বছরখানেক ধরে ঘরবন্দী থাকা তরুণ-কিশোর, শিশুদের মেধা, মনন, সামগ্রিক বিকাশে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে ও হচ্ছে। দরিদ্র শ্রেণির ছাত্ররা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে। অভাবের তাড়নায় তারা শ্রমিকের কাজ করছে। মেয়ে শিশুরা বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। ফলে তারা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে ব্যাপকভাবেই। তাছাড়া তরুণ-যুবকরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে, তাদের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেছে। করোনাকালে তরুণদের অদম্য শক্তি সাহসকে মতাদর্শিকভাবে উদ্বুদ্ধ করে গঠনমূলক কাজে ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যবস্থা এই সংকটের সমাধান দিতে সক্ষম নয়। প্রয়োজন এই ব্যবস্থারই রূপান্তর।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র