জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব ও তাদের দেশীয় শিষ্যরা

আন্দোলন প্রতিবেদন
বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
বিশ্ব পরিসরে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠেছে, যা ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে অনেকটা ফেটে পড়েছে। মার্কিনের নেতৃত্বে এক-মেরু বিশ্বের পতন ঘটেছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী— এ দুই মেরু-বিশ্ব নির্মিত হচ্ছে দ্রুত গতিতে। এদের দ্বন্দ্বে বিশ্ব আজ পুনরায় তৃতীয় বিশ্ব-যুদ্ধের হুমকির মুখে রয়েছে।
এই যখন বিশ্ব-পরিস্থিতি তখন আমাদের দেশের দালাল শাসকশ্রেণি যে বড় ধরনে বিভক্ত হয়ে তাদের কামড়াকামড়ি তীব্র করে তুলবে তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে এ দ্বন্দ্ব, ও তার পেছনে তাদের প্রভুদের হাত চালানো অতি প্রকটভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আ লিক পরাশক্তি ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের অপতৎপরতা, যারা কিনা বিগত দুটো নির্বাচন কালে তাদের একান্ত অনুগত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে সমর্থ হয়েছিল তাদের সরাসরি ও নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের দ্বারা। বুর্জোয়া শাসকশ্রেণির সবাই বিদেশি হস্তক্ষেপ আর স্বাধীনতার কথা বলে চিৎকার করছে, আর প্রত্যেকেই বিদেশের সহায়তা প্রার্থনা করছে নিজ নিজ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য।
চীনকে মোকাবেলায় ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মার্কিনসহ তার মিত্ররা হাসিনা সরকারের সাথে চীনের দহরম-মহরমে বেশ রুষ্ট। এতে অসন্তুষ্ট ভারতও। আর তাইতো পশ্চিমারা ‘গণতন্ত্র’, ‘মানবাধিকার’, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের’ দোহাই তুলে স্যাংশন, ভিসা নীতি দিয়ে হাসিনা-আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলে পুরোপুরি তাদের ব্লকে নিতে চায়।
তবে এ ক্ষেত্রে বড় একটি পক্ষ হলো ভারত, যাকে মার্কিন সন্তুষ্ট রেখে বা অন্তত পক্ষে মানিয়ে নিয়ে এটা করতে চায়। কারণ, আঞ্চলিক ভাবে চীনের বিরুদ্ধে ভারত হলো মার্কিনের প্রধান স্তম্ভ। এছাড়া ভারতের মতো এক বিশাল বাজার, বিরাট সম্পদের ভান্ডার, আর এতো বড় এক সামরিক শক্তিকে সে বিপরীত শিবিরে ঠেলে দিতে চায় না। এখানেই হাসিনা-আওয়ামী সরকারের সুবিধাজনক এক জায়গা। যদিও দ্রুত বিকাশমান আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের কারণে চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন শুধু ভারতের মাধ্যমেই নয়, এখন সরাসরি ভাবেও বাংলাদেশকে নিজ নিরঙ্কুশ পক্ষভুক্ত করতে চায়। এ জায়গাটিতে আবার বিএনপিসহ বিরোধীদের শক্তির জায়গা। তাই, দেখা যাচ্ছে যে, পরিস্থিতি ২০১৪ বা ২০১৮ সালের জায়গায় নেই। এমনটা হওয়া এখন খুবই কঠিন যে, ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপে হাসিনা-আওয়ামী লীগের ক্ষমতা টিকে গেল, আর মার্কিন তাকে মেনে নিল। মার্কিন তাই ভিন্ন চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা ও তাদের অনুগত দেশীয় শিষ্যরা আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনগণের চরম ক্ষোভকে ব্যবহার করে সফল হবার চেষ্টা করছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সিন্ডিকেট, সন্ত্রাস, গুম, বিনাবিচারে হত্যা, ভোট ডাকাতি, বাক স্বাধীনতা হরণ, লুটপাট, অর্থ পাচারÑ এ ধরনের যাবতীয় অপকর্মে জনগণ বাস্তবেই এ অবস্থার পরিবর্তন চাইছেন। বিএনপি-জোটের সেটাও এক বড় শক্তি।
বিপরীতে চীন-রাশিয়া, পশ্চিমা বিরোধিতার জায়গা থেকে হাসিনার ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে সায় দিয়ে চলেছে। যা হাসিনার ক্ষমতার স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চীনা মোড়লদের আরও জোরালো ভূমিকা নিতে ইতিমধ্যেই সরকার দলীয় শরিক ইনু, মেনন, বড়–য়ারা তাদের দলবল নিয়ে চীন সফর করেছে। জোহান্সবার্গে ব্রিকস সম্মেলনে গিয়ে হাসিনা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর সাথেও বৈঠক করেছে। অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে, হাসিনার ঐতিহাসিক প্রভু ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হাসিনা-আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে দেনদরবার শুরু করেছে। আওয়ামী প্রতিনিধি দল কিংবা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হাসিনাও বিজেপির নেতৃবৃন্দ কিংবা মোদির সাথে বিভিন্ন ফোরামে সাক্ষাৎ করছে নির্বাচনী বৈতরনী পার পেতে। জাতীয় পার্টির নেতাকেও ভারত ডেকে নিয়েছে সাইজ করার জন্য। এমনকি সেপ্টেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি ২০ সম্মেলনেও হাসিনাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে ভারতের মধ্যস্থতায় বিদেশি মোড়লদের সাথে হাসিনার জোরালো ধরাধরি হবে। এ সম্মেলনের পূর্বে দু’দিনের সফরে আবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রি ঢাকা সফর করবে।
তবে এ নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট। দফায় দফায় তাদের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। রাষ্ট্র-সরকারের নীতি নির্ধারক, নির্বাচন কমিশন, বিরোধীদের সাথে বৈঠক করছে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, মার্কিন কংগ্রেস ম্যান, বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়কারী রিচার্ড ন্যাপিউ, মার্কিনের ইন্দো প্যাসিফিক কমাণ্ডের পরিচালকরা ঘুরে গেছে। অক্টোবরে বাংলাদেশ-মার্কিনের মধ্যে নিরাপত্তা সংলাপ, প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের ঢাকা সফর সবই হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। পাশাপাশি ব্রিটিশসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও তাদের সফর অব্যহত রেখেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ‘হাস সাহেব’, জাতিসংঘ প্রতিনিধি, জাপানসহ ‘উন্নয়ন’ সহযোগী হিসেবে দাবীদাররা সরকার বিরোধীদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকার দলীয় নানা কর্মকাণ্ডের উপর সমালোচনা মূলক বক্তব্য-বিবৃতি জারি রেখেছে। পশ্চিমাদের ‘অবাধ-সুষ্ঠু- অংশগ্রহণ মূলক’ নির্বাচনের দাবি বিএনপিসহ বিরোধীদেরকে পশ্চিমাদের আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে।
পশ্চিমা বা প্রাচ্য কিংবা প্রতিবেশী ভারত যখনি নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশ করছে, তখনি শাসকশ্রেণি লাজ শরমের বালাই না দেখিয়ে এক অংশ উৎফুল্লতা প্রকাশ করলে অপর অংশ হতাশা ব্যক্ত করছে। তাদের এ আচরণ দেখিয়ে দেয়/প্রমাণ করে ক্ষমতার সমীকরণে দেশের বুর্জোয়া নির্বাচনী ব্যবস্থার অসারতা। নির্বাচনী ফল নির্ধারণে জনগণ নয়Ñ সাম্রাজ্যবাদী-বিদেশি প্রভুদের আলোচনার টেবিলই মুখ্য অনুঘটক।
হাসিনার পক্ষে ক্ষমতায় থাকা না থাকা যেমন বাঁচা মরার প্রশ্ন। তেমনি মার্কিনের জন্যেও আমাদের মতো দেশগুলোতে চীন-রাশিয়ার প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণকে আটকে দেয়াটা অতি-জরুরি হয়ে পড়েছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে এগিয়ে থাকার জন্য সাগর, স্থল, আকাশপথে চীনকে ঘেরাও করে ফেলা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তার কর্তৃত্বের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের উপর তার নিয়ন্ত্রণও জরুরি। কিন্তু হাসিনার ‘উন্নয়ন’-এর চাকা মার্কিন বিরোধী চীনা সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও রুশ সাম্রাজ্যবাদের সাথে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে যে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রায় অসম্ভব। তেমনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে বাইরে যতই হম্বি-তম্বি করুক, ভেতরে ভেতরে তারা মার্কিনকে হাতে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টাই চালাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের আশীবার্দ সর্বসময়ের জন্য তারা ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে শাসকশ্রেণির বিভিন্ন গোষ্ঠীর এ নির্লজ্জ তোষণনীতি দেশ ও জনগণকে সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী শেকলে আরো শক্তভাবে আবদ্ধকরণকে জোরদার করবে। তাই, শ্রমিক-কৃষক-দরিদ্র ও সাধারণ মধ্যবিত্ত জনগণকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ অবসানের লক্ষ্যে তাদের আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদী ও ভারতীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও রুখে দঁাড়াতে হবে। মুখোশ উন্মোচন করতে হবে তাদের দেশীয় দালালদের ও তাদের তথাকথিত স্বাধীনতার গলাবাজির।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব ও তাদের দেশীয় শিষ্যরা
বিশ্ব পরিসরে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠেছে, যা ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে অনেকটা ফেটে পড়েছে। মার্কিনের নেতৃত্বে এক-মেরু বিশ্বের পতন ঘটেছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী— এ দুই মেরু-বিশ্ব নির্মিত হচ্ছে দ্রুত গতিতে। এদের দ্বন্দ্বে বিশ্ব আজ পুনরায় তৃতীয় বিশ্ব-যুদ্ধের হুমকির মুখে রয়েছে।
এই যখন বিশ্ব-পরিস্থিতি তখন আমাদের দেশের দালাল শাসকশ্রেণি যে বড় ধরনে বিভক্ত হয়ে তাদের কামড়াকামড়ি তীব্র করে তুলবে তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে এ দ্বন্দ্ব, ও তার পেছনে তাদের প্রভুদের হাত চালানো অতি প্রকটভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আ লিক পরাশক্তি ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের অপতৎপরতা, যারা কিনা বিগত দুটো নির্বাচন কালে তাদের একান্ত অনুগত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে সমর্থ হয়েছিল তাদের সরাসরি ও নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের দ্বারা। বুর্জোয়া শাসকশ্রেণির সবাই বিদেশি হস্তক্ষেপ আর স্বাধীনতার কথা বলে চিৎকার করছে, আর প্রত্যেকেই বিদেশের সহায়তা প্রার্থনা করছে নিজ নিজ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য।
চীনকে মোকাবেলায় ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মার্কিনসহ তার মিত্ররা হাসিনা সরকারের সাথে চীনের দহরম-মহরমে বেশ রুষ্ট। এতে অসন্তুষ্ট ভারতও। আর তাইতো পশ্চিমারা ‘গণতন্ত্র’, ‘মানবাধিকার’, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের’ দোহাই তুলে স্যাংশন, ভিসা নীতি দিয়ে হাসিনা-আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলে পুরোপুরি তাদের ব্লকে নিতে চায়।
তবে এ ক্ষেত্রে বড় একটি পক্ষ হলো ভারত, যাকে মার্কিন সন্তুষ্ট রেখে বা অন্তত পক্ষে মানিয়ে নিয়ে এটা করতে চায়। কারণ, আঞ্চলিক ভাবে চীনের বিরুদ্ধে ভারত হলো মার্কিনের প্রধান স্তম্ভ। এছাড়া ভারতের মতো এক বিশাল বাজার, বিরাট সম্পদের ভান্ডার, আর এতো বড় এক সামরিক শক্তিকে সে বিপরীত শিবিরে ঠেলে দিতে চায় না। এখানেই হাসিনা-আওয়ামী সরকারের সুবিধাজনক এক জায়গা। যদিও দ্রুত বিকাশমান আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের কারণে চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন শুধু ভারতের মাধ্যমেই নয়, এখন সরাসরি ভাবেও বাংলাদেশকে নিজ নিরঙ্কুশ পক্ষভুক্ত করতে চায়। এ জায়গাটিতে আবার বিএনপিসহ বিরোধীদের শক্তির জায়গা। তাই, দেখা যাচ্ছে যে, পরিস্থিতি ২০১৪ বা ২০১৮ সালের জায়গায় নেই। এমনটা হওয়া এখন খুবই কঠিন যে, ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপে হাসিনা-আওয়ামী লীগের ক্ষমতা টিকে গেল, আর মার্কিন তাকে মেনে নিল। মার্কিন তাই ভিন্ন চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা ও তাদের অনুগত দেশীয় শিষ্যরা আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনগণের চরম ক্ষোভকে ব্যবহার করে সফল হবার চেষ্টা করছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সিন্ডিকেট, সন্ত্রাস, গুম, বিনাবিচারে হত্যা, ভোট ডাকাতি, বাক স্বাধীনতা হরণ, লুটপাট, অর্থ পাচারÑ এ ধরনের যাবতীয় অপকর্মে জনগণ বাস্তবেই এ অবস্থার পরিবর্তন চাইছেন। বিএনপি-জোটের সেটাও এক বড় শক্তি।
বিপরীতে চীন-রাশিয়া, পশ্চিমা বিরোধিতার জায়গা থেকে হাসিনার ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে সায় দিয়ে চলেছে। যা হাসিনার ক্ষমতার স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চীনা মোড়লদের আরও জোরালো ভূমিকা নিতে ইতিমধ্যেই সরকার দলীয় শরিক ইনু, মেনন, বড়–য়ারা তাদের দলবল নিয়ে চীন সফর করেছে। জোহান্সবার্গে ব্রিকস সম্মেলনে গিয়ে হাসিনা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর সাথেও বৈঠক করেছে। অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে, হাসিনার ঐতিহাসিক প্রভু ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হাসিনা-আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে দেনদরবার শুরু করেছে। আওয়ামী প্রতিনিধি দল কিংবা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হাসিনাও বিজেপির নেতৃবৃন্দ কিংবা মোদির সাথে বিভিন্ন ফোরামে সাক্ষাৎ করছে নির্বাচনী বৈতরনী পার পেতে। জাতীয় পার্টির নেতাকেও ভারত ডেকে নিয়েছে সাইজ করার জন্য। এমনকি সেপ্টেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি ২০ সম্মেলনেও হাসিনাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে ভারতের মধ্যস্থতায় বিদেশি মোড়লদের সাথে হাসিনার জোরালো ধরাধরি হবে। এ সম্মেলনের পূর্বে দু’দিনের সফরে আবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রি ঢাকা সফর করবে।
তবে এ নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট। দফায় দফায় তাদের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। রাষ্ট্র-সরকারের নীতি নির্ধারক, নির্বাচন কমিশন, বিরোধীদের সাথে বৈঠক করছে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, মার্কিন কংগ্রেস ম্যান, বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়কারী রিচার্ড ন্যাপিউ, মার্কিনের ইন্দো প্যাসিফিক কমাণ্ডের পরিচালকরা ঘুরে গেছে। অক্টোবরে বাংলাদেশ-মার্কিনের মধ্যে নিরাপত্তা সংলাপ, প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের ঢাকা সফর সবই হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। পাশাপাশি ব্রিটিশসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও তাদের সফর অব্যহত রেখেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ‘হাস সাহেব’, জাতিসংঘ প্রতিনিধি, জাপানসহ ‘উন্নয়ন’ সহযোগী হিসেবে দাবীদাররা সরকার বিরোধীদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকার দলীয় নানা কর্মকাণ্ডের উপর সমালোচনা মূলক বক্তব্য-বিবৃতি জারি রেখেছে। পশ্চিমাদের ‘অবাধ-সুষ্ঠু- অংশগ্রহণ মূলক’ নির্বাচনের দাবি বিএনপিসহ বিরোধীদেরকে পশ্চিমাদের আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে।
পশ্চিমা বা প্রাচ্য কিংবা প্রতিবেশী ভারত যখনি নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশ করছে, তখনি শাসকশ্রেণি লাজ শরমের বালাই না দেখিয়ে এক অংশ উৎফুল্লতা প্রকাশ করলে অপর অংশ হতাশা ব্যক্ত করছে। তাদের এ আচরণ দেখিয়ে দেয়/প্রমাণ করে ক্ষমতার সমীকরণে দেশের বুর্জোয়া নির্বাচনী ব্যবস্থার অসারতা। নির্বাচনী ফল নির্ধারণে জনগণ নয়Ñ সাম্রাজ্যবাদী-বিদেশি প্রভুদের আলোচনার টেবিলই মুখ্য অনুঘটক।
হাসিনার পক্ষে ক্ষমতায় থাকা না থাকা যেমন বাঁচা মরার প্রশ্ন। তেমনি মার্কিনের জন্যেও আমাদের মতো দেশগুলোতে চীন-রাশিয়ার প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণকে আটকে দেয়াটা অতি-জরুরি হয়ে পড়েছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে এগিয়ে থাকার জন্য সাগর, স্থল, আকাশপথে চীনকে ঘেরাও করে ফেলা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তার কর্তৃত্বের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের উপর তার নিয়ন্ত্রণও জরুরি। কিন্তু হাসিনার ‘উন্নয়ন’-এর চাকা মার্কিন বিরোধী চীনা সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও রুশ সাম্রাজ্যবাদের সাথে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে যে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রায় অসম্ভব। তেমনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে বাইরে যতই হম্বি-তম্বি করুক, ভেতরে ভেতরে তারা মার্কিনকে হাতে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টাই চালাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের আশীবার্দ সর্বসময়ের জন্য তারা ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে শাসকশ্রেণির বিভিন্ন গোষ্ঠীর এ নির্লজ্জ তোষণনীতি দেশ ও জনগণকে সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী শেকলে আরো শক্তভাবে আবদ্ধকরণকে জোরদার করবে। তাই, শ্রমিক-কৃষক-দরিদ্র ও সাধারণ মধ্যবিত্ত জনগণকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ অবসানের লক্ষ্যে তাদের আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদী ও ভারতীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও রুখে দঁাড়াতে হবে। মুখোশ উন্মোচন করতে হবে তাদের দেশীয় দালালদের ও তাদের তথাকথিত স্বাধীনতার গলাবাজির।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র