“পেয়ারা বাগান” সহ প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র ইতিহাস তুলে ধরতে হবে

আন্দোলন প্রতিবেদন
মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২১ | অনলাইন সংস্করণ
’৭১-র মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক অনবদ্য ঘটনা। এ যুদ্ধ সংঘটন বা ভূমিকায় ছিল বিভিন্ন শ্রেণি-চিন্তার সংমিশ্রণ। সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট আওয়ামী-সিপিবি’র নেতৃত্বাধীন অংশ বাদে দেশের জনগণের এক বড় অংশ ছিল সকল বিদেশি আধিপত্য বা প্রভাবমুক্ত সত্যিকার জাতীয় মুক্তির পক্ষে। এই জনগণই তাদের উপর চেপে বসা জাতি-বর্ণ-সম্প্রদায়-লিঙ্গীয় বা শ্রেণিগত সকল ধরেনর শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির জন্য পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
সেই যুদ্ধে দেশের মাটিতে আত্মনির্ভরতার ভিত্তিতে বরিশাল-মাদারীপুর-যশোহর-নড়াইল-খুলনা-পাবনা- টাঙ্গাইল- রাজশাহী- নোয়াখালী- নরসিংদীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রতিরোধ যুদ্ধের পাশাপাশি গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠার এক অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছিল। যার নেতৃত্বে ছিলেন কথিত নকশাল-সর্বহারা নামে পরিচিত মাওপন্থি/মাওবাদী বিপ্লবীরা। বহুধারায় বিভক্ত এ শক্তির অনেক ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি ছিল নানাবিধ সীমাবদ্ধতা/বিচ্যুতি। রুশ-ভারতের মদদে আওয়ামী মুক্তি বাহিনীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত-অন্তর্ঘাতমূলক, আগ্রাসী তৎপরতায় এ শক্তিগুলোর বিপুল ক্ষতি হয়। ফলে মাওপন্থিদের নেতৃত্বে জনগণের আশাজাগানিয়া সংগ্রাম গড়ে উঠলেও তা নির্ধারক শক্তিরূপে টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত শক্তির পরাজয়ের ফলে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয় তা নামসর্বস্ব স্বাধীনতা-গণতন্ত্র, যা জনগণের কোনো কাজে আসেনি। অল্প পরেই মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করেন।
আজ মুক্তিযুদ্ধের ৫০তম বার্ষিকী বা সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র দাবিদার ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার মিথ্যা ইতিহাস বয়ান করছে। তাতে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের ভূমিকাকে তাদের গোষ্ঠীগত স্বার্থ থেকে তুলে ধরছে। তাদের পলায়নবাদী-আত্মসমর্পণবাদী, ভারতের দালালী কার্যক্রমকে আড়াল করে জঘন্য ইতিহাস-বিকৃতি ও জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। তারা বিশ্বাসঘাতকদের বানাচ্ছে বীর আর জনগণের সত্যিকার বীরদের ইতিহাসকে গায়েব করে দিচ্ছে।
তাই আজকে শাসকশ্রেণির ও তাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের শঠতাপূর্ণভাবে ইতিহাস বয়ান ও উদযাপনকে খণ্ডন করা জরুরি। আর তা সম্ভব কেবলমাত্র বিপ্লবী অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে তুলে ধরলে। বিপ্লবীদের দ্বারা রচিত ইতিহাস হতে হবে প্রকৃতপক্ষে বাস্তব সত্যনির্ভর। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর ইতিহাসের সেই সময়কে তুলে ধরা ও মূল্যায়ন করতে হবে আজকের অগ্রসর বিপ্লবী অবস্থানের আলোকে। সে সময়কার ঐতিহাসিক বিবিধ বিচ্যুতি বা সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ নির্মোহভাবে, সকল ধরেনর দলীয়/গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থেকে। আজকের বিপ্লবী সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার প্রয়োজনের তাগিদ থেকে। ‘পেয়ারা বাগান ৫০-তম বার্ষিকী উদযাপন কমিটি’নামে যে সংস্থাটি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত/বিপ্লবী ইতিহাসকে তুলে ধরতে চাচ্ছে তাদের প্রচেষ্টার মধ্যে এই সচেতনতার অভাব দেখা যায়। তারা দেশের বহু অঞ্চলে ব্যাপ্ত বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রামকে সামগ্রিকভাবে তুলে না ধরে তৎকালে যে সংকীর্ণতা ও বিভেদবাদী ধারা দ্বারা বিভিন্ন মাওবাদী কেন্দ্রগুলো কাজ করেছে তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এটা শাসকশ্রেণির শক্তিশালী প্রতিক্রিয়াশীল তৎপরতার বিরুদ্ধে জনগণের প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে খণ্ডিত করে দেয় এবং তাদের ঐক্যের পথে বাধার সৃষ্টি করে।
মুক্তিযুদ্ধে মাওবাদীদের গৌরবোজ্জ্বল লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস আজকের বিপ্লব প্রয়াসীদের জন্য গভীর শিক্ষার পাশাপাশি উদ্দীপনারও এক বড় ক্ষেত্র। ’৭১-সালের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর আজ যখন আমরা বিপ্লবী ঐতিহ্যকে তুলে ধরবো তখন তার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বর্তমানের বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও তার শাসকশ্রেণির, বিশেষত ভারত-আওয়ামী ভুয়া চেতনাকে বিরোধিতা করা, উন্মোচন করা এবং ’৭১-সালের প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধকে সমগ্রভাবে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। পেয়ারাবাগান সে ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটাই সবটা নয়। এদেশের আরো অনেক বিপ্লবী সংগঠন ও জনগণ ভারত-আওয়ামী ষড়যন্ত্রের বাইরে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছিলেন, যার ইতিহাস বিভিন্ন কারণে আজ প্রায় বিস্মৃত।
আজকের বাস্তবতা ও অগ্রসর সচেতনতা থেকে প্রয়োজন হলো শক্তিশালী ও ক্ষমতাসীন ভুয়া চেতনার বিপরীতে ’৭১-এর এই সমগ্র ইতিহাসটিকে তুলে ধরা, যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পেয়ারাবাগানের সংগ্রামও অবশ্যই থাকতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মাওবাদী কেন্দ্রগুলো ছিল বহুধা বিভক্ত। তখনকার বাস্তবতায় মাওবাদের উপলব্ধি ও তার বাস্তব অনুশীলনে ছিল ঐতিহাসিকভাবে বিবিধ সীমাবদ্ধতা। বিভক্ত কেন্দ্রগুলোর মাঝে সেই সময় সংযোগ-সম্পর্ক বা ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক ছিল না। উপরন্তু ছিল পরস্পরের প্রতি বিভেদ, এককভাবে নিজেদেরকে সঠিক প্রতিপন্ন করার মনোভাব। ফলে মাওবাদী নেতৃত্বে যৌথ কমান্ডের ভিত্তিতে এই প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধ শক্তিশালীভাবে পরিচালিত হতে ব্যর্থ হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে এটি ছিল মাওবাদীদের বড় ধরেনর দূর্বলতা।
একথা সত্য মুক্তিযুদ্ধে অত্যুজ্জ্বল ভূমিকায় অবতীর্ণ মাওবাদী নেতৃত্বের এক বড় অংশই পরবর্তীতে সুবিধাবাদী-সংশোধনবাদী বা এমনকি প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিতে অধঃপতিত হয়। ফলে তাদের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের সেই ইতিহাস উঠে আসেনি। যা এসেছে তাতে বহু ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক অভিমত রয়েছে। তাই, সেই সমগ্র ইতিহাস তুলে ধরার দায়িত্ব এখন প্রকৃত মাওবাদীদেরই। সে দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হওয়ার অর্থ হলো প্রকৃত/বিপ্লবী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিকভাবে, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ও বর্তমান বিপ্লবী কর্তব্যের স্বার্থে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা।
৬০/৭০-দশকের ত্রুটি-বিচ্যুতিকে ধারণ করে আজকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করতে গেলে তা হবে অনেকাংশে খণ্ডিত, একপেশে বা সংকীর্ণতার দোষে দুষ্ট। সেই সময়কার ভুলগুলো ছিল অনেকাংশে ঐতিহাসিক সীমাবদ্ধতা, আজকে যা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। ৫০ বছর পর এ ধরেনর ভুল মাওবাদী আন্দোলনের অগ্রগতির পক্ষে সহায়ক তো নয়ই, বরঞ্চ প্রতিবন্ধক। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে তুলে ধরতে হলে সামগ্রিকতার অংশ হিসেবে পেয়ারা বাগানের স্পিরিটকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা এক জিনিস, আর পেয়ারা বাগানকেই একমাত্র করা ভিন্ন বিষয়। যা চূড়ান্ত বিচারে জনগণের মুক্তির সংগ্রামকেই আজ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের গভীর সচেতনতা আবশ্যক।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
“পেয়ারা বাগান” সহ প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র ইতিহাস তুলে ধরতে হবে
’৭১-র মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক অনবদ্য ঘটনা। এ যুদ্ধ সংঘটন বা ভূমিকায় ছিল বিভিন্ন শ্রেণি-চিন্তার সংমিশ্রণ। সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট আওয়ামী-সিপিবি’র নেতৃত্বাধীন অংশ বাদে দেশের জনগণের এক বড় অংশ ছিল সকল বিদেশি আধিপত্য বা প্রভাবমুক্ত সত্যিকার জাতীয় মুক্তির পক্ষে। এই জনগণই তাদের উপর চেপে বসা জাতি-বর্ণ-সম্প্রদায়-লিঙ্গীয় বা শ্রেণিগত সকল ধরেনর শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির জন্য পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
সেই যুদ্ধে দেশের মাটিতে আত্মনির্ভরতার ভিত্তিতে বরিশাল-মাদারীপুর-যশোহর-নড়াইল-খুলনা-পাবনা- টাঙ্গাইল- রাজশাহী- নোয়াখালী- নরসিংদীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রতিরোধ যুদ্ধের পাশাপাশি গণক্ষমতা প্রতিষ্ঠার এক অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছিল। যার নেতৃত্বে ছিলেন কথিত নকশাল-সর্বহারা নামে পরিচিত মাওপন্থি/মাওবাদী বিপ্লবীরা। বহুধারায় বিভক্ত এ শক্তির অনেক ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি ছিল নানাবিধ সীমাবদ্ধতা/বিচ্যুতি। রুশ-ভারতের মদদে আওয়ামী মুক্তি বাহিনীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত-অন্তর্ঘাতমূলক, আগ্রাসী তৎপরতায় এ শক্তিগুলোর বিপুল ক্ষতি হয়। ফলে মাওপন্থিদের নেতৃত্বে জনগণের আশাজাগানিয়া সংগ্রাম গড়ে উঠলেও তা নির্ধারক শক্তিরূপে টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত শক্তির পরাজয়ের ফলে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয় তা নামসর্বস্ব স্বাধীনতা-গণতন্ত্র, যা জনগণের কোনো কাজে আসেনি। অল্প পরেই মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করেন।
আজ মুক্তিযুদ্ধের ৫০তম বার্ষিকী বা সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র দাবিদার ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার মিথ্যা ইতিহাস বয়ান করছে। তাতে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের ভূমিকাকে তাদের গোষ্ঠীগত স্বার্থ থেকে তুলে ধরছে। তাদের পলায়নবাদী-আত্মসমর্পণবাদী, ভারতের দালালী কার্যক্রমকে আড়াল করে জঘন্য ইতিহাস-বিকৃতি ও জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। তারা বিশ্বাসঘাতকদের বানাচ্ছে বীর আর জনগণের সত্যিকার বীরদের ইতিহাসকে গায়েব করে দিচ্ছে।
তাই আজকে শাসকশ্রেণির ও তাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের শঠতাপূর্ণভাবে ইতিহাস বয়ান ও উদযাপনকে খণ্ডন করা জরুরি। আর তা সম্ভব কেবলমাত্র বিপ্লবী অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে তুলে ধরলে। বিপ্লবীদের দ্বারা রচিত ইতিহাস হতে হবে প্রকৃতপক্ষে বাস্তব সত্যনির্ভর। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর ইতিহাসের সেই সময়কে তুলে ধরা ও মূল্যায়ন করতে হবে আজকের অগ্রসর বিপ্লবী অবস্থানের আলোকে। সে সময়কার ঐতিহাসিক বিবিধ বিচ্যুতি বা সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ নির্মোহভাবে, সকল ধরেনর দলীয়/গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থেকে। আজকের বিপ্লবী সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার প্রয়োজনের তাগিদ থেকে। ‘পেয়ারা বাগান ৫০-তম বার্ষিকী উদযাপন কমিটি’নামে যে সংস্থাটি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত/বিপ্লবী ইতিহাসকে তুলে ধরতে চাচ্ছে তাদের প্রচেষ্টার মধ্যে এই সচেতনতার অভাব দেখা যায়। তারা দেশের বহু অঞ্চলে ব্যাপ্ত বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রামকে সামগ্রিকভাবে তুলে না ধরে তৎকালে যে সংকীর্ণতা ও বিভেদবাদী ধারা দ্বারা বিভিন্ন মাওবাদী কেন্দ্রগুলো কাজ করেছে তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এটা শাসকশ্রেণির শক্তিশালী প্রতিক্রিয়াশীল তৎপরতার বিরুদ্ধে জনগণের প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে খণ্ডিত করে দেয় এবং তাদের ঐক্যের পথে বাধার সৃষ্টি করে।
মুক্তিযুদ্ধে মাওবাদীদের গৌরবোজ্জ্বল লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস আজকের বিপ্লব প্রয়াসীদের জন্য গভীর শিক্ষার পাশাপাশি উদ্দীপনারও এক বড় ক্ষেত্র। ’৭১-সালের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর আজ যখন আমরা বিপ্লবী ঐতিহ্যকে তুলে ধরবো তখন তার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বর্তমানের বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও তার শাসকশ্রেণির, বিশেষত ভারত-আওয়ামী ভুয়া চেতনাকে বিরোধিতা করা, উন্মোচন করা এবং ’৭১-সালের প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধকে সমগ্রভাবে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। পেয়ারাবাগান সে ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটাই সবটা নয়। এদেশের আরো অনেক বিপ্লবী সংগঠন ও জনগণ ভারত-আওয়ামী ষড়যন্ত্রের বাইরে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছিলেন, যার ইতিহাস বিভিন্ন কারণে আজ প্রায় বিস্মৃত।
আজকের বাস্তবতা ও অগ্রসর সচেতনতা থেকে প্রয়োজন হলো শক্তিশালী ও ক্ষমতাসীন ভুয়া চেতনার বিপরীতে ’৭১-এর এই সমগ্র ইতিহাসটিকে তুলে ধরা, যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পেয়ারাবাগানের সংগ্রামও অবশ্যই থাকতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মাওবাদী কেন্দ্রগুলো ছিল বহুধা বিভক্ত। তখনকার বাস্তবতায় মাওবাদের উপলব্ধি ও তার বাস্তব অনুশীলনে ছিল ঐতিহাসিকভাবে বিবিধ সীমাবদ্ধতা। বিভক্ত কেন্দ্রগুলোর মাঝে সেই সময় সংযোগ-সম্পর্ক বা ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক ছিল না। উপরন্তু ছিল পরস্পরের প্রতি বিভেদ, এককভাবে নিজেদেরকে সঠিক প্রতিপন্ন করার মনোভাব। ফলে মাওবাদী নেতৃত্বে যৌথ কমান্ডের ভিত্তিতে এই প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধ শক্তিশালীভাবে পরিচালিত হতে ব্যর্থ হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে এটি ছিল মাওবাদীদের বড় ধরেনর দূর্বলতা।
একথা সত্য মুক্তিযুদ্ধে অত্যুজ্জ্বল ভূমিকায় অবতীর্ণ মাওবাদী নেতৃত্বের এক বড় অংশই পরবর্তীতে সুবিধাবাদী-সংশোধনবাদী বা এমনকি প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিতে অধঃপতিত হয়। ফলে তাদের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের সেই ইতিহাস উঠে আসেনি। যা এসেছে তাতে বহু ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক অভিমত রয়েছে। তাই, সেই সমগ্র ইতিহাস তুলে ধরার দায়িত্ব এখন প্রকৃত মাওবাদীদেরই। সে দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হওয়ার অর্থ হলো প্রকৃত/বিপ্লবী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিকভাবে, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ও বর্তমান বিপ্লবী কর্তব্যের স্বার্থে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা।
৬০/৭০-দশকের ত্রুটি-বিচ্যুতিকে ধারণ করে আজকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করতে গেলে তা হবে অনেকাংশে খণ্ডিত, একপেশে বা সংকীর্ণতার দোষে দুষ্ট। সেই সময়কার ভুলগুলো ছিল অনেকাংশে ঐতিহাসিক সীমাবদ্ধতা, আজকে যা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। ৫০ বছর পর এ ধরেনর ভুল মাওবাদী আন্দোলনের অগ্রগতির পক্ষে সহায়ক তো নয়ই, বরঞ্চ প্রতিবন্ধক। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে তুলে ধরতে হলে সামগ্রিকতার অংশ হিসেবে পেয়ারা বাগানের স্পিরিটকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা এক জিনিস, আর পেয়ারা বাগানকেই একমাত্র করা ভিন্ন বিষয়। যা চূড়ান্ত বিচারে জনগণের মুক্তির সংগ্রামকেই আজ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের গভীর সচেতনতা আবশ্যক।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র