পরিমণিদের হয়রানিঃ নারীর অপমাননা ও নারী-বাণিজ্যের হোতাদের আড়াল করার মহড়া

আন্দোলন প্রতিবেদন
বুধবার, ২৫ আগস্ট ২০২১ | অনলাইন সংস্করণ
সরকারি বাহিনী আওয়ামী নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে দিয়ে শুরু করেছে। এখন অভিনেত্রী-মডেলদের গ্রেপ্তার করে সরকার তথাকথিত মাদক-প্রতারক বিরোধী অভিযান করছে। এদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র অভিযোগ করছে, তাদের বাসায় বিদেশী মদ এবং ভয়ংকর মাদক পাওয়া গেছে, তারা নাচ-গানের আসর বসিয়ে‘ভদ্র-ধনী’ ব্যক্তিদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতো- ইত্যাদি।
রাষ্ট্র পরিমণিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করছে সেগুলো সঠিক না বেঠিক সেটা আমরা জানিনা। এরা এবং এদের বাসস্থান-যাতায়াতের জায়গাগুলো কোনো গোপন কিছু নয়। এরা কেউই এ রাষ্ট্রে অপরিচিত কেউ নয়। যেমন অপরিচিত ছিল না সম্রাট, পাপিয়া, সাহেদ- ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম অনেক কিছ্ইু এ রাষ্ট্রে বহাল তবিয়তে চলতে থাকে। কিন্তু কোনো কারণে যদি কাউকে দোষী করার প্রয়োজন হয় তখন দেখা যায় যে, তার বাসা থেকে ‘বিদেশি মদ’আর ইয়াবা পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে ‘অবৈধ’ অস্ত্রও পাওয়া যায়। তদন্ত চলতে থাকে। কিন্তু পেছনের প্রকৃত গডফাদারদের নাম আর প্রকাশ হয় না। কেউ কেউ আটকে পড়লেও কিছু পরে মিডিয়া ঠান্ডা হলে তারা জামিনে মুক্তি পায়, বা মামলা থেকে অব্যাহতি পায়। ‘আইন নিজের গতিতে চলে’। যেমন, এমপি হাজী সেলিমের সুযোগ্য ছেলে, বা মুনিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনাদানকারী অভিযুক্ত বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক- ইত্যাদি।
এবার পরিমণিদের তথাকথিত প্রতারণার শিকার এই ‘ভদ্র-সন্তান’রা কারা? যারা এখানে ফূর্তি করতে আসতো বলে বলা হচ্ছে তাদের অর্থের উৎস কী? এসব কিন্তু থেকে যাচ্ছে এই হম্বি-তম্বির আড়ালেই।
আজ এই নারীদের অভিযুক্ত করে সরকারি বাহিনী গ্রেপ্তার, মামলা, রিমান্ড, আদালতে সোপর্দ এবং কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। তাদের নামে মিডিয়ায় অপমাননাকর প্রচার চলছে। যা নারী-নিপীড়নে মিডিয়া ট্রায়াল ছাড়া আর কিছু নয়। রিমান্ডে নিয়ে পরীমণিদের তথাকথিত অপকর্মের পিছনের গডফাদারদের ধরার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই গডফাদার কারা তা কিন্তু বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে মডেল তারকাদের পিছনে বহু নারীসহ গ্যাং রয়েছে। মদ-ইয়াবা, নারী, কেসিনো ব্যবসা বাংলাদেশে হরদম চলছে। এই সব ব্যবসার মূল নায়ক যে শাসকশ্রেণির উপর তলার মানুষ তাতো গোপন নয়, যা সাম্রাজ্যবাদ, দালাল আমলা-মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া অর্থনীতি-সংস্কৃতির অংশ। শাসকশ্রেণির লোকজনই বিভিন্ন নাইট ক্লাবে এই সব অপসংস্কৃতির আয়োজন করে। যা দেশের তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী করেছে এবং করছে। এই কাজে তারা নারীদের যৌন-পণ্য হিসাবে ব্যবহার করে। পরীমণিদের কেউ কেউ এই ব্যবস্থার শিকার এবং অংশ হয়ে যান। বিনিময়ে তারা মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করেন। সমাজে প্রতিপত্তিও পান। কেউ কেউ পরে বুর্জোয়া দলগুলোর নেতা, এমপি, মন্ত্রীও হতে পারেন।
গত জুলাই মাসে পরীমণি গুলশানের বোটক্লাবের এক কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে (জাতীয় পার্টির এমনপি) ধর্ষণ-হত্যার অভিযোগ করে মামলা করেছিলেন। হেলেনা জাহাঙ্গীরেরও এমন হোমরা-চোমরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বলে জানা যায়। মাদক বিরোধী অভিযানের নামে উক্ত অভিযুক্তদের হয়ে প্রতিশোধ নেওয়া, নাকি অভিযুক্তদের বাঁচানোর কৌশল, নাকি এই নারীরা শাসকশ্রেণির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের শিকার- সেটা এক বড় প্রশ্ন। কারণ এই সরকারের আমলেই আমরা বিগত দিনে তথাকথিত মাদক বিরোধী অভিযান দেখেছি। চট্টগ্রামের বদি এমপিসহ মাদক সম্রাটদের অক্ষত রেখে সারা দেশে চুনোপুঁটিদের গণহত্যা করেছে এই ফ্যাসিবাদী সরকার। বুর্জোয়া অপসংস্কৃতির রক্ষকদের এই অভিযানই উক্ত প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
তাই সর্বস্তরের নিপীড়িত নারীদের এই মুৎসুদ্দি সংস্কৃতির উচ্ছেদ ও তার বেড়াজাল থেকে নারীদের মুক্ত করার জন্য সোচ্চার ও শক্তিশালী নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পরিমণিদের হয়রানিঃ নারীর অপমাননা ও নারী-বাণিজ্যের হোতাদের আড়াল করার মহড়া
সরকারি বাহিনী আওয়ামী নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে দিয়ে শুরু করেছে। এখন অভিনেত্রী-মডেলদের গ্রেপ্তার করে সরকার তথাকথিত মাদক-প্রতারক বিরোধী অভিযান করছে। এদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র অভিযোগ করছে, তাদের বাসায় বিদেশী মদ এবং ভয়ংকর মাদক পাওয়া গেছে, তারা নাচ-গানের আসর বসিয়ে‘ভদ্র-ধনী’ ব্যক্তিদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতো- ইত্যাদি।
রাষ্ট্র পরিমণিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করছে সেগুলো সঠিক না বেঠিক সেটা আমরা জানিনা। এরা এবং এদের বাসস্থান-যাতায়াতের জায়গাগুলো কোনো গোপন কিছু নয়। এরা কেউই এ রাষ্ট্রে অপরিচিত কেউ নয়। যেমন অপরিচিত ছিল না সম্রাট, পাপিয়া, সাহেদ- ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম অনেক কিছ্ইু এ রাষ্ট্রে বহাল তবিয়তে চলতে থাকে। কিন্তু কোনো কারণে যদি কাউকে দোষী করার প্রয়োজন হয় তখন দেখা যায় যে, তার বাসা থেকে ‘বিদেশি মদ’আর ইয়াবা পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে ‘অবৈধ’ অস্ত্রও পাওয়া যায়। তদন্ত চলতে থাকে। কিন্তু পেছনের প্রকৃত গডফাদারদের নাম আর প্রকাশ হয় না। কেউ কেউ আটকে পড়লেও কিছু পরে মিডিয়া ঠান্ডা হলে তারা জামিনে মুক্তি পায়, বা মামলা থেকে অব্যাহতি পায়। ‘আইন নিজের গতিতে চলে’। যেমন, এমপি হাজী সেলিমের সুযোগ্য ছেলে, বা মুনিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনাদানকারী অভিযুক্ত বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক- ইত্যাদি।
এবার পরিমণিদের তথাকথিত প্রতারণার শিকার এই ‘ভদ্র-সন্তান’রা কারা? যারা এখানে ফূর্তি করতে আসতো বলে বলা হচ্ছে তাদের অর্থের উৎস কী? এসব কিন্তু থেকে যাচ্ছে এই হম্বি-তম্বির আড়ালেই।
আজ এই নারীদের অভিযুক্ত করে সরকারি বাহিনী গ্রেপ্তার, মামলা, রিমান্ড, আদালতে সোপর্দ এবং কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। তাদের নামে মিডিয়ায় অপমাননাকর প্রচার চলছে। যা নারী-নিপীড়নে মিডিয়া ট্রায়াল ছাড়া আর কিছু নয়। রিমান্ডে নিয়ে পরীমণিদের তথাকথিত অপকর্মের পিছনের গডফাদারদের ধরার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই গডফাদার কারা তা কিন্তু বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে মডেল তারকাদের পিছনে বহু নারীসহ গ্যাং রয়েছে। মদ-ইয়াবা, নারী, কেসিনো ব্যবসা বাংলাদেশে হরদম চলছে। এই সব ব্যবসার মূল নায়ক যে শাসকশ্রেণির উপর তলার মানুষ তাতো গোপন নয়, যা সাম্রাজ্যবাদ, দালাল আমলা-মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া অর্থনীতি-সংস্কৃতির অংশ। শাসকশ্রেণির লোকজনই বিভিন্ন নাইট ক্লাবে এই সব অপসংস্কৃতির আয়োজন করে। যা দেশের তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী করেছে এবং করছে। এই কাজে তারা নারীদের যৌন-পণ্য হিসাবে ব্যবহার করে। পরীমণিদের কেউ কেউ এই ব্যবস্থার শিকার এবং অংশ হয়ে যান। বিনিময়ে তারা মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করেন। সমাজে প্রতিপত্তিও পান। কেউ কেউ পরে বুর্জোয়া দলগুলোর নেতা, এমপি, মন্ত্রীও হতে পারেন।
গত জুলাই মাসে পরীমণি গুলশানের বোটক্লাবের এক কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে (জাতীয় পার্টির এমনপি) ধর্ষণ-হত্যার অভিযোগ করে মামলা করেছিলেন। হেলেনা জাহাঙ্গীরেরও এমন হোমরা-চোমরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বলে জানা যায়। মাদক বিরোধী অভিযানের নামে উক্ত অভিযুক্তদের হয়ে প্রতিশোধ নেওয়া, নাকি অভিযুক্তদের বাঁচানোর কৌশল, নাকি এই নারীরা শাসকশ্রেণির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের শিকার- সেটা এক বড় প্রশ্ন। কারণ এই সরকারের আমলেই আমরা বিগত দিনে তথাকথিত মাদক বিরোধী অভিযান দেখেছি। চট্টগ্রামের বদি এমপিসহ মাদক সম্রাটদের অক্ষত রেখে সারা দেশে চুনোপুঁটিদের গণহত্যা করেছে এই ফ্যাসিবাদী সরকার। বুর্জোয়া অপসংস্কৃতির রক্ষকদের এই অভিযানই উক্ত প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
তাই সর্বস্তরের নিপীড়িত নারীদের এই মুৎসুদ্দি সংস্কৃতির উচ্ছেদ ও তার বেড়াজাল থেকে নারীদের মুক্ত করার জন্য সোচ্চার ও শক্তিশালী নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র