ইরানে নারী আন্দোলন বিপ্লবী আন্দোলনে পরিণত করতে হবে

আন্দোলন প্রতিবেদন
বৃহঃস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
গত ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইরানে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনিকে (২২) সঠিক ভাবে হিজাব না পরায় পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠায় ইরানের নৈতিকতা পুলিশ। হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন মাসা আমিনি। ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট ইরান রাষ্ট্রের কঠোর ড্রেসকোড না মানায় তাকে আটক করেছিল ইরানি নৈতিকতা পুলিশের বিশেষ ইউনিট।
এর পর থেকে শুরু হয় ইরানি নারীদের অভূতপূর্ব বিস্ময়কর বিপুল প্রেরণাদায়ী নতুন এক আন্দোলন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ প্রতিদিন সমবেত হচ্ছেন, আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। তথাকথিত ইসলামি বিধি উপেক্ষা করে চুল কেটে, স্কার্ফ পুড়িয়ে অসম সাহসী প্রতিবাদ করছেন ইরানী নারীরা। ইরানী নারীদের আন্দোলনের সমর্থনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। মিছিলে স্লোগান দিচ্ছেন ‘নারী, জীবন, মুক্তি’ এবং ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। ইরানের খেলোয়াড়, অভিনয় শিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা, সঙ্গীতশিল্পী, স্কুলছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করছেন। ইরানের বিশ্বকাপ দল ২১ নভেম্বর তাদের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এ আন্দোলনের সমর্থনে জাতীয় সংগীত গাইতে অস্বীকৃতি জানায়। ষাটের দশকে আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের আন্দোলনের সমর্থনে বিশ্ব ক্রীড়া অঙ্গনে সমর্থনসূচক প্রতীক দেখানোর পর আর কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, লাগাতার বিক্ষোভ-সংঘাতে নভেম্বর পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় অর্ধ শতের মতো নিরাপত্তা কর্মী এবং প্রায় সমসংখ্যক শিশু। আটক করা হয়েছে ১৪ হাজার জনের বেশি। ইতিমধ্যে আটক ২৭ জনের বিচার শুরু করেছে ইরান আদালত এবং ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। বাকী ২১ জনেরও মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। ফ্যাসিস্ট খামেনি সরকার ইন্টারনেট বন্ধ রাখায় প্রকৃত মৃত্যু বা আটকের সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন। আমিনির পরিবারের সদস্যদের গৃহবন্দি করে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। কারণ তাদের নিয়ে কেউ যেন রাস্তায় বিক্ষোভ করতে না পারে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়া নারীরা অভিযোগ করেছেন– “চুপ না থাকলে ধর্ষণের হুমকিও তাদের দেওয়া হচ্ছে।”
ইরানে ১৯৬০-৭০ এর দশকে মার্কিন দালাল রেজা শাহ পাহলবীর রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং তেল-গ্যাস সহ জাতীয় খনিজ সম্পদ পশ্চিমাদের হাতে তুলে দেওয়া, দুর্নীতি এবং দমন-নিপীড়নমূলক রাজতান্ত্রিক শাসনে ক্ষুব্ধ হয়ে ইরানের জনগণের বিরাট বিদ্রোহ ঘটেছিল, যার পরিণতিতে রাজতন্ত্রের পতন হয়। এই আন্দোলনকারীদের মাঝে ছিল মাওবাদী বিপ্লবী, সংস্কারবাদী বামপন্থি, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক এবং ধর্মবাদী শক্তি। কিন্তু রাজতন্ত্রের পতনের মুখে ধর্মবাদীরা রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সক্ষম হয়। প্রতিক্রিয়াশীল ও ফ্যাসিস্ট এই ধর্মবাদীরা তাদের বিরোধী সকল শক্তিকে বর্বরভাবে দমন করে। এজন্য তারা পাইকারী হত্যা ও নিপীড়নের আশ্রয় নেয়। এভাবে তারা তাদের ফ্যাসিস্ট ক্ষমতাকে সুসংহত করতে সক্ষম হয়। এবং ধর্মবাদী নিয়ম নীতি চালু করে। এরই অংশ হলো কঠোর পর্দা প্রথা ও নারীদের জন্য হিজাব/বোরকা বাধ্যতামূলক করণ।
এসবের বিরুদ্ধে বিগত দীর্ঘ ৪০ বছরে কয়েক বারই ইরানের জনগণ ধর্মবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিবারই সবগুলো আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করেছে। ১৯৯৯ সালে বাকস্বাধীনতার দাবিতে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে নারী অধিকার আন্দোলন, ২০০৯ সালে ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং ২০১৯ সালে জ্বালানির দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আন্দোলন। ২০১৯ সালের আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করে দেড় হাজারেরও বেশি আন্দোলনকারীকে হত্যা করেছিল।
ইরানি শাসকরা বিশেষভাবে নারীদের উপর দমন-নির্যাতন করে আসছে। নারীরা ড্রেসকোড মানছে কিনা “নৈতিকতা পুলিশ” সব সময় তাদের উপর নজর রাখে। দেশটির আইনি কাঠামো ফ্যাসিস্ট, গণবিরোধী ও নারী বিদ্বেষী। যৌনতার প্রশ্নে তারা মধ্যযুগীয় নিয়ম-নীতি চালু করেছে। এমনকি পরিবারের সম্মান রাখার নামে নারী হত্যাও করা হচ্ছে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৩৩ জন নারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইরানী ফ্যাসিস্ট সরকার। নারীরা বিয়ের মতামত দিতে বা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। পরিবারের পুরুষ কর্তারা সকল সিদ্ধান্ত নেয়। তাই, দাবি উঠেছে আইন পরিবর্তন করার। মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় তাই দাবানলের মতো বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে।
আলী খামেনি সরকার বলছে, পশ্চিমাদের চক্রান্তের কারণে এই আন্দোলন চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া-ইরান পরস্পর বন্ধু, একে অপরকে সহযোগিতা করছে। এ কারণেই পশ্চিমা মিডিয়া ব্যাপকভাবে ইরানের বিরুদ্ধে খবরগুলো প্রচার করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাস্তবে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও ইরানি শাসকরা নিজ নিজ প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থে ব্যবহার করছে।
এটা হলো ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ। ফ্যাসিস্ট অন্যায়ের বিরুদ্ধে। নারীর উপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার দমনের বিরুদ্ধে। প্রতিটি দেশের জনগণের এই আন্দোলনে সমর্থন দেয়া উচিত।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই আন্দোলন কি নারীদের এবং ব্যাপক নিপীড়িত জনগণকে মুক্ত করতে পারবে? ফ্যাসিবাদী খামেনি সরকার পরিবর্তন করে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা সাম্রাজ্যবাদের দালাল ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের কর্ণধার। ইতিপূর্বে ইরানে যে কয়েকটি আন্দোলন হয়েছে তা নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে। এর আগে “আরব বসন্ত” নামে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু তাতে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ ধরনের আন্দোলন আমাদের দেশেও হয়েছিল “গণজাগরণ মঞ্চ” নামে। কিন্তু বিপ্লবী রাজনীতির নেতৃত্ব না থাকার ফলে আন্দোলন বেশি দিন টিকে থাকেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু সংস্কার হয়েছে মাত্র। সাধারণত এই ধরনের আন্দোলনগুলো সরকার বানচাল করে, হাইজ্যাক করে, সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।
এসকল আন্দোলন থেকে সকলকে শিক্ষা নিতে হবে যে, আজকের বিশ্বে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব ছাড়া এই আন্দোলন-সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ইরানি জনগণকে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে সকল সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মবাদী ফ্যাসিবাদসহ সকল স্বৈরতন্ত্রকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। ইরানের নতুন প্রজন্মকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ অধ্যয়ন ও তাতে সজ্জিত হয়েই এ ধরনের সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
৪ ডিসেম্বর ’২২
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ইরানে নারী আন্দোলন বিপ্লবী আন্দোলনে পরিণত করতে হবে
গত ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইরানে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনিকে (২২) সঠিক ভাবে হিজাব না পরায় পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠায় ইরানের নৈতিকতা পুলিশ। হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন মাসা আমিনি। ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট ইরান রাষ্ট্রের কঠোর ড্রেসকোড না মানায় তাকে আটক করেছিল ইরানি নৈতিকতা পুলিশের বিশেষ ইউনিট।
এর পর থেকে শুরু হয় ইরানি নারীদের অভূতপূর্ব বিস্ময়কর বিপুল প্রেরণাদায়ী নতুন এক আন্দোলন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ প্রতিদিন সমবেত হচ্ছেন, আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। তথাকথিত ইসলামি বিধি উপেক্ষা করে চুল কেটে, স্কার্ফ পুড়িয়ে অসম সাহসী প্রতিবাদ করছেন ইরানী নারীরা। ইরানী নারীদের আন্দোলনের সমর্থনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। মিছিলে স্লোগান দিচ্ছেন ‘নারী, জীবন, মুক্তি’ এবং ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। ইরানের খেলোয়াড়, অভিনয় শিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা, সঙ্গীতশিল্পী, স্কুলছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করছেন। ইরানের বিশ্বকাপ দল ২১ নভেম্বর তাদের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এ আন্দোলনের সমর্থনে জাতীয় সংগীত গাইতে অস্বীকৃতি জানায়। ষাটের দশকে আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের আন্দোলনের সমর্থনে বিশ্ব ক্রীড়া অঙ্গনে সমর্থনসূচক প্রতীক দেখানোর পর আর কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, লাগাতার বিক্ষোভ-সংঘাতে নভেম্বর পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় অর্ধ শতের মতো নিরাপত্তা কর্মী এবং প্রায় সমসংখ্যক শিশু। আটক করা হয়েছে ১৪ হাজার জনের বেশি। ইতিমধ্যে আটক ২৭ জনের বিচার শুরু করেছে ইরান আদালত এবং ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। বাকী ২১ জনেরও মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। ফ্যাসিস্ট খামেনি সরকার ইন্টারনেট বন্ধ রাখায় প্রকৃত মৃত্যু বা আটকের সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন। আমিনির পরিবারের সদস্যদের গৃহবন্দি করে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। কারণ তাদের নিয়ে কেউ যেন রাস্তায় বিক্ষোভ করতে না পারে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়া নারীরা অভিযোগ করেছেন– “চুপ না থাকলে ধর্ষণের হুমকিও তাদের দেওয়া হচ্ছে।”
ইরানে ১৯৬০-৭০ এর দশকে মার্কিন দালাল রেজা শাহ পাহলবীর রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং তেল-গ্যাস সহ জাতীয় খনিজ সম্পদ পশ্চিমাদের হাতে তুলে দেওয়া, দুর্নীতি এবং দমন-নিপীড়নমূলক রাজতান্ত্রিক শাসনে ক্ষুব্ধ হয়ে ইরানের জনগণের বিরাট বিদ্রোহ ঘটেছিল, যার পরিণতিতে রাজতন্ত্রের পতন হয়। এই আন্দোলনকারীদের মাঝে ছিল মাওবাদী বিপ্লবী, সংস্কারবাদী বামপন্থি, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক এবং ধর্মবাদী শক্তি। কিন্তু রাজতন্ত্রের পতনের মুখে ধর্মবাদীরা রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সক্ষম হয়। প্রতিক্রিয়াশীল ও ফ্যাসিস্ট এই ধর্মবাদীরা তাদের বিরোধী সকল শক্তিকে বর্বরভাবে দমন করে। এজন্য তারা পাইকারী হত্যা ও নিপীড়নের আশ্রয় নেয়। এভাবে তারা তাদের ফ্যাসিস্ট ক্ষমতাকে সুসংহত করতে সক্ষম হয়। এবং ধর্মবাদী নিয়ম নীতি চালু করে। এরই অংশ হলো কঠোর পর্দা প্রথা ও নারীদের জন্য হিজাব/বোরকা বাধ্যতামূলক করণ।
এসবের বিরুদ্ধে বিগত দীর্ঘ ৪০ বছরে কয়েক বারই ইরানের জনগণ ধর্মবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিবারই সবগুলো আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করেছে। ১৯৯৯ সালে বাকস্বাধীনতার দাবিতে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে নারী অধিকার আন্দোলন, ২০০৯ সালে ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং ২০১৯ সালে জ্বালানির দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আন্দোলন। ২০১৯ সালের আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করে দেড় হাজারেরও বেশি আন্দোলনকারীকে হত্যা করেছিল।
ইরানি শাসকরা বিশেষভাবে নারীদের উপর দমন-নির্যাতন করে আসছে। নারীরা ড্রেসকোড মানছে কিনা “নৈতিকতা পুলিশ” সব সময় তাদের উপর নজর রাখে। দেশটির আইনি কাঠামো ফ্যাসিস্ট, গণবিরোধী ও নারী বিদ্বেষী। যৌনতার প্রশ্নে তারা মধ্যযুগীয় নিয়ম-নীতি চালু করেছে। এমনকি পরিবারের সম্মান রাখার নামে নারী হত্যাও করা হচ্ছে। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৩৩ জন নারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইরানী ফ্যাসিস্ট সরকার। নারীরা বিয়ের মতামত দিতে বা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। পরিবারের পুরুষ কর্তারা সকল সিদ্ধান্ত নেয়। তাই, দাবি উঠেছে আইন পরিবর্তন করার। মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় তাই দাবানলের মতো বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে।
আলী খামেনি সরকার বলছে, পশ্চিমাদের চক্রান্তের কারণে এই আন্দোলন চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া-ইরান পরস্পর বন্ধু, একে অপরকে সহযোগিতা করছে। এ কারণেই পশ্চিমা মিডিয়া ব্যাপকভাবে ইরানের বিরুদ্ধে খবরগুলো প্রচার করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাস্তবে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও ইরানি শাসকরা নিজ নিজ প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থে ব্যবহার করছে।
এটা হলো ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ। ফ্যাসিস্ট অন্যায়ের বিরুদ্ধে। নারীর উপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার দমনের বিরুদ্ধে। প্রতিটি দেশের জনগণের এই আন্দোলনে সমর্থন দেয়া উচিত।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই আন্দোলন কি নারীদের এবং ব্যাপক নিপীড়িত জনগণকে মুক্ত করতে পারবে? ফ্যাসিবাদী খামেনি সরকার পরিবর্তন করে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা সাম্রাজ্যবাদের দালাল ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের কর্ণধার। ইতিপূর্বে ইরানে যে কয়েকটি আন্দোলন হয়েছে তা নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে। এর আগে “আরব বসন্ত” নামে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু তাতে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ ধরনের আন্দোলন আমাদের দেশেও হয়েছিল “গণজাগরণ মঞ্চ” নামে। কিন্তু বিপ্লবী রাজনীতির নেতৃত্ব না থাকার ফলে আন্দোলন বেশি দিন টিকে থাকেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু সংস্কার হয়েছে মাত্র। সাধারণত এই ধরনের আন্দোলনগুলো সরকার বানচাল করে, হাইজ্যাক করে, সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।
এসকল আন্দোলন থেকে সকলকে শিক্ষা নিতে হবে যে, আজকের বিশ্বে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব ছাড়া এই আন্দোলন-সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ইরানি জনগণকে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে সকল সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মবাদী ফ্যাসিবাদসহ সকল স্বৈরতন্ত্রকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। ইরানের নতুন প্রজন্মকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ অধ্যয়ন ও তাতে সজ্জিত হয়েই এ ধরনের সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
৪ ডিসেম্বর ’২২
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র