রূপগঞ্জের কারখানায় অগ্নিকান্ডে শ্রমিক হত্যার দায় রাষ্ট্র ও হাসিনা সরকারকেই নিতে হবে

আন্দোলন প্রতিবেদন
বুধবার, ২৫ আগস্ট ২০২১ | অনলাইন সংস্করণ
নারাণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড লিমিটেড সেজান জুসের কারাখানায় ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আগুনে পুড়ে মারা গেছে না বলে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলাটাই শ্রেয়। ছয়তলা ভবনের নিচতলার কারখানায় কাটন এবং পলিথিন তৈরির কাজ চলছিল, সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। মূল গেটে তালা মেরে রাখার ফলে শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। পত্রিকার সূত্রে জানা যায় কারখানাটিতে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। ওই দিন ভবনটিতে প্রায় ৮ শতাধিক শ্রমিক কাজ করেছিলেন। আগুন লাগার সময় কতজন শ্রমিক ভবনটিতে ছিলেন তার নির্দিষ্ট সংখ্যা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি, এমনকি হাজিরা খাতা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে।
নিখোঁজ শ্রমিকদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের যথার্থ চিকিৎসা দেয়া হয়নি, অর্থাৎ সরকার, মালিক কেউই এই চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। পুড়ে অঙ্গার হওয়া শ্রমিকদের সবার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে স্বজনেরা সব লাশ ফিরে পাবেন কি না তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে! (বেশ কিছু দিন পরে অধিকাংশ লাশ হস্তান্তর করেছে, কিন্তু এখনও কিছু বাকী রয়েছে) কারখানায় বেশির ভাগই নারী ও শিশু শ্রমিক কাজ করছিলেন। তার মধ্যে রয়েছে ১১-১৬ বছরের শিশু-কিশোর। করোনা মহামারীকালে স্কুলবঞ্চিত শিশুদের মালিকশ্রেণি সামান্য মজুরিতে এবং অধিক সময় কাজ করাচ্ছিল।
কারাখানা নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। আগুন নেভানোর সরঞ্জাম ছিল না, বের হওয়ার বিকল্প পথও ছিল না। পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্পমন্ত্রণালয়, শ্রমমন্ত্রণালয়, রাজউকের কোনো তদারকী ছিল না। এতেই স্পষ্ট হয় মালিকের মুনাফা আর রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনা/দুর্নীতিই শ্রমিকদের পুড়িয়ে হত্যা করেছে! এমন ঘটনায় মালিকশ্রেণি প্রতিবারই দুর্ঘটনা বলে বেঁেচ যাওয়ার চেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রও তাদের রক্ষা করে। এই যে ১৯/২০ ঘণ্টা সময় নিল আগুন নেভাতে তার জবাব কি? বিক্ষুব্ধ শ্রমিক-জনতার উপর পুলিশী আক্রমণ কার স্বার্থে? ব্যাপক জনমতের চাপে, শ্রমিক আন্দোলন ঠেকাতে লোক দেখানো কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মালিক, তার ছেলেদের জামিনে মুক্তি দিয়েছে।
কয়েক বছর ধরে তাজরীন ফ্যাশনস, রানা প্লাজা, টাম্পাকো ফয়েলস্, গরিব অ্যান্ড গরিব গার্মেন্টস, মাল্টিফ্যাবস, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার ফ্যাক্টরি, নিমতলী ও চকবাজারের রাসায়নিক গুদাম, প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন কারাখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেই চলেছে। হাজার হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। শ্রমিকরা করোনা মহামারিতেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। অথচ তাদেরই বেঁচে থাকার জন্য বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করতে হচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় এই সরকার-রাষ্ট্র শ্রমিক বান্ধব নয়। তারা দেশি-বিদেশি ধনীকশ্রেণির সরকার।
এই রাষ্ট্রব্যবস্থার উচ্ছেদ ছাড়া শ্রমিকশ্রেণির মুক্তি নেই।
একইসাথে দাবি তুলতে হবে- শ্রমপ্রতিমন্ত্রীর খয়রাতি নয়, নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের আজীবন কর্মক্ষম উপার্জনের অর্থের সমান ক্ষতিপূরণ পরিবারকে দিতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থার দায়িত্ব রাষ্ট্র-মালিককে নিতে হবে। পঙ্গুদের আজীবন জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা, কর্মচ্যুত শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করা এবং ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত মালিক/রাষ্ট্রকে ভাতা দিতে হবে। এবং শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী সরকারি/বেসরকারি ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
রূপগঞ্জের কারখানায় অগ্নিকান্ডে শ্রমিক হত্যার দায় রাষ্ট্র ও হাসিনা সরকারকেই নিতে হবে
নারাণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড লিমিটেড সেজান জুসের কারাখানায় ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আগুনে পুড়ে মারা গেছে না বলে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলাটাই শ্রেয়। ছয়তলা ভবনের নিচতলার কারখানায় কাটন এবং পলিথিন তৈরির কাজ চলছিল, সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। মূল গেটে তালা মেরে রাখার ফলে শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। পত্রিকার সূত্রে জানা যায় কারখানাটিতে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। ওই দিন ভবনটিতে প্রায় ৮ শতাধিক শ্রমিক কাজ করেছিলেন। আগুন লাগার সময় কতজন শ্রমিক ভবনটিতে ছিলেন তার নির্দিষ্ট সংখ্যা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেনি, এমনকি হাজিরা খাতা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে।
নিখোঁজ শ্রমিকদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের যথার্থ চিকিৎসা দেয়া হয়নি, অর্থাৎ সরকার, মালিক কেউই এই চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। পুড়ে অঙ্গার হওয়া শ্রমিকদের সবার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে স্বজনেরা সব লাশ ফিরে পাবেন কি না তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে! (বেশ কিছু দিন পরে অধিকাংশ লাশ হস্তান্তর করেছে, কিন্তু এখনও কিছু বাকী রয়েছে) কারখানায় বেশির ভাগই নারী ও শিশু শ্রমিক কাজ করছিলেন। তার মধ্যে রয়েছে ১১-১৬ বছরের শিশু-কিশোর। করোনা মহামারীকালে স্কুলবঞ্চিত শিশুদের মালিকশ্রেণি সামান্য মজুরিতে এবং অধিক সময় কাজ করাচ্ছিল।
কারাখানা নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। আগুন নেভানোর সরঞ্জাম ছিল না, বের হওয়ার বিকল্প পথও ছিল না। পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্পমন্ত্রণালয়, শ্রমমন্ত্রণালয়, রাজউকের কোনো তদারকী ছিল না। এতেই স্পষ্ট হয় মালিকের মুনাফা আর রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনা/দুর্নীতিই শ্রমিকদের পুড়িয়ে হত্যা করেছে! এমন ঘটনায় মালিকশ্রেণি প্রতিবারই দুর্ঘটনা বলে বেঁেচ যাওয়ার চেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রও তাদের রক্ষা করে। এই যে ১৯/২০ ঘণ্টা সময় নিল আগুন নেভাতে তার জবাব কি? বিক্ষুব্ধ শ্রমিক-জনতার উপর পুলিশী আক্রমণ কার স্বার্থে? ব্যাপক জনমতের চাপে, শ্রমিক আন্দোলন ঠেকাতে লোক দেখানো কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মালিক, তার ছেলেদের জামিনে মুক্তি দিয়েছে।
কয়েক বছর ধরে তাজরীন ফ্যাশনস, রানা প্লাজা, টাম্পাকো ফয়েলস্, গরিব অ্যান্ড গরিব গার্মেন্টস, মাল্টিফ্যাবস, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার ফ্যাক্টরি, নিমতলী ও চকবাজারের রাসায়নিক গুদাম, প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন কারাখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেই চলেছে। হাজার হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। শ্রমিকরা করোনা মহামারিতেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। অথচ তাদেরই বেঁচে থাকার জন্য বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করতে হচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় এই সরকার-রাষ্ট্র শ্রমিক বান্ধব নয়। তারা দেশি-বিদেশি ধনীকশ্রেণির সরকার।
এই রাষ্ট্রব্যবস্থার উচ্ছেদ ছাড়া শ্রমিকশ্রেণির মুক্তি নেই।
একইসাথে দাবি তুলতে হবে- শ্রমপ্রতিমন্ত্রীর খয়রাতি নয়, নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের আজীবন কর্মক্ষম উপার্জনের অর্থের সমান ক্ষতিপূরণ পরিবারকে দিতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থার দায়িত্ব রাষ্ট্র-মালিককে নিতে হবে। পঙ্গুদের আজীবন জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা, কর্মচ্যুত শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করা এবং ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত মালিক/রাষ্ট্রকে ভাতা দিতে হবে। এবং শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী সরকারি/বেসরকারি ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র