• বৃহঃস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
  • ঢাকা, বাংলাদেশ
শ্রমিক, জেলেসহ নিপীড়িত জনগণের দুর্গতি ও আন্দোলন
শ্রমিক, জেলেসহ নিপীড়িত জনগণের দুর্গতি ও আন্দোলন

  আন্দোলন প্রতিবেদন  

বৃহঃস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২  |  অনলাইন সংস্করণ

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার নানাভাবে জনগণের জীবনকে আজ বিপর্যস্ত করে তুলেছে। দিনের পর দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। এর নিচে চাপা পড়ে শ্রমিক, কৃষক, জেলে, মেহনতি ও মধ্যবিত্ত জনগণের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। জীবন চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এর জন্য শাসকরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এর মূল কারণ হলো, অর্থনীতির বিদেশ-নির্ভরতা ও শাসকদের অবাধ লুটপাট। সংকট উৎরানোর জন্য সরকার আইএমএফ সহ কয়েকটি সাম্রাজ্যবাদী সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিতে দ্বারস্থ হয়েছে। এসব সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা থেকে অধিক সুদসহ ঋণ পরিশোধ করা সহ কয়েকটি দেশ ও গণস্বার্থ বিরোধী শর্তে সরকার তাদের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। এই ঋণের ভার বহন করতে হবে জনগণকেই। দেশের এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক, কৃষক, জেলেসহ মেহনতি জনগণের অবস্থা খুবই সংকটময়। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন। কিন্তু সেসবকে দমনে সরকার তাদের উপর নামিয়ে এনেছে নির্যাতন। নিচে তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো–

গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন : নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিকেরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ঢাকা সহ দেশের শিল্পা লগুলোয় বিক্ষোভ-অবরোধ করেছেন।

চলতি বছরের জুন মাস থেকে পোশাক শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সংগ্রাম গড়ে তুলেন। প্রায় সপ্তাহকালব্যাপী আন্দোলনে তারা সুস্পষ্ট দাবি তুলেছেন– "মজুরি বাড়াও, নিত্যপণ্যের দাম কমাও"। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বেশ কিছু গার্মেন্টসে সপ্তাহকাল শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। "মানবতার মাতা" স্বয়ং শেখ হাসিনা তখন হুমকি দিয়ে বলেছিলেন এমন আন্দোলন করলে "আমও যাবে ছালাও যাবে"। শ্রমিকদের না খেয়ে মরতে হবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আন্দোলনের মাধ্যমে  ৮ হাজার টাকা মজুরি আদায় করেছিল শ্রমিকরা। এরপর থেকে চাল, ডাল সহ নিত্যপণ্যের দাম কয়েক গুণ বাড়ায় শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামেন। সরকার-মালিকের যৌথ দমন-নির্যাতন, হয়রানির কারণে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন থেমে নেই। বছরব্যাপী প্রায়ই দেশের শিল্পা লগুলোতে কোনো না কোনো এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন চলছেই।

যখন মালিকরা শ্রমিকদের ঠকানোর জন্য তাদের না জানিয়ে, বকেয়া বেতন শোধ না করে কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দেয় তখন প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের হুংকার শোনা যায় না। বরং সরকার-রাষ্ট্র ও মালিকরা যৌথভাবে শ্রমিকদের উপর দমন-নির্যাতন চালায়। তাই গার্মেন্টস শ্রমিকদের আওয়ামী সরকার, শাসকশ্রেণির শ্রমিকবিরোধী চরিত্র উপলব্ধি করতে হবে। এবং তাদের উৎখাত করে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনও চালাতে হবে। “গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন”সহ কয়েকটি গার্মেন্টস সংগঠনের জোট “গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন” গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবিকে ধারণ করে মাসিক মজুরি ২৫,০০০ টাকা দাবি করছে এবং এই দাবি আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে যাচ্ছে। শ্রমিকদের এই আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ব্যাটারি রিক্সা শ্রমিকদের অবস্থা : সরকার ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা নাকি চলাচলের জন্য উপযোগী নয়। অথচ সরকারই এই ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার যন্ত্রাদি বিক্রি করার ব্যবস্থা করেছে। এই রিকশার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনার জন্য সরকারই আমদানিকারকদের সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, একটা রিকশা-অটোরিকশা চালানোর জন্য নানা ধরনের কার্ড-অনুমতি নিতে হয়। যা কিনা এই সরকারের গুণ্ডা-পাণ্ডারাই টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। অথচ শ্রমিকরা রিকশা-অটোরিকশা নিয়ে বের হলেই পুলিশ প্রশাসন নিজেদের খেয়াল খুশিমত জব্দ করে, টাকা আদায় করে। এগুলো যদি অবৈধই হয় তা হলে ব্যাপক হারে কেন এগুলো উৎপাদন এবং বিক্রি হচ্ছে? একটাই কারণ, সেটা হচ্ছে আওয়ামী গুণ্ডা-পাণ্ডা-পুলিশদের পকেট ভারি করে তাদেরকে হাতে রাখা। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে হাসিনা সরকারের এরকম গুণ্ডাদের প্রয়োজন। যাতে করে জনগণের উপর নানাভাবে চড়াও হবার কাজে তাদেরকে ব্যবহার করা যায়। 

ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে, প্রতিবাদ করলে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। নানা ধরনের তকমা দেওয়া ইত্যাদি কারণে রাগে-ক্ষোভে ১৪ অক্টোবর ব্যাটারিচালিত রিকশার শ্রমিকেরা সংঘবদ্ধ হয়ে মিরপুর ১২, কালশী মোড়, সাগুফতা মোড়, মিরপুর ১০, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে প্রায় একই সময়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং এক ট্রাফিক পুলিশকে শাস্তি দেয়।

  ব্যাটারিচালিত রিকশা অবৈধ বলে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ট্রাফিক পুলিশরা। পুলিশ আসার আগে স্থানীয় সরকারদলীয় পাণ্ডারা তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই নিপীড়নের প্রতিবাদে শ্রমিকরা এমন সাহসী কাণ্ড ঘটায়। শ্রমিকদের ১১ জনকে শনাক্ত করে রিমান্ডে নিয়ে অন্যায়ভাবে শাস্তি এবং অজ্ঞাতনামা একশত জনের নামে মামলা দেয় পুলিশ-প্রশাসন।

চা শ্রমিকদের আন্দোলন : চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র ১২০ টাকা। এটাও নির্ধারণ হয়েছিল কয়েক বছর আগে। নতুন নির্ধারণের সময় গড়িয়ে গেলেও মালিকরা তাতে গা লাগায় নি। ফলে গত আগস্ট ২০২২’র দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চা শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করেছেন। মালিকদের টালবাহানার পর সর্বশেষ দেখা গেল ‘জনদরদী’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭০ টাকা বেতন ধার্য করে দিলো। যেখানে চা শ্রমিকদের দাবি ছিল ৩০০ টাকা। এটা হলো শ্রমিকের মা সেজে তাদের পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করা এবং মালিকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। অনন্যোপায় হয়ে শ্রমিকরা সেটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হিসেবে এই বেতন বৃদ্ধি কোনো বৃদ্ধি নয়। তারা আগে যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকলেন। তাদের জীবন-জীবিকার কোনো উন্নতিই এতে হবে না। বড় বুর্জোয়া শাসকশ্রেণির সরকার চা শ্রমিকদের মধ্যযুগীয় দাস বানিয়ে রেখেছে। চা শ্রমিকদের দাস বানানোর কারখানা হিসেবে চা বাগান পরিচালনা হয়ে আসছে। সরকার-রাষ্ট্রের দেশে বসবাসরত সকল নাগরিকদের মৌলিক অধিকার দেবার কথা থাকলেও বাঙালি শ্রমিক-কৃষকদের ন্যূনতম যে অধিকারটুকু দেওয়া হয়, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার চা শ্রমিকদের সেটাও দেওয়া হয় না। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই চা শ্রমিকদের  যুগ যুগ ধরে দাস জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

জেলেদের দুর্গতি : প্রতি বছরের অক্টোবরের শুরুতে মা ইলিশ রক্ষা করার জন্য জেলেদের উপর ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪৮ দিনেরই (প্রথম আলো ৬ অক্টোবর, ২০২২) নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। আবার গত মৌসুমে উপকূলীয় নদ-নদীতে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরার ওপর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন (৮ মাস) পর্যন্ত জাটকা শিকার, পরিবহণ, বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। প্রতি বছর উপকূলীয়-দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লক্ষ জেলের পরিপূর্ণ ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা না করে সরকার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সরকার নামমাত্র কিছু চাল/কার্ড দিয়ে ভরণ-পোষণের জন্য কিছু ভর্তুকি দেয়; সেটিও থাকে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের জবরদখলে। সবাই এই সহায়তা পান না। ফলে যতদিন নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে ততদিন লাখ লাখ জেলে পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হন। ধার-দেনা করে, লুকিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরে জীবন ধারণ করেন। এজন্য জেলেদেরকে নির্যাতন-নিপীড়ন-শাস্তি ভোগ করতে হয়। বর্তমান গণবিরোধী রাষ্ট্র ব্যবস্থায়– এটাই স্বাভাবিক।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ : প্রতিবছরই ডেঙ্গু জ্বরে মানুষ মারা যাচ্ছেন। করোনাকালের দুই বছর সেটা তেমন একটা নজরে ছিল না। এ বছর করোনা কম থাকায় ডেঙ্গু জ্বর বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে। এ বছর ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন ২৫৪ জন। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৩৮ জন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। শ্রমিক-কৃষক-সাধারণ জনগণ সাধারণত জ্বরে আক্রান্ত হলে হাসপাতাল মুখী হন না। কেবল বেগতিক হলেই হাসপাতালে যান। সুতরাং পত্রপত্রিকার খবরে যে রোগীর সংখ্যা দেখা যাচ্ছে তা প্রকৃত চিত্র নয়। 

দুর্নীতিবাজ সরকার-প্রশাসন গলাবাজি করলেও মশা নিধনে যে ব্যর্থ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তারা যে সব পরিকল্পনা করে তা জনগণের স্বার্থে নয়। বরং জনগণের নামে প্রকল্পগুলোতে চলে হরিলুট। ফলে যে সব মশার ঔষধ আমদানি করা হয় তা দু’নম্বরি বা ভেজাল ঔষধ। মশা নিধনের ঔষধ ছিটায় নামকাওয়াস্তে। তাছাড়া শহরের খাল-নর্দমা চরমভাবে অপরিষ্কার-দুষিত। যেগুলো মশার প্রজনন ক্ষেত্র। ডেঙ্গু জ্বরের মশা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। সুতরাং মশা নিধন কার্যকরি না হলে মশা বড়লোকদের ছাদের টবে জন্মাবে– এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং কার্যকর মশা নিধনই ডেঙ্গু থেকে মানুষ রক্ষা করার উপায়। কিন্তু গণবিরোধী সরকার জনগণের স্বার্থে সেটা করতে পারছে না, পারবেও না।

নৌ-শ্রমিকদের আন্দোলন : গত ১৩ নভেম্বর সাধারণ নৌ-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা এবং মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১২ লক্ষ টাকা এবং নৌ-শ্রমিকদের উপর প্রশাসনিক নির্যাতন বন্ধসহ ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন। ১৫ দিনের মধ্যে দাবির পূরণ না হলে তারা ধর্মঘটে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন। ২০১৬ সালে ৭ হাজার টাকা মজুরি এবং মৃত্যুকালীন ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ৫ বছর পর পর নতুনভাবে মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ১৭ মাস অতিবাহিত হলেও এবং দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে শ্রমিকরা হিমশিম খেলেও মালিক-সরকার বেতন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। কিন্তু শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবি করলে মালিকরা তা না মেনে উল্টো শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করলে শ্রমিকরা আন্দোলন-বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের টনক নড়ে এবং শ্রমিকদের সাথে আপসরফার বৈঠক করে এক মাসের মধ্যে মজুরি কমিশন মজুরি নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফলে শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন। শ্রমিক-জনতার আন্দোলন ছাড়া সরকার, মালিকশ্রেণি কোনো দাবিই পূরণ করে না। 

আজকে শ্রমিক, কৃষক, জেলেসহ অন্যান্য মেহনতি নিপীড়িত জনগণের সমস্ত সমস্যাই এক সূত্রে গাঁথা, বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। হাসিনা-আওয়ামী সরকার জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ দালাল দুর্নীতিবাজ শাসকশ্রেণির স্বার্থে তার ফ্যাসিস্ট শাসন পরিচালনা করছে। তাই, শ্রমিক, কৃষক, আদিবাসী, মধ্যবিত্ত জনগণ ও ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। এবং প্রয়োজন সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের লক্ষ্যে নতুন ধরনের (নয়া) গণতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নেওয়া।

শ্রমিক, জেলেসহ নিপীড়িত জনগণের দুর্গতি ও আন্দোলন

 আন্দোলন প্রতিবেদন 
বৃহঃস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২  |  অনলাইন সংস্করণ

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার নানাভাবে জনগণের জীবনকে আজ বিপর্যস্ত করে তুলেছে। দিনের পর দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। এর নিচে চাপা পড়ে শ্রমিক, কৃষক, জেলে, মেহনতি ও মধ্যবিত্ত জনগণের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। জীবন চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এর জন্য শাসকরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এর মূল কারণ হলো, অর্থনীতির বিদেশ-নির্ভরতা ও শাসকদের অবাধ লুটপাট। সংকট উৎরানোর জন্য সরকার আইএমএফ সহ কয়েকটি সাম্রাজ্যবাদী সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিতে দ্বারস্থ হয়েছে। এসব সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা থেকে অধিক সুদসহ ঋণ পরিশোধ করা সহ কয়েকটি দেশ ও গণস্বার্থ বিরোধী শর্তে সরকার তাদের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। এই ঋণের ভার বহন করতে হবে জনগণকেই। দেশের এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক, কৃষক, জেলেসহ মেহনতি জনগণের অবস্থা খুবই সংকটময়। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন। কিন্তু সেসবকে দমনে সরকার তাদের উপর নামিয়ে এনেছে নির্যাতন। নিচে তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো–

গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন : নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিকেরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ঢাকা সহ দেশের শিল্পা লগুলোয় বিক্ষোভ-অবরোধ করেছেন।

চলতি বছরের জুন মাস থেকে পোশাক শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সংগ্রাম গড়ে তুলেন। প্রায় সপ্তাহকালব্যাপী আন্দোলনে তারা সুস্পষ্ট দাবি তুলেছেন– "মজুরি বাড়াও, নিত্যপণ্যের দাম কমাও"। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বেশ কিছু গার্মেন্টসে সপ্তাহকাল শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। "মানবতার মাতা" স্বয়ং শেখ হাসিনা তখন হুমকি দিয়ে বলেছিলেন এমন আন্দোলন করলে "আমও যাবে ছালাও যাবে"। শ্রমিকদের না খেয়ে মরতে হবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আন্দোলনের মাধ্যমে  ৮ হাজার টাকা মজুরি আদায় করেছিল শ্রমিকরা। এরপর থেকে চাল, ডাল সহ নিত্যপণ্যের দাম কয়েক গুণ বাড়ায় শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামেন। সরকার-মালিকের যৌথ দমন-নির্যাতন, হয়রানির কারণে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন থেমে নেই। বছরব্যাপী প্রায়ই দেশের শিল্পা লগুলোতে কোনো না কোনো এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন চলছেই।

যখন মালিকরা শ্রমিকদের ঠকানোর জন্য তাদের না জানিয়ে, বকেয়া বেতন শোধ না করে কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দেয় তখন প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের হুংকার শোনা যায় না। বরং সরকার-রাষ্ট্র ও মালিকরা যৌথভাবে শ্রমিকদের উপর দমন-নির্যাতন চালায়। তাই গার্মেন্টস শ্রমিকদের আওয়ামী সরকার, শাসকশ্রেণির শ্রমিকবিরোধী চরিত্র উপলব্ধি করতে হবে। এবং তাদের উৎখাত করে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনও চালাতে হবে। “গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন”সহ কয়েকটি গার্মেন্টস সংগঠনের জোট “গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন” গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবিকে ধারণ করে মাসিক মজুরি ২৫,০০০ টাকা দাবি করছে এবং এই দাবি আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে যাচ্ছে। শ্রমিকদের এই আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

ব্যাটারি রিক্সা শ্রমিকদের অবস্থা : সরকার ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা নাকি চলাচলের জন্য উপযোগী নয়। অথচ সরকারই এই ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার যন্ত্রাদি বিক্রি করার ব্যবস্থা করেছে। এই রিকশার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনার জন্য সরকারই আমদানিকারকদের সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, একটা রিকশা-অটোরিকশা চালানোর জন্য নানা ধরনের কার্ড-অনুমতি নিতে হয়। যা কিনা এই সরকারের গুণ্ডা-পাণ্ডারাই টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। অথচ শ্রমিকরা রিকশা-অটোরিকশা নিয়ে বের হলেই পুলিশ প্রশাসন নিজেদের খেয়াল খুশিমত জব্দ করে, টাকা আদায় করে। এগুলো যদি অবৈধই হয় তা হলে ব্যাপক হারে কেন এগুলো উৎপাদন এবং বিক্রি হচ্ছে? একটাই কারণ, সেটা হচ্ছে আওয়ামী গুণ্ডা-পাণ্ডা-পুলিশদের পকেট ভারি করে তাদেরকে হাতে রাখা। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে হাসিনা সরকারের এরকম গুণ্ডাদের প্রয়োজন। যাতে করে জনগণের উপর নানাভাবে চড়াও হবার কাজে তাদেরকে ব্যবহার করা যায়। 

ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে, প্রতিবাদ করলে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। নানা ধরনের তকমা দেওয়া ইত্যাদি কারণে রাগে-ক্ষোভে ১৪ অক্টোবর ব্যাটারিচালিত রিকশার শ্রমিকেরা সংঘবদ্ধ হয়ে মিরপুর ১২, কালশী মোড়, সাগুফতা মোড়, মিরপুর ১০, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে প্রায় একই সময়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং এক ট্রাফিক পুলিশকে শাস্তি দেয়।

  ব্যাটারিচালিত রিকশা অবৈধ বলে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ট্রাফিক পুলিশরা। পুলিশ আসার আগে স্থানীয় সরকারদলীয় পাণ্ডারা তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই নিপীড়নের প্রতিবাদে শ্রমিকরা এমন সাহসী কাণ্ড ঘটায়। শ্রমিকদের ১১ জনকে শনাক্ত করে রিমান্ডে নিয়ে অন্যায়ভাবে শাস্তি এবং অজ্ঞাতনামা একশত জনের নামে মামলা দেয় পুলিশ-প্রশাসন।

চা শ্রমিকদের আন্দোলন : চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র ১২০ টাকা। এটাও নির্ধারণ হয়েছিল কয়েক বছর আগে। নতুন নির্ধারণের সময় গড়িয়ে গেলেও মালিকরা তাতে গা লাগায় নি। ফলে গত আগস্ট ২০২২’র দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চা শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করেছেন। মালিকদের টালবাহানার পর সর্বশেষ দেখা গেল ‘জনদরদী’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭০ টাকা বেতন ধার্য করে দিলো। যেখানে চা শ্রমিকদের দাবি ছিল ৩০০ টাকা। এটা হলো শ্রমিকের মা সেজে তাদের পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করা এবং মালিকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। অনন্যোপায় হয়ে শ্রমিকরা সেটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হিসেবে এই বেতন বৃদ্ধি কোনো বৃদ্ধি নয়। তারা আগে যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকলেন। তাদের জীবন-জীবিকার কোনো উন্নতিই এতে হবে না। বড় বুর্জোয়া শাসকশ্রেণির সরকার চা শ্রমিকদের মধ্যযুগীয় দাস বানিয়ে রেখেছে। চা শ্রমিকদের দাস বানানোর কারখানা হিসেবে চা বাগান পরিচালনা হয়ে আসছে। সরকার-রাষ্ট্রের দেশে বসবাসরত সকল নাগরিকদের মৌলিক অধিকার দেবার কথা থাকলেও বাঙালি শ্রমিক-কৃষকদের ন্যূনতম যে অধিকারটুকু দেওয়া হয়, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার চা শ্রমিকদের সেটাও দেওয়া হয় না। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই চা শ্রমিকদের  যুগ যুগ ধরে দাস জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

জেলেদের দুর্গতি : প্রতি বছরের অক্টোবরের শুরুতে মা ইলিশ রক্ষা করার জন্য জেলেদের উপর ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪৮ দিনেরই (প্রথম আলো ৬ অক্টোবর, ২০২২) নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। আবার গত মৌসুমে উপকূলীয় নদ-নদীতে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরার ওপর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন (৮ মাস) পর্যন্ত জাটকা শিকার, পরিবহণ, বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। প্রতি বছর উপকূলীয়-দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লক্ষ জেলের পরিপূর্ণ ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা না করে সরকার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সরকার নামমাত্র কিছু চাল/কার্ড দিয়ে ভরণ-পোষণের জন্য কিছু ভর্তুকি দেয়; সেটিও থাকে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের জবরদখলে। সবাই এই সহায়তা পান না। ফলে যতদিন নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে ততদিন লাখ লাখ জেলে পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হন। ধার-দেনা করে, লুকিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরে জীবন ধারণ করেন। এজন্য জেলেদেরকে নির্যাতন-নিপীড়ন-শাস্তি ভোগ করতে হয়। বর্তমান গণবিরোধী রাষ্ট্র ব্যবস্থায়– এটাই স্বাভাবিক।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ : প্রতিবছরই ডেঙ্গু জ্বরে মানুষ মারা যাচ্ছেন। করোনাকালের দুই বছর সেটা তেমন একটা নজরে ছিল না। এ বছর করোনা কম থাকায় ডেঙ্গু জ্বর বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে। এ বছর ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন ২৫৪ জন। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৩৮ জন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। শ্রমিক-কৃষক-সাধারণ জনগণ সাধারণত জ্বরে আক্রান্ত হলে হাসপাতাল মুখী হন না। কেবল বেগতিক হলেই হাসপাতালে যান। সুতরাং পত্রপত্রিকার খবরে যে রোগীর সংখ্যা দেখা যাচ্ছে তা প্রকৃত চিত্র নয়। 

দুর্নীতিবাজ সরকার-প্রশাসন গলাবাজি করলেও মশা নিধনে যে ব্যর্থ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তারা যে সব পরিকল্পনা করে তা জনগণের স্বার্থে নয়। বরং জনগণের নামে প্রকল্পগুলোতে চলে হরিলুট। ফলে যে সব মশার ঔষধ আমদানি করা হয় তা দু’নম্বরি বা ভেজাল ঔষধ। মশা নিধনের ঔষধ ছিটায় নামকাওয়াস্তে। তাছাড়া শহরের খাল-নর্দমা চরমভাবে অপরিষ্কার-দুষিত। যেগুলো মশার প্রজনন ক্ষেত্র। ডেঙ্গু জ্বরের মশা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। সুতরাং মশা নিধন কার্যকরি না হলে মশা বড়লোকদের ছাদের টবে জন্মাবে– এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং কার্যকর মশা নিধনই ডেঙ্গু থেকে মানুষ রক্ষা করার উপায়। কিন্তু গণবিরোধী সরকার জনগণের স্বার্থে সেটা করতে পারছে না, পারবেও না।

নৌ-শ্রমিকদের আন্দোলন : গত ১৩ নভেম্বর সাধারণ নৌ-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা এবং মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১২ লক্ষ টাকা এবং নৌ-শ্রমিকদের উপর প্রশাসনিক নির্যাতন বন্ধসহ ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন। ১৫ দিনের মধ্যে দাবির পূরণ না হলে তারা ধর্মঘটে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন। ২০১৬ সালে ৭ হাজার টাকা মজুরি এবং মৃত্যুকালীন ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ৫ বছর পর পর নতুনভাবে মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ১৭ মাস অতিবাহিত হলেও এবং দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে শ্রমিকরা হিমশিম খেলেও মালিক-সরকার বেতন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। কিন্তু শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবি করলে মালিকরা তা না মেনে উল্টো শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করলে শ্রমিকরা আন্দোলন-বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের টনক নড়ে এবং শ্রমিকদের সাথে আপসরফার বৈঠক করে এক মাসের মধ্যে মজুরি কমিশন মজুরি নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফলে শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন। শ্রমিক-জনতার আন্দোলন ছাড়া সরকার, মালিকশ্রেণি কোনো দাবিই পূরণ করে না। 

আজকে শ্রমিক, কৃষক, জেলেসহ অন্যান্য মেহনতি নিপীড়িত জনগণের সমস্ত সমস্যাই এক সূত্রে গাঁথা, বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। হাসিনা-আওয়ামী সরকার জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ দালাল দুর্নীতিবাজ শাসকশ্রেণির স্বার্থে তার ফ্যাসিস্ট শাসন পরিচালনা করছে। তাই, শ্রমিক, কৃষক, আদিবাসী, মধ্যবিত্ত জনগণ ও ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। এবং প্রয়োজন সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের লক্ষ্যে নতুন ধরনের (নয়া) গণতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নেওয়া।

আরও খবর
 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র