বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী-সংসদ নির্বাচন রাজনৈতিক অসচেতনতায় সর্বনাশা পথে জেন-জি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী-সংসদ নির্বাচন রাজনৈতিক অসচেতনতায় সর্বনাশা পথে জেন-জি
আন্দোলন প্রতিবেদন
বৃহঃস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫ | অনলাইন সংস্করণ
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে বহু অনিয়মের কথা প্রচারিত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষপাত, হাজার হাজার অতিরিক্ত ব্যালট-পেপার মুদ্রণ, ব্যালট-পেপার ছাপার দায়িত্ব একটা নির্দিষ্ট পার্টির প্রেসে দেয়া, অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়া, কালি ছাড়াই ভোট গ্রহণ, অর্থ ও উপহার সামগ্রী বিতরণ– ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রার্থীরা ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনি দায়িত্বে নিযুক্ত শিক্ষকদের কারও কারও নির্বাচন বর্জনও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তবে এসব সত্ত্বেও বিরাট সংখ্যক অদলীয় শিক্ষার্থী যে শিবির প্যানেলকে ভোট দিয়েছেন তা অস্বীকার করা যাবে না। এর কারণ কী? শিবিরের পক্ষে এমন ফলাফল তারাও হয়তো ভাবেনি। ছাত্রদলসহ অনেকে তো স্তম্ভিত হয়ে গেছে। আমাদের বিবেচনায় এর কারণগুলো নিম্নরূপ হতে পারে–
১। তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপকভাবে বিরাজনীতিকরণ, যা তাদের বিরাট অংশকে জামাত-শিবিরের ফ্যাসিস্ট রাজনীতির চতুরতা সম্পর্কে ভয়াবহ ধরনের অসচেতনতা ও নিস্পৃহতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই বিরাজনীতিকরণ হলো শাসক বুর্জোয়া শ্রেণির তথাকথিত “তৃতীয় শক্তি”, যারা এখন ক্ষমতায় তাদের রাজনীতি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটা বড়ো অংশও এতে মদদ দিয়েছে। ২। ছাত্রলীগ/আওয়ামী সমর্থক ভোটারদেরকে শিবিরের পক্ষে যাওয়া। যা ছাত্রলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছাত্রদলের পক্ষে টানা কঠিন ছিল। শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট শিবির ততটা টানতে পারেনি ন্যায্য কারণেই। ৩। ছাত্রদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব তাদের পরাজয়ে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। ৪। উপরোক্ত বিষয়গুলোসহ বিবিধ কারণে ছাত্রদলের সাংগঠনিক দুর্বলতাও তাদের পরাজয়ে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। ৫। ভার্সিটি সংসদের নির্বাচনে শিবির-বিরোধী রাজনীতি ব্যাপকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ছাত্রদল অতি-আত্মবিশ্বাসী ছিল, তাই, জোটে যায়নি। বিপরীতে শিবির নিজেকে আড়াল করে নিরীহ জোট করেছে, এমনকি আদিবাসী ও হিন্দু প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে তাদের অসচেতনতার সুযোগে এবং নন-হিজাবিকে সামনে ঠেলে নিজেদের প্রকৃত আদর্শ ও চরিত্র গোপন করেছে। ৬। বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোও বিভক্ত ছিল। না হলে অল্প হলেও তারা সাফল্য পেতে পারতো। উপরন্তু তারা যথেষ্ট জোরালোভাবে জামাত-শিবিরের নব্য ফ্যাসিবাদকে প্রতিরোধ করায় গুরুত্ব দেয়নি। ৭। বিগত বছরগুলোতে প্রতিটি বুর্জোয়া পার্টি জামাত-শিবিরের সাথে আপস করেছে। আর এর সুযোগ নিয়ে তারা যথেষ্ট শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে বিগত হাসিনা ফ্যাসিবাদ আমলের ১৬ বছরে মাদ্রাসা-ধর্মবাদী শিক্ষাকে রাষ্ট্র যেভাবে শক্তিশালী করে তুলেছে তাতে জামাত-শিবিরের সামাজিক ভিত্তিও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এর সুযোগ তারা সর্বত্র নিচ্ছে। ৮। জামাত-শিবিরের বিপুল আর্থিক সামর্থ্য এবং প্রশাসনে তাদের বিপুল অনুপ্রবেশ তাদেরকে বিরাট সুবিধা দিয়েছে।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর মাঝে ১নং পয়েন্টে উল্লেখিত কারণটিই ফলাফলে নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছে।
এখন আলোচনা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনেও এমন ফলাফল হবে কিনা। উপরোক্ত কারণগুলোর কিছু দিক জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে। বিশেষত, আওয়ামী ভোট টানা ও বিএনপি’র অন্তর্দ্বন্দ্ব। তবে তা সত্ত্বেও, আরো অনেকগুলো ফ্যাক্টরের কারণে ঠিক একইরূপ ফল জাতীয় নির্বাচনে ঘটবে না বলেই ধারণা করা যায়। শেষ পর্যন্ত জোট-গঠনের খেলা কোনদিকে এগোয় এর উপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। তবে যা-ই ঘটুক না কেন, ধর্মবাদী রাজনীতি, বিশেষত জামাতি ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে জেন-জি যে অসচেতনতার পরিচয় দিয়েছে ছাত্র-সংসদ নির্বাচনগুলোতে, সে সম্পর্কে সতর্ক না হলে আগামী জটিল ও কঠিন ভবিষ্যৎ জাতি-জনগণকে ভোগ করতে হবে। বিশেষভাবে বামপন্তি রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক শক্তির এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী-সংসদ নির্বাচন রাজনৈতিক অসচেতনতায় সর্বনাশা পথে জেন-জি
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে বহু অনিয়মের কথা প্রচারিত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষপাত, হাজার হাজার অতিরিক্ত ব্যালট-পেপার মুদ্রণ, ব্যালট-পেপার ছাপার দায়িত্ব একটা নির্দিষ্ট পার্টির প্রেসে দেয়া, অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়া, কালি ছাড়াই ভোট গ্রহণ, অর্থ ও উপহার সামগ্রী বিতরণ– ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রার্থীরা ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনি দায়িত্বে নিযুক্ত শিক্ষকদের কারও কারও নির্বাচন বর্জনও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তবে এসব সত্ত্বেও বিরাট সংখ্যক অদলীয় শিক্ষার্থী যে শিবির প্যানেলকে ভোট দিয়েছেন তা অস্বীকার করা যাবে না। এর কারণ কী? শিবিরের পক্ষে এমন ফলাফল তারাও হয়তো ভাবেনি। ছাত্রদলসহ অনেকে তো স্তম্ভিত হয়ে গেছে। আমাদের বিবেচনায় এর কারণগুলো নিম্নরূপ হতে পারে–
১। তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপকভাবে বিরাজনীতিকরণ, যা তাদের বিরাট অংশকে জামাত-শিবিরের ফ্যাসিস্ট রাজনীতির চতুরতা সম্পর্কে ভয়াবহ ধরনের অসচেতনতা ও নিস্পৃহতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই বিরাজনীতিকরণ হলো শাসক বুর্জোয়া শ্রেণির তথাকথিত “তৃতীয় শক্তি”, যারা এখন ক্ষমতায় তাদের রাজনীতি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটা বড়ো অংশও এতে মদদ দিয়েছে। ২। ছাত্রলীগ/আওয়ামী সমর্থক ভোটারদেরকে শিবিরের পক্ষে যাওয়া। যা ছাত্রলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছাত্রদলের পক্ষে টানা কঠিন ছিল। শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট শিবির ততটা টানতে পারেনি ন্যায্য কারণেই। ৩। ছাত্রদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব তাদের পরাজয়ে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। ৪। উপরোক্ত বিষয়গুলোসহ বিবিধ কারণে ছাত্রদলের সাংগঠনিক দুর্বলতাও তাদের পরাজয়ে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। ৫। ভার্সিটি সংসদের নির্বাচনে শিবির-বিরোধী রাজনীতি ব্যাপকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ছাত্রদল অতি-আত্মবিশ্বাসী ছিল, তাই, জোটে যায়নি। বিপরীতে শিবির নিজেকে আড়াল করে নিরীহ জোট করেছে, এমনকি আদিবাসী ও হিন্দু প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে তাদের অসচেতনতার সুযোগে এবং নন-হিজাবিকে সামনে ঠেলে নিজেদের প্রকৃত আদর্শ ও চরিত্র গোপন করেছে। ৬। বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোও বিভক্ত ছিল। না হলে অল্প হলেও তারা সাফল্য পেতে পারতো। উপরন্তু তারা যথেষ্ট জোরালোভাবে জামাত-শিবিরের নব্য ফ্যাসিবাদকে প্রতিরোধ করায় গুরুত্ব দেয়নি। ৭। বিগত বছরগুলোতে প্রতিটি বুর্জোয়া পার্টি জামাত-শিবিরের সাথে আপস করেছে। আর এর সুযোগ নিয়ে তারা যথেষ্ট শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে বিগত হাসিনা ফ্যাসিবাদ আমলের ১৬ বছরে মাদ্রাসা-ধর্মবাদী শিক্ষাকে রাষ্ট্র যেভাবে শক্তিশালী করে তুলেছে তাতে জামাত-শিবিরের সামাজিক ভিত্তিও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এর সুযোগ তারা সর্বত্র নিচ্ছে। ৮। জামাত-শিবিরের বিপুল আর্থিক সামর্থ্য এবং প্রশাসনে তাদের বিপুল অনুপ্রবেশ তাদেরকে বিরাট সুবিধা দিয়েছে।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর মাঝে ১নং পয়েন্টে উল্লেখিত কারণটিই ফলাফলে নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছে।
এখন আলোচনা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনেও এমন ফলাফল হবে কিনা। উপরোক্ত কারণগুলোর কিছু দিক জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে। বিশেষত, আওয়ামী ভোট টানা ও বিএনপি’র অন্তর্দ্বন্দ্ব। তবে তা সত্ত্বেও, আরো অনেকগুলো ফ্যাক্টরের কারণে ঠিক একইরূপ ফল জাতীয় নির্বাচনে ঘটবে না বলেই ধারণা করা যায়। শেষ পর্যন্ত জোট-গঠনের খেলা কোনদিকে এগোয় এর উপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। তবে যা-ই ঘটুক না কেন, ধর্মবাদী রাজনীতি, বিশেষত জামাতি ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে জেন-জি যে অসচেতনতার পরিচয় দিয়েছে ছাত্র-সংসদ নির্বাচনগুলোতে, সে সম্পর্কে সতর্ক না হলে আগামী জটিল ও কঠিন ভবিষ্যৎ জাতি-জনগণকে ভোগ করতে হবে। বিশেষভাবে বামপন্তি রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক শক্তির এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র