পাহাড়ে জাতিগত দমন-নির্যাতন চলছেই আসল সমস্যা কোথায় এবং সমাধানের পথ কী
পাহাড়ে জাতিগত দমন-নির্যাতন চলছেই আসল সমস্যা কোথায় এবং সমাধানের পথ কী
আন্দোলন প্রতিবেদন
বৃহঃস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫ | অনলাইন সংস্করণ
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, খাগড়াছড়িতে একজন মারমা কিশোরী সেটেলার/পুনর্বাসিত ৩ জন বাঙালি যুবক দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে (নির্যাতিত কিশোরী নিজে তা উল্লেখ করলেও প্রথম থেকেই রাষ্ট্র ও উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের সেবক বুদ্ধিজীবী/মিডিয়ার অধিকাংশ একে মিথ্যা বলে অভিহিত করেন এবং পরে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের অভিযোগ সত্য নয় বলে রাষ্ট্রযন্ত্র ও তার স্তাবকরা প্রচার করে)। এই পৈশাচিক ঘটনার পর খাগড়াছড়িতে সাধারণ ছাত্র-জনতা পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-সমাবেশ হলেও খাগড়াছড়ি জেলার সাথে অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আন্দোলনের নেতাদের রাষ্ট্র-বাহিনী অপহরণের চেষ্টা করে, কিন্তু জনতার চাপে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
কিন্তু ২৭ তারিখ গুইমারায় পাহাড়িদের দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয় রাষ্ট্রযন্ত্র-সমর্থিত সেটেলারদের একটি অংশ। এর বিরুদ্ধে পাহাড়ি ছাত্র-জনতার সংগ্রাম তীব্র হলে সেনাবাহিনী ১৪৪ ধারা জারি করে এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর গুলিতে ৩ জন পাহাড়ি যুবক নিহত হন। এই সহিংসতায় ব্যাপকভাবে সেটেলাররা যোগ দেননি। নির্দিষ্ট একটি অংশ রাষ্ট্র-বাহিনীর মদদে এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, যা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়। বরং উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল/পার্টি, সংগঠন, প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মবাদী শক্তিসমূহ, রাষ্ট্রযন্ত্র-পালিত সন্ত্রাসীরা এই ধরনের হামলায় অংশ নেয় এবং বাঙালি জনগণকে সার্বভৌমত্বের জুজু দেখিয়ে খেপিয়ে তোলে। এতে বড় ভূমিকা রাখে ধর্মবাদী প্রতিক্রিয়াশীলদের ফেসবুক পেজ, আইডি এবং বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া। ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে সমতলসহ বিভিন্ন এলাকায় জনগণের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পুলিশ-বিজিবি-সেনবাহিনীর উপর পাহাড়িদের হামলা এবং ভারতের মদদে ষড়যন্ত্রকারী কর্ম হিসেবে দেখানো হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়াই বলেছে- “এ ঘটনার পেছনে ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধন রয়েছে”। যেমনটা হাসিনা সরকার যে কোনো অঘটন ঘটলে বিএনপি-জামাতের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দায় সারতো। অন্তর্বর্তী সরকারও তাই করছে।
বাস্তবে সমস্যা কোথায়? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই পাহাড়ের জাতিসত্তার বিকাশের পথ রুদ্ধ করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে পাহাড়ে সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলে পিসিজেএসএস। বাঙালি শাসকশ্রেণি কর্তৃক পাহাড়ি জাতিসত্তার উপর জাতিগত নিপীড়নের ফলেই তারা সশস্ত্র সংগ্রামের পথে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয়তাবাদী এই সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত আপসের পথে ১৯৯৭ সালে হাসিনা সরকারের সাথে “শান্তিচুক্তি”র মাধ্যমে শেষ হয়। কিন্তু বিগত ২৯ বছরেও পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি, পাহাড়িদের কোনো মৌলিক দাবিই পূরণ করা হয়নি। বাঙালি উগ্র জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র “বিভক্ত কর, শাসন কর”– এই নীতিতে পাহাড়িদের উপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েই যাচ্ছে।
পাহাড়ে আদিবাসী বিতর্কের কুযুক্তির কোনো সুযোগ নেই। কিছু কুতার্কিকরা ভ্রান্ত যুক্তি আনছেন যে, বাঙালিরা পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের অনেক আগে থেকেই পাহাড়ে বসবাস করছেন। এটা সম্পূর্ণ ভুয়া তথ্য। বাঙালিরা নৃতাত্ত্বিকভাবে পাহাড়ি জাতি নয়। বরং ঐতিহাসিকভাবেই তারা সমভূমির নদীবিধৌত অঞ্চলের জাতিসত্তা। অন্যদিকে পাহাড়িরা সব সময়েই ছিল পাহাড়িয়া জাতি, যাদের জীবন-সংস্কৃতি সমস্তটাই পাহাড়কে কেন্দ্র করে।
অন্যদিকে ১২১৬ সালের আগ পর্যন্ত এমনকি “অখণ্ড বাংলা” বলেও কিছু ছিল না। তথাকথিত বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা নিশ্চয় সুলতান গিয়াসউদ্দীন ইলিয়াস শাহকে অস্বীকার করবেন না। তিনিই প্রথম বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। সুতরাং তার আগে বাংলা বলে কোনো একক অঞ্চল ছিল না। আর এই সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম এমনকি চট্টগ্রামের সাথেও ছিল না। একারণে বাঙালি কুতার্কিকদের এই যুক্তি একদমই ভ্রান্ত আর উগ্র জাতীয়তাবাদী।
এটা সত্য যে পাহাড়ের জনগণের লড়াই-সংগ্রামকে নিয়ে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের ষড়যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু তার অজুহাত দিয়ে পাহাড়ে জাতিগত নিপীড়নকে বৈধতা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ’৭১-সালের মুক্তিযুদ্ধকালেও ভারত এদেশের জনগণের জাতিগত সংগ্রামকে ব্যবহার করে তার সম্প্রসারণবাদী ষড়যন্ত্র করেছিল। তাই বলেকি ’৭১-সালে জনগণের দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা অন্যায্য হয়ে যাবে?
ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ পাহাড়ের জনগণকে নিয়ে কেন ষড়যন্ত্র করতে পারছে? শাসকশ্রেণি পাহাড়ি জাতিসত্তার জনগণকে হত্যা-দমন-নির্যাতন করছে। পাহাড়ি নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। আর এ সবই ঘটছে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রযন্ত্রের সেবক রাষ্ট্রবাহিনীগুলোর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে। পাহাড় ও সমতলে হত্যা-ধর্ষণ, গ্রেপ্তারের পর মৃত্যু, বিনাবিচারে আটক, মারধর, হেনস্তা ও জোর করে ধর্মান্তরিত করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে অহরহ। এসবের কোনো বিচার হয়নি, হচ্ছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে হত্যা-ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর সাথে জাতিগত নিপীড়নের সম্পর্ক রয়েছে। ভারত তার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। সব সমস্যার গোড়া হচ্ছে ভূমি সমস্যা ও তার উৎস হিসেবে ক্রিয়াশীল পাহাড়ের ক্ষদ্র জাতিসত্তাগুলোর উপর জাতিগত নিপীড়ন। পাহাড়ি জাতিসত্তার প্রথাগত ভূমি মালিকানা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পাহাড়ের জনগণের সমস্যার সমাধান করতে হলে ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে। এবং সেখানে জাতিগত নিপীড়নের সম্পূর্ণ অবসান ঘটাতে হবে। ভূমি সমস্যার সমাধানে সাথে পাহাড়ের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের স্বীকৃতির মধ্য দিয়েই জাতিগত নিপীড়ন বন্ধ হবে। যার আশু প্রকাশ হলো, তাদের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্বীকৃতি, পাহাড়ে জোর-পূর্বক গরিব বাঙালি জনগণের পুনর্বাসন বন্ধ করা, পাহাড়ে অঘোষিত সামরিক শাসনের অবসান ঘটানো, পাহাড়ি কৃষকের স্বার্থে ভূমি-সমস্যার সমাধান করা তথা পার্বত্য অঞ্চলের পরিপূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী শাসকশ্রেণি-রাষ্ট্র সে পথে কোনো দিনই হাঁটেনি, হাঁটবে না। তাই, বিদ্যমান ব্যবস্থাধীনে এ সমস্যার প্রকৃত কোনোই সমাধান হবে না। গত বছরের অভ্যুত্থান-পরবতর্ী নব্য শাসকরা ও তাদের সাথে ক্ষমতার ভাগ-পাওয়া প্রতারকরা সংস্কারের যত বড় বড় বুলিই ছাড়–ক না কেন, পার্বত্য অঞ্চলে নিপীড়িত জাতিসত্তাগুলোর কোনো সংস্কার তারা করেনি। পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসী জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে প্রয়োজন শ্রমিকশ্রেণি নেতৃত্বে বিপ্লবী কর্মসূচির ভিত্তিতে সংগঠন ও সংগ্রাম গড়ে তোলা। – ০৭/১০/২০২৫
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পাহাড়ে জাতিগত দমন-নির্যাতন চলছেই আসল সমস্যা কোথায় এবং সমাধানের পথ কী
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, খাগড়াছড়িতে একজন মারমা কিশোরী সেটেলার/পুনর্বাসিত ৩ জন বাঙালি যুবক দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে (নির্যাতিত কিশোরী নিজে তা উল্লেখ করলেও প্রথম থেকেই রাষ্ট্র ও উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের সেবক বুদ্ধিজীবী/মিডিয়ার অধিকাংশ একে মিথ্যা বলে অভিহিত করেন এবং পরে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের অভিযোগ সত্য নয় বলে রাষ্ট্রযন্ত্র ও তার স্তাবকরা প্রচার করে)। এই পৈশাচিক ঘটনার পর খাগড়াছড়িতে সাধারণ ছাত্র-জনতা পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-সমাবেশ হলেও খাগড়াছড়ি জেলার সাথে অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আন্দোলনের নেতাদের রাষ্ট্র-বাহিনী অপহরণের চেষ্টা করে, কিন্তু জনতার চাপে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
কিন্তু ২৭ তারিখ গুইমারায় পাহাড়িদের দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয় রাষ্ট্রযন্ত্র-সমর্থিত সেটেলারদের একটি অংশ। এর বিরুদ্ধে পাহাড়ি ছাত্র-জনতার সংগ্রাম তীব্র হলে সেনাবাহিনী ১৪৪ ধারা জারি করে এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর গুলিতে ৩ জন পাহাড়ি যুবক নিহত হন। এই সহিংসতায় ব্যাপকভাবে সেটেলাররা যোগ দেননি। নির্দিষ্ট একটি অংশ রাষ্ট্র-বাহিনীর মদদে এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, যা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়। বরং উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল/পার্টি, সংগঠন, প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মবাদী শক্তিসমূহ, রাষ্ট্রযন্ত্র-পালিত সন্ত্রাসীরা এই ধরনের হামলায় অংশ নেয় এবং বাঙালি জনগণকে সার্বভৌমত্বের জুজু দেখিয়ে খেপিয়ে তোলে। এতে বড় ভূমিকা রাখে ধর্মবাদী প্রতিক্রিয়াশীলদের ফেসবুক পেজ, আইডি এবং বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া। ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে সমতলসহ বিভিন্ন এলাকায় জনগণের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পুলিশ-বিজিবি-সেনবাহিনীর উপর পাহাড়িদের হামলা এবং ভারতের মদদে ষড়যন্ত্রকারী কর্ম হিসেবে দেখানো হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়াই বলেছে- “এ ঘটনার পেছনে ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধন রয়েছে”। যেমনটা হাসিনা সরকার যে কোনো অঘটন ঘটলে বিএনপি-জামাতের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দায় সারতো। অন্তর্বর্তী সরকারও তাই করছে।
বাস্তবে সমস্যা কোথায়? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই পাহাড়ের জাতিসত্তার বিকাশের পথ রুদ্ধ করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে পাহাড়ে সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলে পিসিজেএসএস। বাঙালি শাসকশ্রেণি কর্তৃক পাহাড়ি জাতিসত্তার উপর জাতিগত নিপীড়নের ফলেই তারা সশস্ত্র সংগ্রামের পথে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয়তাবাদী এই সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত আপসের পথে ১৯৯৭ সালে হাসিনা সরকারের সাথে “শান্তিচুক্তি”র মাধ্যমে শেষ হয়। কিন্তু বিগত ২৯ বছরেও পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি, পাহাড়িদের কোনো মৌলিক দাবিই পূরণ করা হয়নি। বাঙালি উগ্র জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র “বিভক্ত কর, শাসন কর”– এই নীতিতে পাহাড়িদের উপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েই যাচ্ছে।
পাহাড়ে আদিবাসী বিতর্কের কুযুক্তির কোনো সুযোগ নেই। কিছু কুতার্কিকরা ভ্রান্ত যুক্তি আনছেন যে, বাঙালিরা পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের অনেক আগে থেকেই পাহাড়ে বসবাস করছেন। এটা সম্পূর্ণ ভুয়া তথ্য। বাঙালিরা নৃতাত্ত্বিকভাবে পাহাড়ি জাতি নয়। বরং ঐতিহাসিকভাবেই তারা সমভূমির নদীবিধৌত অঞ্চলের জাতিসত্তা। অন্যদিকে পাহাড়িরা সব সময়েই ছিল পাহাড়িয়া জাতি, যাদের জীবন-সংস্কৃতি সমস্তটাই পাহাড়কে কেন্দ্র করে।
অন্যদিকে ১২১৬ সালের আগ পর্যন্ত এমনকি “অখণ্ড বাংলা” বলেও কিছু ছিল না। তথাকথিত বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা নিশ্চয় সুলতান গিয়াসউদ্দীন ইলিয়াস শাহকে অস্বীকার করবেন না। তিনিই প্রথম বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। সুতরাং তার আগে বাংলা বলে কোনো একক অঞ্চল ছিল না। আর এই সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম এমনকি চট্টগ্রামের সাথেও ছিল না। একারণে বাঙালি কুতার্কিকদের এই যুক্তি একদমই ভ্রান্ত আর উগ্র জাতীয়তাবাদী।
এটা সত্য যে পাহাড়ের জনগণের লড়াই-সংগ্রামকে নিয়ে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের ষড়যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু তার অজুহাত দিয়ে পাহাড়ে জাতিগত নিপীড়নকে বৈধতা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ’৭১-সালের মুক্তিযুদ্ধকালেও ভারত এদেশের জনগণের জাতিগত সংগ্রামকে ব্যবহার করে তার সম্প্রসারণবাদী ষড়যন্ত্র করেছিল। তাই বলেকি ’৭১-সালে জনগণের দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা অন্যায্য হয়ে যাবে?
ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ পাহাড়ের জনগণকে নিয়ে কেন ষড়যন্ত্র করতে পারছে? শাসকশ্রেণি পাহাড়ি জাতিসত্তার জনগণকে হত্যা-দমন-নির্যাতন করছে। পাহাড়ি নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। আর এ সবই ঘটছে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রযন্ত্রের সেবক রাষ্ট্রবাহিনীগুলোর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে। পাহাড় ও সমতলে হত্যা-ধর্ষণ, গ্রেপ্তারের পর মৃত্যু, বিনাবিচারে আটক, মারধর, হেনস্তা ও জোর করে ধর্মান্তরিত করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে অহরহ। এসবের কোনো বিচার হয়নি, হচ্ছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে হত্যা-ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর সাথে জাতিগত নিপীড়নের সম্পর্ক রয়েছে। ভারত তার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। সব সমস্যার গোড়া হচ্ছে ভূমি সমস্যা ও তার উৎস হিসেবে ক্রিয়াশীল পাহাড়ের ক্ষদ্র জাতিসত্তাগুলোর উপর জাতিগত নিপীড়ন। পাহাড়ি জাতিসত্তার প্রথাগত ভূমি মালিকানা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পাহাড়ের জনগণের সমস্যার সমাধান করতে হলে ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে। এবং সেখানে জাতিগত নিপীড়নের সম্পূর্ণ অবসান ঘটাতে হবে। ভূমি সমস্যার সমাধানে সাথে পাহাড়ের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের স্বীকৃতির মধ্য দিয়েই জাতিগত নিপীড়ন বন্ধ হবে। যার আশু প্রকাশ হলো, তাদের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্বীকৃতি, পাহাড়ে জোর-পূর্বক গরিব বাঙালি জনগণের পুনর্বাসন বন্ধ করা, পাহাড়ে অঘোষিত সামরিক শাসনের অবসান ঘটানো, পাহাড়ি কৃষকের স্বার্থে ভূমি-সমস্যার সমাধান করা তথা পার্বত্য অঞ্চলের পরিপূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী শাসকশ্রেণি-রাষ্ট্র সে পথে কোনো দিনই হাঁটেনি, হাঁটবে না। তাই, বিদ্যমান ব্যবস্থাধীনে এ সমস্যার প্রকৃত কোনোই সমাধান হবে না। গত বছরের অভ্যুত্থান-পরবতর্ী নব্য শাসকরা ও তাদের সাথে ক্ষমতার ভাগ-পাওয়া প্রতারকরা সংস্কারের যত বড় বড় বুলিই ছাড়–ক না কেন, পার্বত্য অঞ্চলে নিপীড়িত জাতিসত্তাগুলোর কোনো সংস্কার তারা করেনি। পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসী জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে প্রয়োজন শ্রমিকশ্রেণি নেতৃত্বে বিপ্লবী কর্মসূচির ভিত্তিতে সংগঠন ও সংগ্রাম গড়ে তোলা। – ০৭/১০/২০২৫
আরও খবর
- শনি
- রোব
- সোম
- মঙ্গল
- বুধ
- বৃহ
- শুক্র